ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইরানে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি ভাষ্যকার বলেছেন এই অঞ্চলের প্রতিটি আমেরিকান নাগরিক বা সামরিক স্থাপনা এখন একটি বৈধ লক্ষ্য।

ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ আর ইসফাহানের পারমাণবিক ঘাঁটিতে সফলভাবে হামলা চালানো হয়েছে এবং হামলা শেষে সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে আছে। এর কিছুক্ষণ পর ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার পোস্ট করেন ‘ফোর্দো ইজ গন’ অর্থাৎ ‘ফোর্দো শেষ।’

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ হামলায় বি-টু বোমারু বিমান জড়িত। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে, মার্কিন বি-টু স্টিলথ বোমারু বিমানগুলোকে মার্কিন দ্বীপপুঞ্জ গুয়ামে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। যার ফলে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় যে বিমানটি ইরানে মার্কিন হামলায় জড়িত থাকতে পারে।

এদিকে, আনুষ্ঠানিকভাবে ফোর্দো, নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানের হামলার কথা স্বীকার করেছে ইরান। দেশটির কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছে। সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, কোম প্রদেশের ক্রাইসিস ম্যানেজম্যান্টের মুখপাত্র মোর্তোজা হায়দারি বলেন, ” ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রের একটি অংশ বিমান হামলার শিকার হয়েছে।”

ইসফাহানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপ-গভর্নর আকবর সালেহি বলেছেন, ” নাতাঞ্জ এবং ইসফাহানে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আমরা ইসফাহান ও নাতাঞ্জের পারমাণবিক স্থাপনার কাছে হামলা দেখেছি।” অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা করার কথা দাবি করেছেন সেই তিনটি স্থানেই হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে ইরানিয়ান কর্মকর্তারা।

পারমাণবিক স্থাপনাগুলো এরই মধ্যে খালি করার কথা জানিয়েছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকের ডেপুটি পলিটিক্যাল ডিরেক্টর হাসান আবেদিনি স্থানীয় সময়ে কিছুক্ষণ আগে মাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি উপস্থিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ” ইরান ‘কিছুক্ষণ আগে’ এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা খালি করেছে।” তিনি আরও বলেছেন, ট্রাম্প যা বলেছেন তা যদি সত্য হয়ও ইরান ” বড় কোন ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি, কারণ পারমাণবিক কেন্দ্রের উপকরণগুলো ইতোমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।”

এদিকে, ইরানে ট্রাম্পের হামলার সিদ্ধান্তের পর এ্রর পক্ষে-বিপক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা। কয়েকজন সিনেটর যেমন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, তেমনি কেউ কেউ এটিকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে সমালোচনাও করেছেন। সাউথ ক্যারোলাইনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, “তিনি সঠিক কাজটি করেছেন।” তিনি আরও যোগ করেন, “(ইরানের) সরকার এটারই যোগ্য।”

রিপাবলিকান সিনেটর রজার উইকার বলেছেন, ট্রাম্প ইরান ‘ইসরায়েলের অস্তিত্বের ওপর যে হুমকি’ সৃষ্টি করেছে তা দূর করার জন্য একটি ‘সঠিক’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, কেন্টাকির রিপাবলিকান সিনেটর থমাস ম্যাসি সমালোচনা করে বলেছেন, “এটি সাংবিধানিক নয়”। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি সারা জ্যাকবস বলেছেন, এ হামলা “একটি ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি, যা যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি অন্তহীন এবং মারাত্মক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ”।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যালের পােস্টটি পুনরায় শেয়ার করেছেন, তবে এখনও পর্যন্ত এই হামলা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি।

ঘটনার সূত্রপাত

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা, আর তার জবাবে ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা বিমান হামলার মধ্য দিয়ে এবারের সংঘাতের শুরু হয়। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় তিনশাে জনের মত মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, ইরানের হামলায় দেশটির কয়েক ডজন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।

গত ১৩ই জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় যে হামলা চালিয়েছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন। এই অভিযানের নাম তারা দিয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। ইরানও পাল্টা জবাব দিয়েছে। হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের ওপর।

ভৌগলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে ইরানের

ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের গতবছর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন বিনিময় হয়েছিল। কিন্তু অতীতের যে কােনাে সংঘাতের তুলনায় ইরানের তরফে সাম্প্রতিক এ হামলা অনেক বেশি বিস্তৃত। প্রসঙ্গত, ১৯৮০-১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর এটা ইরানের ভূখণ্ডের ওপর চালানো সব চাইতে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরায়েল সম্পর্কে সাধারণ তথ্য

ইসরায়ের সরকারের দাবি অনুযায়ী, দেশটির আয়তন ২২ হাজার ১৪৫ বর্গকিলোমিটার, যার মোট আয়তনের ২১ হাজার ৬৭১ কিলোমিটারই ভূমি।
ইসরায়েলের দাবি করা এই আয়তনের মধ্যে রয়েছে মূল ভূখণ্ড, গোলান মালভূমি, জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজার মতো আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত অঞ্চলগুলোও রয়েছে।

ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা ৯৫ লক্ষ ১২ হাজার ৩৯৪ জন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন ছিল তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন। এটি মুসলিম, ইহুদী এবং খ্রিস্টান– এই তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র ভূমি হিসেবে বিবেচিত।

তখন ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদীরা ব্যাপক বিদ্বেষ-নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। সেখান থেকেই ‘জায়নিজম’ বা ইহুদীবাদী আন্দোলনের শুরু। তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের বাইরে কেবলমাত্র ইহুদিদের জন্য একটি রাষ্ট্র তৈরি। ইহুদিবাদী আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইউরোপের ইহুদিরা দলে দলে প্যালেস্টাইনে গিয়ে বসত গাড়তে শুরু করে।

কিন্তু তাদের এই অভিবাসন স্থানীয় আরব এবং মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। কারণ সেসময় আরব এবং মুসলিমরাই ছিল সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেভাবে লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয় (হলোকাস্ট), তার পর ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চাপ বাড়তে থাকে। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা এই অঞ্চলটি তখন ফিলিস্তিনি আর ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল। বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *