হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী, সিলেট থেকে
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উন্নয়ন কাজ সাড়ে চার বছরেও শেষ হলো না। কবেইবা এই কাজ শেষ হবে বলা যাচ্ছেনা। তবে মাত্র ২২ ভাগ কাজ শেষ করে ২১২ কোটি টাকা তুলে নেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হলে সিলেটে তোলপাড় চলছে। এমনকি লন্ডন, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
‘দেশে গেলে বিমান বন্দরে আমাদেরকে কত ভোগান্তি পোহাতে হয়। কতকাল থেকে ওসমানী বিমান বন্দরের উন্নয়নের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্ত তারা উন্নয়নের মূলা ঝুলিয়ে লুটপাটের মহোৎসবে ব্যস্ত।’ বলছেন, ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকে ফর ফুল্লি ফাঙ্কশনাল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’র আহবায়ক কে এম আবুতাহের চৌধুরী। তিনি এর সুষ্টু তদন্ত এবং দায়ি ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
সূত্র মতে ২০২০ সালে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সাল পর্যন্ত। কিন্তু সাড়ে ৪ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ২২ ভাগ। অথচ কাজ না করেই ২১২ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোমেনও বিভিন্ন সময়ে কাজের অগ্রগতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। কিন্ত কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি। কারণ তৎকালীন সময়ে এর পেছনে উচ্চ পর্যায়ের প্রভাবশালী মহল জড়িত ছিলেন। তবে বুঝি শেষ রক্ষা হলোনা।
সূত্র মতে, এ জন্য দায়ি বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও বিমান মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মুহিবুল হকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সোমবার মামলাটি দায়ের করা হয়।
বিগত সরকারের আমলে ২ হাজার ১১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ওসমানী বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ও দেশি-বিদেশি ফ্লাইট চালুর জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। যা ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ২৭ মের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাড়ে ৪ বছর পর হলেও ওসমানীতে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। বরং কাজ না করেই অগ্রিম বিল হিসেবে ২১২ কোটি টাকা ছাড় করিয়ে নেয়া হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। ওসমানী বিমানবন্দর ছাড়াও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে।
মামলায় আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মুহিবুল হক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, বেবিচকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. হাবিবুর রহমান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুল আনাম, পরিচালক লুতফুল্লাহ মাজেদ, প্রকল্প পরিচালক মইদুর রহমান মো. মওদুদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব শাহ জুলফিকার হায়দার (বর্তমানে উপ সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়) এবং সাবেক যুগ্মসচিব মো. আনিছুর রহমান (বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজে স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে বেআইনি সুবিধা নিয়ে ও দিয়ে অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কো-কন্ট্রাকটর হয়ে কার্যাদেশ পেয়ে তা বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকে। অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড দেশের বিমানবন্দরগুলোর কোনও প্রকল্পে সরাসরি, আবার কোনও প্রকল্পে বিদেশি কোম্পানির লোকাল এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে। আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন করে পরস্পর যোগসাজশে প্রকল্পগুলোর সামগ্রিক কাজে অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে সম্পৃক্ত করা হয়।
ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক মো.হাজিফ আহমদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ২০২০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের মাত্র ২২ ভাগের চেয়ে একটু বেশি কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই নিয়মের মধ্য দিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে এবং মানুষের প্রত্যশাও পূরণ করা জরুরী।
ওসমানী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও অন্যান্য এয়ার লাইন্স অবতরণের দাবীতে ব্যাপক প্রচার তৎপরতা চলছে যুক্তরাজ্যজুড়ে। সম্প্রতি সাপ্তাহিক বাংলা পোষ্ট পত্রিকার অনারারী চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ মোঃ মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী ও মোহাম্মদ আব্দুর রবের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট গণদাবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মোঃ শফিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক মোহাম্মদ মোস্তফা, দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদক সাঈদ চৌধুরী, বাংলাদেশ জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক খান জামাল নূরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য প্রবাসী অধিকার পরিষদের সভাপতি জামান সিদ্দিকী, লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলর ছয়ফুল আলম, বার্কিং এন্ড ডেগেনহাম কাউন্সিলের সাবেক মেয়র কাউন্সিলর ফারুক চৌধুরী, গোল্ডেন ড্রিমসের সভাপতি মিসেস কামরুন্নেছা খানম শোভা মতিন, ব্রিকলেন ট্রাস্টের সভাপতি শাহ মুনিম, জাতীঁয় পার্টির নেতা মোঃ আজম আলী, পলাশ সেবা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক আহমদ, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল ফ্রান্সের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ হাবিব, রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিস ইউকের সাধারন সম্পাদক কবি শিহাবুজ্জামান কামাল, গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার সাঈদুজজামান সুমন, দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার অন্যতম পরিচালক শাহ শেরওয়ান কামালী, সুনামগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের নেতা হাজী ফারুক মিয়া, দক্ষিণ সুনামগন্জ উন্নয়ন সংস্থার সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক আজিজুল আম্বিয়া, কমিউনিটি সংগঠক ইউসুফ জাকারিয়া খান, সাংবাদিক আমিনুর রশীদ, গহরপুর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবুল মিয়া, আব্দুস শহিদ, জমির হোসেন, কমর আলী, এডভোকেট আরিফ আহমদ, শরিফ উদ্দিন, হরোফ খান, মোঃ জিতু মিয়া, সৈয়দ মামুন আহমদ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ২০২০ সালে ওসমানী বিমান বন্দরে শুরু করা নতুন টারমিনাল ভবনের কাজ আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি। বিগত সরকার সিলেট বাসীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরন করেছে। গত ২২বছরেও সিলেট ওসমানী বিমান বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর করা হয়নি। বিমান ছাড়া অন্যান্য এয়ার লাইন্স অবতরণের কোন সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা। সিলেট অঞ্চলের প্রবাসী যাত্রীদের জিম্মী করে বিমান অত্যধিক ভাড়া নিচ্ছে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে প্রবাসীরা বাংলাদেশে যেতে পারছেন না। বক্তারা অনতিবিলম্বে ওসমানী বিমান বন্দরে কাতার, তুরস্ক, সাউদিয়া , বৃটিশ এয়ার ওয়েজ-সহ অন্যান্য এয়ারলাইনের ফ্লাইট চালুর দাবী জানান ।সিলেটবাসীর এ ন্যায়সঙ্গত দাবী না মানলে বিমান ও সোনালী ব্যাংক বয়কট-সহ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হতে পারে ।
সভায় সিলেট ওসমানী বিমান বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বাস্তবায়ন কমিটি নামে একটি ক্যাম্পেইন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কর্মকর্তারা হচ্ছেন আহবায়ক কে এম আবু তাহের চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক শেখ মোঃ মফিজুর রহমান, কাউন্সিলার ফারুক আহমাদ চৌধুরী, জামান সিদ্দিকী ও মোঃ আজম আলী। সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রব, যুগ্ম সদস্য সচিব খন্দকার সাঈদুজজামান সুমন, অর্থ সচিব সলিসিটর মোহাম্মাদ ইয়াওর উদ্দিন, যুগ্ম অর্থ সচিব শাহ শেরওয়ান কামালী, প্রচার ও তথ্য সচিব সাঈদ চৌধুরী। সদস্য: বীর মুক্তিযোদ্ধা আহবাব হোসেন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মোস্তফা, শেখ ফারুক আহমদ, ড. আজিজুল আম্বিয়া, ড. এম এ আজিজ, খান জামাল নূরুল ইসলাম, ছয়ফুল আলম, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, হরোফ খাঁন জমির হোসেন, আব্দুস শহিদ, কমর আলী, শরিফ উদ্দিন, ইউসুফ জাকারিয়া খান, হাজী ফারুক মিয়া, হাজী মোঃ হাবিবুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, আমিনুর রশিদ, মোঃ জিতু মিয়া, সৈয়দ মামুন আহমদ, মো: আবুল মিয়া, কামরুন্নেসা খানম শুভা মতিন, এডভোকেট আরিফ আহমদ, মোহাম্মদ নুরুল হক। বিভিন্ন শহর থেকে আরো প্রতিনিধি নেওয়া হবে বলে সভায় সভায় ঘোষণা প্রদান করা হয়।