সভ্যতার যাত্রারম্ভ এ বিশ্ব জগতে মানব প্রজন্মের আবির্ভাব এবং অবস্থান সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন মনীষীবৃন্দ নানা রকম এবং অভিনব মন্তব্য পেশ করেছেন। ঐসব মনীষী বৃন্দের মন্তব্য ও বক্তব্য এক সময় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কালের ঘূর্ণাবর্তে সে সব মন্তব্য প্রায় সব গুলোই বিভিন্ন সময়ে অবান্তর ও অবাস্তব বলেই প্রমাণিত হয়েছে।
যেমন বৃটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের অভিমত: মানুষ নাকি ক্রম বিকাশের ধারায় বানর বা ব্যাঙের অধস্তন বংশধর থেকে আবির্ভূত। সর্বশেষে বানর নামক প্রাণির লেজ খসে মানুষে রুপান্তরিত হয়েছে। তার এ অভিমতের ওপর ভিত্তি করে বহু পুস্তক রচিত রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ কালের গবেষণার মাধ্যমে তাঁর কোনো অনুসারী বিজ্ঞানী একটি জীবন্ত বানরের লেজ খসে পড়া দেখাতে সমর্থ হয়নি, এবং তার এই ধরনের মন্তব্য অনেকেই গাজাখুড়ি মতবাদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অন্য দিকে জার্মান দার্শনিক মিঃ হেগেল- এ বিশ্ব এবং সমূদয় প্রাণি ও অন্যান্য সৃষ্টি সম্পর্কে যে মন্তব্য পেশ করেছেন এ বিশ্ব ও সকল বস্তু সামগ্রীর কোনো সৃষ্টি কর্তার অস্তিত্বকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন- এসবই হঠাৎ একটি এক্সিডেন্টের মাধ্যমে তৈরি হয়ে গেছে। তার এ মতাদর্শের নাম হলো- দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ (Dialectical Materialism) মানুষ ও জগৎ সম্পর্কিত এসব মতবাদ গুলোর সবই নাস্তিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত অভিমত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
এসব অনুমান ভিত্তিক মন্তব্যগুলো সত্যতা ও প্রামান্যতা ধোপেই টিকেনি সুধিমনীষীবৃন্দের নিকট। আরেক অস্ট্রিয়ান প্রাণী বিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড- যিনি ছিলেন ভিয়েনা বিশ্ব বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিদ্যার অধ্যাপক, তিনি মানুষ সম্পর্কে যে তত্ত্ব কথা ছড়িয়ে ছিলেন তাও আলোড়ন তুলে ছিলো একদা- তার মতে, মানুষ হচ্ছে যৌন সর্বস্বজীব, বা প্রাণী। মানুষের সকল কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য নাকি- যৌনতা এবং যৌন সবর্স্ব জীবন যাপন। উপরোক্ত মতামতগুলোর সারবস্তু যা কিছু অবগত হলাম তাতে এ কথাই প্রমাণিত হয়; মানুষ সম্পর্কে তাদের মতামত একপেশে সম্পূর্ণটাই অমূলক ধরনের। এবং সাত অন্ধের হাতি দর্শনের মতো। অথচ এসব জ্ঞানীগুণী মনীষীবৃন্দ মানুষের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে একদম শিশুর মতো কথা বার্তা প্রকাশ করেন, – যা সত্যের অপলাপ বলেই শেষমেশ প্রমাণিত হয়।
মানুষের আসল পরিচয়: এ ক্ষেত্রে মানুষের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছে বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত ধর্ম গ্রন্থ আল-কুরআন। যে গ্রন্থ শুধু মুসলমান জাতির ধর্মগ্রন্থ নয়। বরং বিশ্বের সকল মানুষের জন্যে তা অবতীর্ণ করা হয়েছে। কিন্তু ভুল বসত এবং অজ্ঞতার কারণে কেবল মুসলিম জাতির ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সেই গোটা মানব জাতির জন্যে অবতীর্ণ গ্রন্থ মানুষ সম্পর্কে কতো চমৎকার এবং প্রণিধান যোগ্য ঘোষণা দিচ্ছে। “আপন তত্ত্বের প্রতি মানুষের লক্ষ্য করা উচিত যে, সে কোন্ জিনিস থেকে পয়দা হয়েছে, সে পয়দা হয়েছে স্ববেগে নির্গত এক পানি থেকে যা পিঠ বক্ষ অস্থির মধ্যখান হতে বেরিয়ে আসে।” ১
“মানুষ কি লক্ষ্য করেনা যে, আমরা তাকে একবিন্দু পানি থেকে সৃষ্টি করেছি ? এখন সে খোলা খুলি দৃশ্যমানে পরিণত হয় এবং আমাদের জন্যে দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকে আর নিজের আসল জন্ম ও সৃষ্টি কে ভুলে গেছে। ” ২
“মানুষের সৃষ্টির সূচনা করেছেন মাটি থেকে। অতপর মাটির নির্যাস থেকে যা এক অপবিত্র পানি- তার বংশধারা চালিয়েছেন। এরপর তার গঠন কার্য ঠিক করেছেন এবং তার ভেতরে আপন রুহু ফুঁকে দিয়েছেন। ” ৩
“আমরা তোমাদেরকে মাটি থেকে তারপর পানি বিন্দু থেকে অত:পর জমাট বদ্ধ রুক্ত থেকে তারপর পূর্ণ বা অপূর্ণ মাংসপিণ্ড থেকে পয়দা করেছি , যেনো তোমাদেরকে আপন কুদরত দেখাতে পারি । এবং আমরা যে শুত্রু বিন্দুকে ইচ্ছে করি এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাতৃগর্ভে রেখে দেই। অনন্তর তোমাদের কে বাচ্চা বানিয়ে বের করি অতপর তোমাদের কে বাড়িয়ে যৌবন পযন্ত পৌঁছিয়ে দেই । তোমাদের ভেতর থেকে কেউ মৃত্যু বরণ করে, আর কেউ এমন নিকৃষ্টতম বয়স পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে যে, বোধ শক্তি লাভ করার পর আবার অবুঝ হয়ে যায় । ”৪
“তোমরা কি সেই শুক্র বিন্দু সম্পর্কে চিন্তা করেছো যা তোমরা মেয়েদের গর্ভে নিক্ষেপ করে থাকো ? তা থেকে বাচ্চা তোমরা পয়দা করো না আমরাই তার জন্মদান কারী? ”৫
পবিত্র কুরআনুল কারীমেই বর্তমান বিশ্ব এবং এর প্রধান বুদ্ধিমান প্রাণি মানুষের আসল এবং নির্ভুল পরিচয় তুলে ধরেছে : অথচ প্রাচ্যও প্রতীচ্যের কতিপয় মনীষী এবং দার্শনিক মানুষের সৃষ্টি এবং তার সঠিক মযার্দা সম্পর্কে একদম ভুল ও বিভ্রান্তি মূলক চিন্তা চেতনার উদগাতা হয়ে পুরনো জাহিলিয়াতেরই প্রকাশ ঘটিয়ে মানব জাতিকে ভ্রান্ত পথে চালিত করবার চেষ্টা করেছেন। জাহিলিয়াতের সংজ্ঞা কি? এক কথায় মহান সৃষ্টি কর্তার দাসত্ব করা থেকে বিপদগামী হওয়ারই নাম হচ্ছে জাহিলিয়াত, বা অজ্ঞতা এবং বিভ্রান্তি। ”৬
সুতরাং যতো গুলো সভ্যতা পৃথিবীর প্রথম সৃষ্টি হতে আজ অবধি এসেছে প্রায় অধিকাংশ গুলোরই একমাত্র লক্ষ্য ছিলো এবং রয়েছে মহান-আল্লাহ যিনি অতি মহান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে মানব জাতির আর্বিভাব ঘটালেন এ বিশ্ব চরাচরে। তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্য করা থেকে বিপদগামী হওয়ার চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে একমাত্র ইসলামী সভ্যতাই ব্যতিক্রম এবং চিরন্তন অবস্থায় আজো বিদ্যমান। “ সভ্যতার সংজ্ঞা: সভ্যতা বলতে পূর্ববর্তী অপেক্ষা কৃত অনুন্নত অবস্থা থেকে মানুষের সামগ্রিক জীবন ধারার ধনাত্মক পরিবর্তনকে বুঝানো হয়। ”৭
এ বিশ্বে প্রাচীন ও আধুনিক মিলিয়ে বহু সভ্যতার আবির্ভাব ঘটেছে : যেমন – মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা ,আমুরীয় সভ্যতা সুমেরীয় সভ্যতা, ক্যালদীয় সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা, সৈনিক সভ্যতা, হিব্রু সভ্যতা, পারস্য সভ্যতা, আর্য সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা, রোমান সভ্যতা এসব সভ্যতা গুলোর আদর্শ এবং মূল জীবন বৈশিষ্ট্যের পর্যালোচনা করে একটি বিষয়ই স্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয় – এরা এ জগত সংসারকে ভোগ বিলাস আনন্দ উল্লাসে কাটিয়ে দেয়ার জন্যেই মূলত চেষ্টাত চালাতো এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বলতে কোন জীবনকেই বিশ্বাস করতো না। মৃত্যুই জীবনের পরিসমাপ্তি বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো। তারা সৃষ্টি কর্তায় অনেকেই আস্থা রাখতো না এবং জীবনের প্রশান্তি লাভের প্রত্যাশায় বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা ও আরাধনা করতো। শুধুমাত্র ইহুদী সম্প্রদায়ের নিজস্ব সভ্যতা হিব্রু সভ্যতায় ধর্মের একেশ্বরবাদী চেতনার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মূর্তি পূজাকে হিব্রু সভ্যতায় পাপের কাজ বলে গণ্য করা হতো। বর্তমান যুগের যে পাশ্চাত্য সভ্যতা সমগ্র বিশ্বটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে তা কিন্তু নতুন কোনো সভ্যতা নয় বরং তা গ্রিক ও রোমান সভ্যতাই নবরুপে আবির্ভূত হয়ে গোটা পাশ্চাত্য জগতের হয়ে সমগ্র বিশ্বটাকে তাদের প্রভাব বলয়ে গেথে ফেলেছে। এবং শুধু পাশ্চাত্যই নয় সমগ্র বিশ্বটাকে প্রভাব প্রতিপত্তি এবং আধিপত্তের শৃংখলে বেধে ফেলে দোর্দণ্ড প্রতাপে সকল কিছু নিয়ন্ত্রণও করছে।
এক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের অবস্থাটাও তেমোন ভালো নয়। তারাও তাদের প্রভাব বলয়ে বাধা। তবে এরি মধ্যে যেসব দেশ ইসলামী সভ্যতাকে ভালোবেসে, ইসলাম কে তাদের সমাজ রাষ্ট্রে বাস্তবায়নের এবং অনুসরণের প্রয়াস চালান-তারা বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে, এবং পাশ্চাত্যের বিশেষ করে আমেরিকার প্রখ্যাত চিন্তাবিদ স্যামুয়েল হান্টীংটন তার বিখ্যাত গ্রন্থ Clash of Civilaization গ্রন্থে পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব সংঘাত অন্য কোন সভ্যতার সঙ্গে নয়; কেবল ইসলাম্রে সঙ্গেই হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন।
তাহলে সঙ্গত কারণেই বোধগম্য হচ্ছে যে ইসলাম যেহেতু পুরানো জাহিলিয়াত সহ আধুনিক সকল জাহিলিয়াতি চিন্তা চেতনা এবং দর্শনের দিক দিয়ে প্রাচ্য প্রতীচ্যের সমুদয় মতাদর্শেরই বিরোধী চিন্তা দর্শন তথা ঐশী আদর্শের কথা ব্যক্ত করে এবং মানব জীবনে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়-সেহেতু তাগুতি শক্তির সকল চিন্তা চেতনার ধ্বজাধারীদের আঁতে ঘা না লেগে যাচ্ছে না -সুতরাং তারা না ক্ষেপার কোনো কারণই নেই এবং সে জন্য প্রাচ্য প্রতীচ্যের নেতৃত্যের আসনে স্যামুয়েল হানটিংটনরা Remaking New World order না লিখে চুপ থাকবেন কেনো? অথচ এদের অতীতের কথা এদের কর্ম কাণ্ডের কথা ভুলে যাওয়া একদম সঠিক হয়নি তা সুবিবেচনা প্রসূত ও নয় কারণ আজকের বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বকে, মানব জাতিকে কি উপহার দিয়েছে? প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ উপহার দিয়েছে ।
আমেরিকা ও তার দোসর বৃটেন ফ্রান্স রুশ জার্মান অক্ষ শক্তির দেশ গুলো- আনবিক বোমামেরে জাপানের নাগাসাকী ও হিরুসীমায় কয়েক লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে । ভিয়েতনামে লক্ষ লক্ষ মানুষ দশ বছর ব্যাপী মেরেছে। সম্প্রতি ইরাক ও আফগানিস্তানেও লক্ষ লক্ষ বনি আদম হত্যা করে নিজেদের হাত রক্ত রঞ্জিত করেছে । অথচ এরা জাতি সংঘের ডায়াসে দাঁড়িয়ে শান্তির ললিত বাণী বর্ষণ করেন । হায় সেলুকাস ! বিচিত্র এ বিশ্ব , বিচিত্র এ বিশ্বের শক্তি ধরদের চরিত্র এবং ভূমিকা ! এরা গণতন্ত্র নামক মতবাদ দিয়েছে। এরাই ফ্যাসিবাদের উদগাতা, ঘুণিত পুজিঁবাদ, সেক্যুলারীজম ও নাস্তিক্য বাদী সমাজতন্ত্রের এরাই উদভাবক এরাই সমাজতন্ত্র নামক দানবতন্ত্র প্রতিষ্টার জন্য বিশ্বে প্রায় দশ কোটি মানুষেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আজো সেই রাষ্ট্রীয় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে দেশে ষড়যন্ত্র করা হয় ।
আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য হিটলার সাহেব লক্ষ লক্ষ ইহুদী হত্যা করেছেন। কিন্তু ইসলামী সভ্যতা ও এর আর্দশ প্রতিষ্টার ইতিহাস তো একদম আয়নার মতো পরিস্কার। বিশ্বে একমাত্র একটি মহা বিপ্লবই সংঘটিত হয়েছিল। একদম রুক্তপাতহীন কায়দায় একদম মানবতার জয়গান গেয়ে -ধর্ম বর্ণের বিভেদ ও ব্যবধান ধূলিস্যাৎ করে মানুষের শুধু মযার্দাকে উর্ধ্বেতুলে ধরে । সেই দৃষ্টান্ত কোন্ জাতি বিশ্বে প্রদর্শন করবার স্পর্ধা প্রদর্শন করতে সাহস রাখে? কেউ রাখে না। স্রেফ মুসলিম জাতিই এটা দেখিয়ে বিশ্বের বুকে স্বর্ণালী ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
অথচ বলা হয় ইসলমী সভ্যতাতো সেকেলে সভ্যতা! ইসলাম তো মধ্য যুগের বিষয়। কিন্তু আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার মালমসলা কোথা থেকে আসলো? বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতার মাল মসলা তো সেই পুরানো গ্রীক ও রোমান সভ্যতারই অংশ বা উত্তরাধিকার। আজকের পাশ্চাত্যের চিন্তা ও চেতনা এবং আদর্শ সবই- সেই পুরানো মদই নতুন বোতলে স্থান নিয়েছে। হানটিংটন সাহেবরা যা বলছেন- যা চিন্তা করছেন Remaking New World order তা কিন্তু নতুন কিছু নয় । সবই সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টেটল, কালমার্কস The prince বইয়ের লেখক মেকিয়াভেলী, ডারউইন, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, ও হেগেল সাহেবদেরই চিন্তা চেতনারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র- তাদেরই কার্বন কপি হয়ে বিশ্বকে চমক দেওয়ার কসরত করছেন মাত্র ।
যে জন্য “পাশ্চাত্য জাতিগুলো দীর্ঘকাল থেকে এই বিশ্বাস পোষণ করে আসছে আনন্দ ফূর্তি, আরাম আয়েশ, বস্তুগত সুযোগ সুবিধা ভোগ, মাথাউচু করে চলা ও অন্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করা ছাড়া পৃথিবীর বুকে মানুষের আর কোন অর্জন যোগ্য লক্ষ্য নেই। ”৮
তাদের আরো ধারণা প্রবল ছিলো “আরামের নামই হলো সভ্যতা আর আরাম তথা প্রশান্তি ছিল তাদের সবচাইতে বড় আদর্শ ।” ৯
অন্যদিকে মানব জাতির প্রতি ইসলামের তথা ইসলামী সভ্যতার আবেদন হচ্ছে – “আর যখোন তোমার প্রতিপালক বললেন যে,আমি দুনিয়ায় এক প্রতিনিধি পাঠাতে চাই ।”১০
এ থেকে বুঝা যায় মানুষকে নিছক উদ্দেশ্যহীন ভাবে সৃষ্টি করা হয় নি । বরং তার লক্ষ্য হলো: “আমি শুধু মাত্র আমার ইবাদত বন্দেগী করবার জন্যেই মানুষ ও জিন জাতির সৃষ্টি করেছি ।” ১১
এ-ই হচ্ছে আমার পথ- আমাকে পাবার জন্যে আমারই দেখানো পথ । এ পথ সুদৃঢ় সরল –ঋজু, সুনির্দিষ্ট। অতএব তোমরা কেবল মাত্র এপথ অনুসরণ করেই চলতে থাকো । এ ছাড়া অন্যান্য বহু শত পথও রয়েছে । কিন্তু তা তোমরা অনুসরণ করোনা । যদি করো তাহলে সেসব পথ তোমাদের কে আল্লাহর একমাত্র পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে সম্পূর্ণ ভিন্নতর পথের দিকে নিয়ে যাবে। ” ১২
কুরআনুল কারীম মানুষের ইতিহাস থেকেও প্রমান পেশ করেছে। “এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তার রাসুলের আনুগত্য স্বীকার করাই মানুষের জন্য একমাত্র মুক্তির সনদ। আর আল্লাহর প্রতি বেঈমানী ও উপেক্ষা এবং তার রাসুলের অমান্যতাই মানুষের সার্বিক ধ্বংস ও বিপর্যয়ের আসল কারণ। ”১৩
👉ডায়নামিক ওয়েবসাইট দিয়েই গড়ে তুলুন আপনার প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি। সেবা দেয়ার জন্য সবসময় আপনার পাশে আছে ‘ভার্সডসফট’।
পাশ্চাত্য সভ্যতা যে পথ অবলম্বন করে গোটা বিশ্বকে দাবরাচ্ছে তাতে সমগ্রবিশ্বই বিপুল বিনাশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে বলে মনে হয়। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তারা অস্ত্র বলে, শক্তির আতিশয্যে বেসামাল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের সকল জাতি ও রাষ্ট্রসমূহের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে শুধু লুটপাট এবং সকল রাষ্টের খনিজ সম্পদ তথা তেল সম্পদ কে কুক্ষিগত করে দোর্দণ্ড প্রতাপে বিশ্বটাকে গ্রাস করবার পায়তারাই শুধু করছে না হুমকি ধুমকিও সমান তালে চালাচ্ছে। সর্বোপরি তা জার্মানীর এক নায়ক স্বৈরশাসক হিটলারের ন্যায় সমগ্র বিশ্বটাকে গ্রাস করার মহা পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে এগুচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
সমগ্র বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি এবং মানব জাতি ত্রাহি মধুসূদন অবস্থার মুখোমুখী। কারণ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ আজ তঁাঁদের সৃষ্টি কর্তাকে ভুলে বসে রয়েছে। তাদের জন্যে যে জীবন ব্যবস্থা আল্লাহ পাঠালেন তা থেকে তারা যোজন দূরে অবস্থান নেয়ার কারণে চরম বিপর্যয় সম্মুখে দন্ডায়মান।
এর থেকে বাঁচার একটি মাত্র পথই উম্মুক্ত। আর তা হচ্ছে ইসলামে বিশ্বের সকল মানুষকে ফিরে আসতে হবে। ইসলাম যেহেতু চৌদ্দশ বছর অতিক্রম করে এসেছে, চৌদ্দশ বছর পরে কোনো ধর্ম আর ধর্ম থাকেনা। হয়ে ওঠে এক ধরনের বিকৃত আচার অনুষ্ঠান ও নিষ্প্রাণ সামাজিক রীতি। কিন্তু চৌদ্দশ বছর পরও ইসলাম কেবল আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি , তার মূলপ্রাণ শক্তি বজায় রয়েছে। ” ১৪
সুতরাং ইসলামী আদর্শ ও সভ্যতার মূল প্রাণ ও শক্তি যেহেতু আল কুরআন- তাই এই কুরআনের শরণাপন্ন হতে পারলেই মানব জাতির মুক্তির প্রত্যাশা করা যায়। কেনোনা কুরআনী চিন্তার মধ্যে পরিবর্তন নেই। কিন্তু পরিবর্তন শীলতাকে গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে। এই স্থায়ী চিন্তা কখনো স্থবিরত্বের শিকার হয় না । আর এটা সম্ভব হয়েছ এ কারণে যে, যিনি এ চিন্তা ধারার উদগাতা তিনিই এ জীবন, সমাজ প্রকৃতি ও সকল প্রকার পরিবর্তন শীলতার স্রষ্টা। ” ১৫
অতএব পাশ্চাত্য সভ্যতা সহ যতোসভ্যতা এ পৃথিবীতে বর্তমান সে সবের অপমৃত্যু যথা সময়ে হতে বাধ্য; কারণ এসব মানব রচিত মতবাদ ও সভ্যতা মানুষকে ধ্বংস ও বিনাশের শেষ প্রান্তে নিতে সময় বেশি নেবে না সুতরাং একমাত্র ইসলামে আশ্রয় গ্রহণ এবং ইসলামী সভ্যতার পতাকা তলে সমবেত হওয়া ব্যতীত মানব জাতির সম্মুখে অন্য কোনো পথ খোলা নেই এবং থাকা ও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে । কেনোনা একমাত্র ইসলামী আদর্শ ও সভ্যতাই মানব জাতিকে বার বার রক্ষা করেছে । মানব জাতিকে তার কাক্সিক্ষত প্রয়োজনকে ইসলাম শরাবান তহুরা হয়ে , আবে হায়াত হয়ে সামনে এসে সকল বিপর্যয় হতে বাঁচিয়ে দিয়েছে । অন্য কোনো আদর্শ বা সভ্যতার সে শক্তি ও সামর্থ কোনোকালে ছিলো না এখনো হবার নয়।
পাদটীকা:
১। সূরা আত্তারিক: আয়াত: ৫-৭
২। সূরা ইয়াসিন : আয়াত: ৭৭-৭৮
৩। সূরা আস্সিজদা আয়াত: ৭-৯
৪। সূরা হাজ¦ আয়াত: ৫
৫। সূরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৫৮
৬। ড. মুহাম্মদ কুতুব: বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত পৃ:৬৩
৭। খন্দকার মাহমুদুল হাসান: বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস পৃ: ৯১
৮। সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী: মুসলমানের পতনে বিশ্ব কি হারালো: পৃ: ২৫৯
৯। প্রাগুক্ত: পৃ: ২৫৯
১০। সুরা বাকারা: আয়াত ৩০
১১। সূরা আযযারিয়াত: আয়াত: ৫৬-৫৭
১২ । আনয়াম: আয়াত ১৫৩
১৩। মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম: আল কুরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ পৃ: ২৩
১৪ । আব্দুল মান্নান তালিব, আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম পৃ: ২৪৪
১৫ । প্রাগুক্ত: ২৪৬