চলে গেলেন দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ প্রফেসর খুরশিদ আহমদ

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ ও একজন ইসলামী পণ্ডিত প্রফেসর খুরশিদ আহমদ ইন্তিকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। গতকাল রোববার যুক্তরাজ্যের লেস্টারে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তিকাল করেন।

খুরশীদ আহমদ ১৯৩৩ সালের ২৩ শে মার্চ ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দিল্লির অ্যাংলো-আরবি কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পরিবারটি পাকিস্তানে চলে যায় এবং পাঞ্জাবের লাহোরে বসতি স্থাপন করে, তারপরে ১৯৪৯ সালে তিনি ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৯ সালে মুসলিম অর্থনীতিবিদদের মধ্যে তার প্রথম ইংরেজি নিবন্ধ প্রকাশিত।

খুরশীদ আহমদ যিনি শিক্ষাবিদ হিসেবে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক আইনশাস্ত্র বিকশিত করতে সহায়তা করেন এবং যুক্তরাজ্যের লেসিস্টারে দ্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

তিনি জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের নায়েবে আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি সফলভাবে মুত্তাহিদা মজলিস-এ-অমল (এমএমএ) সিনেটের হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ২০১২ অবধি সিনেটে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৮০-এর দশকে দেশটির জাতীয় অর্থনীতিতে ইসলামীকরণের ভূমিকার দিকে মনোনিবেশ করে পরিকল্পনা কমিশনের সভাপতিত্ব করার সময় তিনি জিয়া প্রশাসনের নীতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে ২০১১ সালের ২৩ শে মার্চ পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার, নিশান-ই-ইমতিয়াজ ভূষিত করা হয়।

প্রফেসর খুরশিদ আহমাদের ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান এক শোকবাণীতে বলেছেন, “প্রফেসর খুরিশদ আহমাদ সারা জীবন ইসলামী আন্দোলন এবং রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে ভূমিকা পালনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গিয়েছেন। একজন ইসলামিক স্কলার হিসেবে ইসলামী অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখার পাশাপাশি ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে তিনি বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। ইসলামী আন্দোলনের একজন নেতা হিসেবে তিনি দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার সাথে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানকে পরিচালনা করেছেন। তিনি একজন সিনেটর হিসেবে ২০০২ থেকে ২০১২ পর্যন্ত তার জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী মূল্যবোধ ও নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করায় জনাব খুরশিদ আহমাদ কিং ফায়সাল ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার লাভ করেন। তার অনেকগুলো অবদানের মধ্যে তিনি যুক্তরাজ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায় খুররম জাহ মুরাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা, ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। তিনি ১৯৭৯ সালে ইসলামাবাদে ইন্সটিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ নামক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং দীর্ঘ দিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বলেন, ইসলামী মূলনীতির ভিত্তিতে শিক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার অবদান আলোকিত হয়ে থাকবে। তিনি শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তিই ছিলেন না, তার ব্যক্তিগত গুণাবলি অপরকে উজ্জীবিত করেছে। তিনি অনাড়ম্বর জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য কাজ করে গিয়েছেন। তার লেখনি এবং বক্তব্যসমূহ মুসলিম বিশ্বের প্রজন্মকে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে জীবন গঠনে অনুপ্রাণিত করবে। পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও তার জন্মভূমির বাইরে সমগ্র বিশ্বের ইসলামী আন্দোলন তার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে।

তার ইন্তিকালে আমরা গভীরভাবে তার শূন্যতা অনুভব করি। তার চিন্তা এবং বাস্তব জীবনের কর্মকা- ইসলামী জাগরণে অনন্য ভূমিকা পালন করবে।

আমি আমার নিজের এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তার ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি। পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের ভাই-বোনদের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জীবনের সকল নেক আমল কবুল করে তাঁকে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। তাঁর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁর অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী ও গুণগ্রাহীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফীক দান করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *