২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরি করে বেড়াচ্ছেন; তাদেরকে বলব, আপনারা কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে, ক্ষমতার স্বার্থে দিল্লির কাছে দেশ বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেদিন বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। যে কারণেই চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বলেছে, এটাই আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
বিডিও: https://youtu.be/ccsw1mbydsI?si=cW7XPwfR_uNEjkeO
একাত্তরের মীমাংসিত বিষয় সামনে এনে জামায়াতকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর পরে এসে যারা বক্তৃতা শেষে বলেন একাত্তরকে ভুলে যাবেন না। তারা যখন দেশ শাসন করেছেন, ১২ থেকে ১৩ জন স্বাধীনতা বিরোধীকে প্রেসিডেন্ট বানানো হয়েছে, মন্ত্রী এমপি বানানো হয়েছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী আদর্শিক কারণেই দেশ ও স্বাধীনতাকে ভালোবাসে। জামায়াতে ইসলামীর অপ্রতিরোধ্য ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা, জনপ্রিয়তা, গণজাগরণ প্রতিরোধ করতে সব সময় একটা শক্তি, একটা মহল, স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধকে জামায়াতে ইসলামীর বিপক্ষে দাঁড় করানোর একটা অপপ্রয়াস ও অপচেষ্টা করে থাকে। আওয়ামী লীগ এ কাজে সিদ্ধহস্ত। তারা তো বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়াও ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে আমরা যারা রাজপথে ছিলাম, দূর্ভাগ্যজনকভাবে সেইসব সংগ্রামী নেতাদের মধ্য থেকেও কিছু লোকের জামায়াত বিরোধিতার কথাগুলো, ভাষাগুলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভাষার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, কিন্তু তারা ভুলে যান- জামায়াতে ইসলামী যখন স্বৈরাচার বিরোধী, ফ্যাসিবাদ বিরোধী, ভোটাধিকারের আন্দোলনে তাদের সঙ্গে থাকে, তখন বলে আমাদের সঙ্গী। তদের সঙ্গে না থাকলে বলে এরা জঙ্গি।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধকে জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই ধারণ করে। আমাদের সংবিধানের ভূমিকাতে ঘোষণা দিয়ে আমরা বলেছি- বাংলাদেশের জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছে। আমরা সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমাদের গঠনতন্ত্রের ভূমিকায় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য গর্ববোধ করেছি, তার ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রদান করেছি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামের সদস্য হতে গেলে আমাদের গঠনতন্ত্রের ধারা ৯-এ পরিষ্কার করে বলা আছে, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য একজন সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তূত থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কিছু কথা উত্থাপন করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আজো কয়েকটি প্রশ্নের নিষ্পত্তি হয়নি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা দেশের মানুষের ওপর হামলে পড়ল, গুলি চালাল। ২৬ মার্চ সকালে শেখ মুজিব কি গ্রেপ্তার হলো, নাকি আত্মসমর্পণ করল তা নিয়ে ইতিহাসের বিতর্ক এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা আপনি (শেখ মুজিব) দিয়ে দিয়েছেন। ৭ মার্চের পর কেন পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। জাতির কাছে সেই ইতিহাস এখনও অপ্রকাশিত।
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, আপনি যদি দেশের স্বাধীনতাই চাইবেন, তাহলে আবার মিটিংয়ে বসলেন কেন। জাতি বুঝতে পেরেছে, আলোচনা সমঝোতা করে আপনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। স্বাধীনতাই যদি চাইতেন, তাহলে পাকিস্তানি প্রেতাত্মা হায়েনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন না। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো নেতা তার প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে ধরা দেয়নি। লাখ লাখ মানুষকে গুলির মুখে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়নি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ব্যাখ্যা করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে এবং গণহত্যার বিচার করে অন্তবর্তীকালীন সরকার যখন নির্বাচন দিবে জামায়াতে ইসলামী তখনই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী শুধু নিয়ম রক্ষার একটি নির্বাচন চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মো: দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন এবং অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী মো. শামছুর রহমান, কর্মপরিষদের সদস্য যথাক্রমে মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, কামরুল আহসান হাসান, শাহীন আহমেদ খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন সহ মহানগরীর নেতৃবৃন্দ।