অনুবাদ : মাসুম খলিলী
এক. ভালো কিছু সহজে আসে না। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আপনার সেরাটা করার চেষ্টা করুন। আপনি সেখানে সাফল্য পাবেন।
দুই. আপনি যদি পথ ফিরে পেতে লড়াই করে থাকেন তবে লোকদের আপনার প্রচেষ্টাকে উপহাসের বিষয় বানাতে দেবেন না। এটি আপনার সর্বশক্তিমানের কাছে ফিরে যাওয়ার রাস্তা। তিনি আপনাকে গাইড করবেন। ধৈর্য বজায় রাখুন। আর মনে রাখবেন জীবনে সুখ ও দুঃখ উভয়ই আসে। দুঃখের সময় ধৈর্য ধরতে শিখুন এবং খুশি হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। তিনি আপনাকে পুরস্কৃত করবেন এবং আপনার মর্যাদা উন্নীত করবেন।
তিন. একধাপ পিছনে যান এবং বড় ছবিটি দেখুন। মেঘের ঘনঘটা দেখে প্রায়ই আপনার সিদ্ধান্তকে নিয়ে সংশয়ে পড়তে পারেন এবং এমনকি তা আপনাকে বিভ্রান্তও করতে পারে। নিশ্চিত হবার জন্য অবশ্যই বিশদ বিবরণ গুরুত্বপূর্ণ, তবে আপনি যদি বড় ছবিটির প্রতি দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন তবে আপনার চূড়ান্ত গন্তব্যটির প্রতিও আপনি দৃষ্টি হারাবেন। আর এটিই শেষ পর্যন্ত হিসাব করা হয়!
পুনশ্চঃ
এক. আপনি কি ক্লান্ত এবং নিরুৎসাহিত বোধ করছেন? জট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আপনার মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন হবে। ইতিবাচক চিন্তাধারা গ্রহণ করুন। বিশ্বাস করুন যে সর্বশক্তিমান আপনার জন্য মঙ্গল চান। তিনি আপনার মধ্যে শক্তি এবং পরাস্ত করার ক্ষমতা দেবেন। তাঁর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করুন। প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করুন এবং এরপর পার্থক্য অনুভব করুন।
দুই. আপনি যখন প্রার্থনা করবেন তখন তা অন্তর দিয়েই করুন। লিপ সার্ভিস দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনি এমন একজনের কাছে চাচ্ছেন যিনি আপনাকে তৈরি করেছেন; যিনি আপনার অস্তিত্বের সকল কিছুর উপরে নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। আপনার অনুভূতিকে প্রবাহিত রাখুন। দয়া ভিক্ষা করুন। কান্না করুন। আপনার যা কিছু দেখানোর প্রয়োজন তার জন্য তাঁকেই লাগবে। সব কিছুর উপরে বিশ্বাস করুন যে তিনি আপনার যে কোন চাওয়ার ব্যাপারে সাড়া দেবেন!
তিন. তিক্ততা এবং বিরক্তিকে আপনার হৃদয়ে শিকড় গাড়তে দেবেন না। এগুলি বিষ যা শেষ পর্যন্ত আপনার আত্মার ক্ষতি করবে। এর সাথে যে আঘাত বা ঘৃণা আসে তা ছেড়ে দিন। সর্বশক্তিমানের দিকে ফিরে যান এবং তিনি আপনাকে যেন সুস্থ করতে পারেন সে সুযোগ দিন। অনেকটা হালকা মন দিয়ে আবার পুরোটা অনুভব করুন।
চার. সব কিছুর উপরে উদারতা বেছে নিন। দয়ালু ব্যক্তিরা আরও আলো তৈরি করতে ইতিবাচকতাকে একটি বাতিঘর হিসাবে ব্যবহার করেন। কারণ তারা দেখেছেন নেতিবাচকতা কী করতে পারে। তারা এমন একটি পৃথিবীতে অন্যদের জন্য সময় করেন যা কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সব খারাপ ঝেড়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে শক্তি লাগে।
পাঁচ. অন্যরা যখন এক পদক্ষেপ পিছিয়ে যায় এবং ভাল কিছু ছেড়ে দেয়, সেটিকে অনুসরণ করার জন্য আপনি নিজেকে নেতিবাচকভাবে সরিয়ে নেবেন না। ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার পরিস্থিতির পুনর্বিবেচনা করার জন্যে এটার অনুঘটক হওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আপনার লক্ষ্যে মনোযোগ দিন এবং তা আরও জোরদার করার চেষ্টা করুন। আপনি গন্তব্যে যেতে পারবেন!
ছয়. যখন আপনি নিপীড়িত বা অন্যায়ের শিকার হচ্ছেন তখন তাঁর প্রতি মনোনিবেশ করুন। আপনি কখনোই একা নন। শত্রু জিততে পারবে না। সর্বশক্তিমান সব সময় চূড়ান্তটা করবেন! আর প্রশান্ত নিঃশ্বাস নিতে এবং হাসি-খুশি থাকতে শিখুন। আপনি যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন তার সব কিছুরই সমাধান দেখতে পাবেন। তিনি সব কিছু দেখবেন। আপনার অংশটি আপনি করুন এবং বাকিটি সর্বশক্তিমান করবেন!
দ্রষ্টব্য:
অতঃপর বলেছি, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয় তিনি মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন বহু বাগান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ভয় কর না? (সূরা নুহ: ১০-১৩)
আরও এই যে, তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, তিনি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দান করবেন এবং প্রত্যেক মর্যাদাবান ব্যক্তিকে তার যথাযথ মর্যাদা দান করবেন। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে আমি তোমাদের জন্য মহাদিনের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সূরা হুদ:৩)
তবে যারা তওবা করে, বিশ্বাস ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদের পাপকর্মগুলিকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎকাজ করে, সে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ অভিমুখী হয়। (সূরা ফুরক্বান:৭০-৭১);
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন: যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিযিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূ দাঊদ ১৫২০, ইবনে মাজাহ ৩৮১৯, তাবরানী ৬২৯১)
* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি
