সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘ এক যুগ পর দেশে ফিরছেন। ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার উদ্দেশে তিনি লন্ডন ত্যাগ করবেন। লন্ডনে আইন পেশায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই আইনজীবী দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় বললেন, বাংলাদেশ জাতি, আমরাতো খুবই সৌভাগ্যবান যে, আল্লাহ তায়ালা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে আমাদেরকে বাঁচিয়েছেন।
সাঈদ চৌধুরী: আপনি দেশে ফিরে যাচ্ছেন, কী প্রত্যাশা নিয়ে যাচ্ছেন?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক: বাংলাদেশ আমার জন্মস্থান। সেখানে বড় হয়েছি। সেখানকার কোর্টে প্র্যাকটিস করেছি। যাচ্ছি, যদি আল্লাহ কোন খেদমত নেন দেশ এবং জাতির জন্য। সেই আশা এবং সেই প্রত্যাশা নিয়ে সুদীর্ঘ ১১ বছর পরে বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছি।
সাঈদ চৌধুরী: আপনি যখন বাংলাদেশে আইনের শাসনের জন্য লড়েছেন, নিরপরাধ মানুষ যারা আইনিভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন- এই বেদনা আপনাকে তাড়িত বা পীড়িত করে কিনা?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক: অবশ্যই। একটি ফেসিস্ট গভর্নমেন্ট ছিল। মানুষের উপর অন্যায় করেছে, অবিচার করেছে, অত্যাচার করেছে। মানুষকে নিজেরা মেরে তাদের বিরুদ্ধে আবার কেস দিয়েছে। সুতরাং এটি একটি বেদনাদায়ক ইতিহাস। বাংলাদেশ জাতি, আমরাতো খুবই সৌভাগ্যবান যে, আল্লাহ তায়ালা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে আমাদেরকে বাঁচিয়েছেন।
সাঈদ চৌধুরী: আপনি কি আশা করেন, এখন অন্তত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক: ইনশাআল্লাহ, আমি আশা করি। অনেক ডিফিকার্টিজ আমাদের আছে। অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাআল্লাহ।
সাঈদ চৌধুরী: দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একজন বিজ্ঞ সিনিয়র প্রবীণ লয়ার হিসেবে আপনি কোন বিশেষ পরিকল্পনার কথা ভাবছেন কিনা?
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক: সেটা হচ্ছে যে, আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব, বিচার বিভাগের যারা আছেন তাদের সাথে মিলে, আইন অঙ্গনে যারা কাজ করছেন লয়ার (lawyer), ইরেস্পেক্টিভ অফ পার্টি এফিলিয়েশন, আামি চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক স্বদেশে ফিরে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যে আইন পেশায় জড়িত ব্যারিস্টার ও সলিসিটরগণ তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা প্রদান করেছেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশনের (এমসিএ) লিগ্যাল টিম।
ব্যারিস্টার ও সলিসিটর ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং ব্যারিস্টার ও সলিসিটর বদর আলম দিদারের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন জাজ মো. বেলায়েত হোসেন।
অংশগ্রহন করেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ, ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান, ব্যারিস্টার আফজাল জামি সৈয়দ, ব্যারিস্টার ও সলিসিটর নজরুল ইসলাম, সলিসিটর মেহেদী হাসান, ব্যারিস্টার ও সলিসিটর ওয়াহিদুর রহমান, ব্যারিস্টার ও সলিসিটর মাহবুব সালেহী, সলিসিটর জহির আহমদ, ব্যারিস্টার আরিফুল কবির চৌধুরী, ব্যারিস্টার ও সলিসিটর সায়েম উদ্দিন হাসিব, ব্যারিস্টার সৈয়দ হাসান, ব্যারিস্টার রহমত আলী, ব্যারিস্টার খুরশেদ, সলিসিটর সাজ্জাদুর রহমান, এ্যাডভোকেট ডাঃ খালেদ ইয়াহিয়া, সাংবাদিক সাঈদ চৌধুরী, সাংবাদিক তাইসির মাহমুদ, লেখক আব্দুদ দাইয়্যান মোহাম্মদ ইউনুস প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী সরকারের বিতর্কিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদেরে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় হত্যার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করেছেন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার কারণে তিনি শাসকগোষ্ঠির রোষানলে পড়েন। রাজনৈতিক চাপের মুখে বাধ্য হয়ে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর মাসে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। লন্ডনে আইন পেশায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খ্যাতিমান এই আইনজীবী দেশে ফিরে পুনরায় আইন পেশায় সক্রিয় হবেন বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন।