ফারজানা মাহবুবা’র ডাইরি : কর্দোবা – পর্ব ১

ভ্রমণ-স্মৃতিকথা শিল্প-সংস্কৃতি সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইমানুয়েল নাম লোকটার। কর্দোবা মসজিদের ভিতরের গার্ড। আমাদের পরিচয়টা খুব বাজেভাবে শত্রুর মত শুরু হলেও যখন বিদায় নিচ্ছিলাম সে বার বার বলছিলো ‘স্যরি!’

ইন্টারনেটের সব কথা বিশ্বাস করতে হয়না- আমি আমার দুই মেয়েকে এই কথা হাজারবার বললেও, স্পেইন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে কোথাও লেখা দেখেছিলাম কর্দোবা মসজিদের ভিতর মুসলিমরা চাইলে নামায পড়তে পারে।

আমি মসজিদের ভিতরে ঘুরতে ঘুরতে কিছুতেই মন থেকে মানতে পারছিলাম না সেই ৭৮৫ খৃষ্টাব্দে প্রথম বানানো এই মসজিদে নামায না পড়ে চলে যাবো! আমি হাঁটতে হাঁটতে খুঁজছিলাম গার্ড বা অথরিটির কাউকে, জিজ্ঞেস করার জন্য, নামায পড়তে পারবো কিনা?

চোরের মত নামায পড়ার পক্ষ্মপাতী না আমি। কিন্তু কাউকেই খুঁজে পেলাম না। শেষে, ঐ যে, ইন্টারনেটে কোথায় যেন পড়েছিলাম নামায নাকি পড়তে দেয় এখন, একটা কর্নারে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম, দুই রাকাত কসরের আসর নামায পড়ে নিতে।

মাত্র দ্বিতীয় রাকাতে রুকু দিয়েছি, তখনি শুনতে পাচ্ছিলাম কেউ জোরে চিৎকার করতে করতে দৌঁড়ে আসছে! লোকটা স্প্যানিশ ভাষায় সমানে কী যেন বলে যাচ্ছে! আমি দ্রুত কোনোরকমে তাশাহুদ পর্যন্ত পড়েই দরুদ পড়ার আগেই সালাম ফিরিয়ে ফেলতে হলো, কারণ না হলে লোকটা গায়ে হাত দিয়ে দিচ্ছে এমন অবস্থা!

সালাম ফিরিয়ে দেখতে পেলাম এই লোকটাকে। প্রচণ্ড রেগে গিয়ে কী যেন বলেই যাচ্ছে। বুঝলাম, তারা ক্যামেরা দিয়ে সারাক্ষণ নজর রাখে কেউ নামায পড়ছে কিনা! নামায পড়তে দেখলেই দৌঁড়ে এসে ধরে!

আমি বললাম, আমি খুবই স্যরি, ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করলাম আমি গার্ড খুঁজেছি পারমিশান নিতে কিন্তু কাউকে খুঁজে পাইনি। সে আমার কথা বুঝতে পারছেনা দেখে গুগল ট্রান্সলেট করে দেখালাম স্প্যানিশ এ আমি তাকে কী বলতে চাচ্ছি। এবার তার মাথা একটু ঠাণ্ডা হলো।

আমি হেসে বললাম, আচ্ছা, এই যে নামায পড়তে দিলা না আমাকে, এইটা তো মসজিদ ছিলো অরিজিনালি! আমি হেসে হেসে বলেছি বলেই কিনা কে জানে, সে আমাকে এবার সুন্দর করেই ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করলো যে এটা অরিজিনালি মসজিদ হলেও এখন ক্যাথলিক চার্চ। চার্চে নামায পড়া এলাউড না।

আমি আবারো স্যরি বললাম। এবার সে নিজেই আমার মোবাইলে গুগলে ঢুকে দেখিয়ে দিলো পাশেই আরেকটা পুরাতন হিষ্টোরিক্যাল মসজিদ আছে। থ্যাংকস বলে যখন চলে আসছিলাম, তখন নিজের থেকেই সে কয়েকবার বললো সে খুবই স্যরি আমাকে নামায পড়তে দেয়নি তাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *