চলে গেলেন শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসহাক আল মাদানী

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

তাহফিজুল কুরআন বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসহাক আল মাদানী চলে গেছেন মহান মাবুদের দরবারে। ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রা-জিউ’ন। সোমবার (২০ জানুয়ারি ২০২৫) সকাল ৮টায় সিলেট মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। রোববার শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। স্ত্রী, ২ছেলে ও ৪মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

শায়খ ইসহাক আল মাদানী সম্প্রতি লন্ডন সফর করে গেছেন। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি গ্রেট ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী সমাবেশে অংশ গ্রহন করেন। কয়েকটি অনুষ্ঠানে এক সাথে ছিলাম। গত মাসে তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছি। ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রথম পর্ব মানব টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। ২য় পর্ব আজ প্রকাশিত হবে। এরই মাঝে তিনি চির বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

ভিডিও লি:ক : https://youtu.be/CHodUFwo4D4?si=oA3WOg9tTBTZb8ju

মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্য অনুষদে ১৯৮৩ সালে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত বিরল সম্মানের অধিকারী আল্লামা ইসহাক আল মাদানী বাংলাদেশের ১ম ব্যাচের স্কলারশিপ প্রাপ্ত (১৯৭৮) কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগ থেকে এমএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন এওয়ার্ড প্রাপ্ত প্রখর মেধাবী আল্লামা ইসহাক ঢাবির কলা অনুষদে সর্বোচ্চ মার্ক পেয়ে বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।

সৌদি দারুল ইফতার সাবেক মাবউছ আল্লামা ইসহাক আল মাদানী সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামী স্কলার হিসেবে প্রায় ৩৭ বছর (১৯৮৩-২০২০) বাংলাদেশ প্রতিনিধির দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। এছাড়া তিনি শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার (পাঠানটুলা, সিলেট) প্রতিষ্ঠাকালীন শায়খুল হাদীস হিসেবে দীর্ঘদিন জ্ঞানের আলো বিতরণ করেছেন। তৈরী করেছেন অসংখ্য আলেম- যারা দেশে বিদেশে ইসলামের দ্যুতি ছড়াচ্ছেন।

দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রীপ্রাপ্ত মাওলানা মুফতি মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী কর্তৃক ২০০৯ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত ‘বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের ছাত্রজীবন’ শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি স্বীকৃতি লাভ করেছেন। যে তালিকায় রয়েছেন ইমাম আবু হানীফা (রঃ), আল্লামা ইমাম গাযালী (রঃ), সাইয়েদ আহমদ কবির রেফায়ী (রঃ), হযরত শেখ সাদী (রঃ), আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতী (রঃ), শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দীছে দেহলভী (রঃ), শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রঃ), আল্লামা ইকবাল (রঃ)-সহ যুগশ্রেষ্ট ইসলামী স্কলার ও গবেষকবৃন্দ।

আল্লামা ইসহাক আল মাদানী হাফিজাহুল্লাহর আমন্ত্রণে ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে কাবা শরীফের প্রধান ইমাম ও খতীব শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন সুবায়ল সিলেট সফর করেন। তিন দিনের এই সফরে কাবার ইমামের বক্তব্য সমূহ আরবী থেকে বাংলায় অনুবাদ করে গণমানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। সিলেটের শাহী ঈদগাহে হাজারো ওলামা-সহ লাখো জনতার সমাবেশে ইসহাক আল মাদানীর ভাষান্তর ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

২০ জুলাই ২০২৪ তারিখে লন্ডন মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় কিউ-ইমান আয়োজিত সহীহ বুখারীর দারস সমাপনী ও দু‘আ অনুষ্ঠান। এতে বিভিন্ন দেশের বরেণ্য উলামা ও স্কলার এবং বুখারী স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ৯ জন সফল শিক্ষার্থীকে দাওরাহ-হাদিস স্নাতক সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। কিউ-ইমান শিক্ষা প্রকল্পের প্রাণপুরুষ মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারী স্কলার, দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এন্ড আয়ারের সাবেক আমীর মাওলানা মওদুদ হাসানের তত্ত্বাবধানে কিউ-ইমানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট ফারহান মাহমুদের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সহীহ বুখারীর সমাপনী হাদীস পাঠদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার, ক্যামব্রিজ ইসলামিক কলেজের ডিন, আল-সালাম ইন্সটিটিউটের প্রিন্সিপাল ও মার্কফিল্ড ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশনের অনারারি ভিজিটিং ফেলো ও বহু গ্রন্থপ্রণেতা প্রফেসর মুহাম্মাদ আকরাম নাদভি। আর বিশেষ অতিথি ছিলেন মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত, এশিয়ার বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃত শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসহাক আল মাদানী।

শায়খ ইসহাক এই শতকের অনন্য স্কলার হিসেবে তাঁর ইলমী আলোচনার সাবজেক্টিভিটি ও বুদ্ধিদীপ্ত কথামালা প্রাণসঞ্চারক। ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমৃদ্ধির মূলমন্ত্র সম্পর্কে তাঁর গভীর পান্ডিত্যপূর্ণ বক্তব্য বিস্ময়কর। মাহফিলের দর্শক-শ্রোতারা প্রবলভাবে আলোড়িত হন। শান্তিপূর্ণ বর্ণনা ও বিশ্লেষণ শুনে মহান আল্লাহর সাথে বান্দাদের মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়।

শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসহাক আল মাদানী কোরআন-হাদিসের দলিল দিয়ে বিজ্ঞান ভিত্তিক বিশ্লেষণ করেন, যা শুনে উপস্থিত সকলে অনায়াসে ঘনিষ্ঠ বোধ করেন, তারা তা গ্রহন করেন এবং নিজ জীবনে প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরেন।

হঠাৎ চলে চলে গেলেন শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসহাক আল মাদানী। মরহুমের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন এবং পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহু্ তায়ালার নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের প্রিয় দাঈ-ইলাল্লাহকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

• সাঈদ চৌধুরী দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *