কালিজিরার পুষ্টিগুণ ও ব্যবহার

স্বাস্থ্য
শেয়ার করুন

শরীরের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কালিজিরার মতো এত কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান সম্পন্ন আর কোনো ফসল নেই। পুষ্টিমাণ ও ঔষধি গুণাগুণসহ কালিজিরা বহু গুণে গুণান্বিত। তাই ছন্দাকারে বলা যায়- ঔষধি গুণে অনন্য, কালিজিরা-খেয়ে হও ধন্য’। কিংবা ‘কালিজিরা কালোহীরা, দূর করে মৃত্যু ছাড়া সকল পীড়া’।

কালিজিরার বীজে রয়েছে শর্করা, আমিষ, ফ্যাটি এসিড, অ্যামাইনো এসিড, সিস্টিন, মিথিওনিন ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি ১, ভিটামিন-বি ২, নিয়াসিন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান। এছাড়াও বীজে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের মতো মৌল উপাদান রয়েছে। কালিজিরায় Thymoquinone, Nigellone, Melanthin নামক যৌগ পাওয়া যায়, যা ওষুধ শিল্পের মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহার হয়।

মূলত বীজই ব্যবহার্য্য অংশ। কালোজিরার বীজ উদ্দীপক, স্মৃতিশক্তি বর্ধক, বায়ুনাশক, হজম বৃদ্ধিকারক, জীবাণুনাশক, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও কালিজিরা বহুবিধ রোগ বিশেষ করে মাথাব্যথা, দাঁতব্যথা, ফোঁড়া সারাতে, চুল পড়া রোধে, বহুমূত্র, হাঁপানি, উদরাময়, সর্দি ও চর্মরোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকর। তাছাড়া অনিদ্রা, মুখশ্রী সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা, দুর্বলতা, নিষ্ক্রিয়তা, আহারে অরুচি দূরীকরণে কালিজিরা উপযোগী ভূমিকা পালন করে থাকে। কালোজিরার গুঁড়া নিয়ম করে খেলে আর্থ্রাইটিস রোগ উপশম হয় ও প্রসূতি মহিলাদের দুধের প্রবাহ ও পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে (জে.এস.প্রুথি ১৯৭৬)। এমনকি ধনুষ্টংকারে শিরদাঁড়ায় সেঁক দেয়ার জন্য কালিজিরার পাতার ক্বাথ ব্যবহার হয়। তাই সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল জীবনে কালিজিরার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এবং মানব দেহকে এর নিজস্ব প্রাকৃতিক নিয়মে সুস্থ করে তোলায় সহযোগিতা করে।

কালিজিরা ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি অপ্রধান মসলা ফসল হিসাবে পরিচিত। ব্যবহার ও উৎপাদনের দিক থেকে গৌণ হলেও এদেশের রসনাবিদদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ মসলা। পাঁচফোড়নের একটি অন্যতম উপাদান এ কালিজিরা। রন্ধনশালায় দৈনন্দিন বিভিন্ন খাবার তৈরিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কালিজিরার বীজ সুগন্ধি, বেকারি ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিভিন্ন আর্য়ুবেদিক, হারবাল, ইউনানি কোম্পানিগুলোর ওষুধ তৈরির কাঁচামাল হিসাবে কালিজিরা ব্যবহার করায় এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কালিজিরার তেল অতি উচ্চমানের বিভিন্ন অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড, যেমন- লিনোলেনিক (ওমেগা-৩), লিনোলিক (ওমেগা-৬), অলিক এসিড (ওমেগা-৯) সমৃদ্ধ। এছাড়া কালিজিরা তেলে বিভিন্ন সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড যেমন-মিরিস্টিক এসিড, পামিটিক এসিড, স্টিয়ারিক এসিড, অ্যারাকিডিক এসিড উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় রক্তে কোলেস্টরলের পরিমাণ কমায়। সুতরাং ওমেগা-৬ এবং ওমেগা-৯ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ কালিজিরা তেল উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং ওমেগা-৬ ও ওমেগা-৯ ফ্যাটি এসিড তেলের সংরক্ষণকাল বাড়ায়। এছাড়া কালিজিরা তেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (আলফা টোকোফেরল), অ্যাস্টিটিউমার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ রয়েছে।

এমনকি কালিজিরা ফুলের মধুও অত্যন্ত উপকারী। একমাত্র মৌমাছিই কালিজিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। কালিজিরা ফসলে ক্ষেত্রে মৌমাছি বাক্স স্থাপন করে দেখা গেছে, ফলন প্রায় ১০-১২% বৃদ্ধি পায় এবং বীজের গুণাগুণও অতি উচ্চমানের হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *