গণহত্যার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে : মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফ্যাসিবাদ সরকারের হয়ে প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা গণহত্যার সাথে জড়িত হয়েছিল তাদের দ্রুত অপসারণ করে সৎ ও পদবঞ্চিতদের দায়িত্বে নিয়ে আসতে নতুন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার (২৬ আগষ্ট ২০২৪) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টি (জাফর) আয়োজিত এ স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রশাসনে আমরা সেই সমস্ত ব্যাক্তিদের দেখতে পাচ্ছি যারা ফ্যাসিবাদ সরকারকে মদদ দিয়েছে, সাহায্য করেছে, মানুষ হত্যার সাথে জড়িত, তাদের চেহারা আমরা আর দেখতে চাইনা। দয়া করে অতি দ্রুত এদের অপসারণ করে যারা দেশপ্রেমিক, যারা কাজ করতে চায়, যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের সুযোগ করে দিন। না হলে এটার জন্য জাতি আপনাদের ক্ষমা করবেনা।’

বিএনপি মহাসচিব আনসার সদস্যদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, এরা সচিবালয়ে ঘেরাও করে আনসার সদস্যদের পোশাক পরে একটা গোলযোগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো। ছাত্ররা সেটা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এটা কিন্তু অশনী সংকেত। অর্থাৎ যারা পরাজিত শক্তি, তারা চায় বিভিন্নভাবে এই বিজয়কে নস্যাৎ করতে। আমরা জনগণকে আহবান জানাবো এই বিষয়গুলোকে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য।

দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, যখন ফ্যাসিবাদ ছিলো, তখন দাঁড়ানোর চিন্তাও করতে পারতেন না। এখন সুযোগ এসেছে, সময় দিন নতুন সরকারকে, তারা নিশ্চই এই বিষয়গুলো দেখবে, সেভাবে কাজ করবে। কিন্তু এভাবে ঘেরাও করে, বাধ্য করে কোন কিছু আদায় করা, জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করবে না।

সবাইকে ধৈর্য ধারনের অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যে সরকার এসেছে তারা অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। তাদেরকে সে সুযোগ দিতে হবে। আমরা তাদের যৌক্তিক সময় দিতে চাই। এবং তাদের নির্বাচন দিতে হবে। সেইজন্য জনগণ অপেক্ষা করছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৫-১৬ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে ছাত্রজনতার অভ্যূত্থানে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন হয়েছে। তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের এই চলে যাওয়াটা আমাদের কাছে নিসন্দেহে বড় বিজয়। আমরা একটা ক্রান্তিকালে আছি। ছাত্র জনতার একটি সফল বিপ্লবের পরে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। আমাদের এই সরকারের প্রতি আস্থা আছে। এই সরকারের প্রধান সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব।

এই সরকারের প্রতি দেশের জনগণের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের পরে এমন একটা নির্বাচন দিবেন, যে নির্বাচন হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। এরমধ্যে যত জঞ্জাল আছে সেগুলো ছাপ করবেন। এতদিন চিন্তিত ছিলাম, প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে কোন কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না। কালকে উনি কথা বলেছেন, জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দিয়েছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, তিনি বলেছেন, কবে নির্বাচন হবে সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে রাজনৈতিক দলের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করবো, প্রধান উপদেষ্টা সে প্রক্রিয়ায় অবশ্যই যাবেন। তিনি রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দলের প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা আর কোন পুলিশি স্টেটে পরিণত হতে চাই না। পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে, প্রতিনিয়ত বলে দিবে, এটা করা যাবে, ওটা করা যাবে না। প্রতিমুহূর্তে মিথ্যা মামলা দিয়ে, তুলে নিয়ে গিয়ে টাকা নিয়ে আমাদের সর্বনাশ করবে, আমাদের ছেলে-মেয়েদের গুলি করে হত্যা করবে-এমনটা ঘটবে না। আমরা চাই, পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলা হোক।

চলমান বন্যা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বন্যা হতে পারে। অতি বৃষ্টিতে বন্যা হবে। কিন্তু এবারের বন্যা ক্রিমিনাল অপরাধ। ভারত যে বাঁধ খুলে দিয়েছে তার ফলে ভাটিতে কি অবস্থা হবে সেটা তাদের অবহিত করা হয়নি। যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। মৃত্যুবরণ করেছে অনেক মানুষ। অপ্রস্তুত অবস্থায় পানির ঢলে ভেসে গেছে বহু মানুষ। তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমি তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফরকে স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আমার ছাত্রজীবনে কাজী জাফর আহমদের নাম শুনি। আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি তখন জাফর ভাই জেলে ছিলেন। একদিন তিনি জেল থেকে বের হলে তার এক বক্তৃতা শুনে আমরা অবাক হয়ে যাই। সে বক্তৃতা শুনে অনেক ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *