ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাকে হয়রানির অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রোববার ফাঁস হওয়া এক চিঠিতে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ইসরাইলের বামপন্থী ডেমোক্র্যাট দলের এমকে নামা লাজিমির অভিযোগ সম্পর্কে তথ্যের জন্য অনুরোধের পর, রাজ্য অ্যাটর্নি অফিস তাকে জানিয়েছে যে, (২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে) সারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত শুরু হয়েছে।
টাইম অব ইসরাইল লিখেছে, রবিবার রাজ্য অ্যাটর্নি অফিস জানিয়েছে, সারা নেতানিয়াহু একজন সাক্ষীকে ভয় দেখানো এবং তার স্বামী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে গত মাসে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে। ইসরাইলের পুলিশ এবং রাজ্য অ্যাটর্নি অফিসের সাইবার ক্রাইম বিভাগ এই তদন্ত পরিচালনা করছে
এই তদন্ত ইসরাইলের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলার বিচার প্রক্রিয়া এবং তার পরিবারের ভূমিকা নিয়ে এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে।
ঘুসগ্রহণ ও দুর্নীতির মামলায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরাইলি আদালতে বিচার কার্যক্রম চলছে। ২০২০ সালে একটি মামলার বিচার শুরু হলেও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে নেতানিয়াহু ও তার নিকটজনেরা নানা রকম কৌশল অবলম্বন করছেন। এর মধ্যে স্ত্রী সারা নেতানিয়াহুর নাম সামনে চলে এসেছে।
ইসরাইলি বিরোধী দলীয় নেত্রী ও পার্লামেন্টের সদস্য নামা লাজিমিকে পাঠানো চিঠিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর নিশ্চিত করেছে যে, সারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তাধীন। নামা লাজিমি তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, সারা নেতানিয়াহু মামলা বিলম্বিত করার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছেন। ইতিপূর্বে নামা লাজিমি অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। সেই অভিযোগের জবাবে তাকে এই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির একটি অনুলিপি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি‘র হাতে রয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর মোতাবেক, পুলিশ ও অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের যৌথ তদন্তে সারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুটি গুরুতর অভিযোগের বিষয় উঠে এসেছে : ১. তার স্বামীর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলার এক প্রধান আসামিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আদালতে হাজির না হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ। ২. অ্যাটর্নি জেনারেল, তার সহকারী ও তার দপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তাদের হয়রানির উদ্দেশ্যে বিক্ষোভ সংগঠিত করা।
ইসরাইলি চ্যানেল ১২ এর “উভদা” অনুষ্ঠানের একটি প্রতিবেদন অনুসরণ করে যেখানে বলা হয়েছে, সারা নেতানিয়াহু তার স্বামীর প্রয়াত সহকারী হানি ব্লেইওয়াইসকে প্রধানমন্ত্রীর বিচারাধীন মামলাগুলির একটির প্রধান সাক্ষী হাদাস ক্লেইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং অনলাইন প্রচারণা পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
“উভদা” প্রতিবেদনের পর, ২৬ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারা এবং রাজ্য অ্যাটর্নি অমিত আইসমান ঘোষণা করেছেন যে তারা সাক্ষীদের হয়রানি এবং ন্যায়বিচারে বাধা দেওয়ার সন্দেহে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
অ্যাটর্নি অফিসের বার্তার প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে লাজিমি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারার বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাওয়া সংসদীয় তদারকি, বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের শাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ”। সুত্র: টাইম অব ইসরাইল, এএফপি এনডিটিভি,দ্য জিউইশ ক্রনিকল