১০ উইকেটে জয় বাংলাদেশের

খেলাধুলা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

পেসারদের হাত ধরে তৃপ্তির জয় বাংলাদেশের৷ তাসকিন-এবাদত-হাসান মাহমুদরা বল হাতে যে ভিত্তি গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, তাতে দাঁড়িয়েই ১০ উইকেটের বড় জয় পেলো বাংলাদেশ; উইকেটের বিচারে যা টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়। যেই জয়ে ম্যাচ তো বটে, জেতা হলো সিরিজও; সেই সাথে ধবলধোলাইও করা হয়ে গেলো আইরিশদের।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশী পেসারদের সম্মুখে অসহায় আত্মসমর্পণ করে আয়ারল্যান্ড। তাসকিন-এবাদত-হাসানদের মোকাবেলা করার সাধ্যিই হয়ে উঠেনি তাদের। এই পেসারদের সম্মুখে ৩০ ওভারও টিকতে পারেনি বালবির্নির দল, মাত্র ১০১ রানেই গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ডের ইনিংস। ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেটের দেখা পান হাসান মাহমুদ।

মাত্র ১০১ রানে আইরিশদের আটকে দেয়ার পর জয় পাওয়া শুধু ছিল সময়ের অপেক্ষা। ছোট এই লক্ষ্য তাড়া করতে এক বারের জন্যও পা ফসকায়নি টাইগাররা। সহজ লক্ষ্য সহজেই পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। কে বলবে খানিকটা আগেও একই মাঠে পেসারদের হাতে নাকানিচুবানি খেয়ে হাপিত্যেশ করছিল আয়ারল্যান্ড!

এই জয়ে সম্মুখ থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ২০২১ সালের জুলাইয়ের পর ওয়ানডেতে দেশের মাটিতে অর্ধশতকের দেখা পাবার অপেক্ষায় ছিলেন তামিম। তবে সেই অপেক্ষা আর ফুরোয়নি, তাকে অপরপ্রান্তে অপরাজিত রেখে দলের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন লিটন দাস। যদিও জয়সূচক রানটা আসে অধিনায়কের ব্যাটেই।

দলের জয় নিশ্চিত হবার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৯ম অর্ধশতকটাও তুলে নেন লিটন। রানে থাকা লিটন দাস বরাবরই বড্ড সুন্দর; ব্যাট হাতে প্রতিটি মুহূর্তেই তিনি মনোমুগ্ধকর। আগে ম্যাচে যেখানে থেমেছিলেন, আজ যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন; ৩৮ বলে ১০ চারের মারে করেন অর্ধশতক পূরণ।

কোনো উইকেট না হারিয়েই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। সেই সাথে জয় নিশ্চিত করে ২২১ বল হাতে রেখেই।

এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান নেন আইরিশ অধিনায়ক এন্ড্রু বালবির্নি। তবে শুরুটা তাদের ভালো হয়নি, প্রশ্ন উঠতেই পারে অধিনায়কের সিদ্ধান্ত নিয়ে। দলের কেউই অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা পূরণ করতে পারেনি। পারেননি অধিনায়ক নিজেও।

ব্যাট করতে নেমে হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে পরে আইরিশরা, তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন তাসকিন আহমেদ। আইরিশদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ। নিজের তৃতীয় ওভারে এসে ফেরান স্টিফেন ডুহানিকে। ২১ বলে ৮ রান করে উইকেটে পেছনে মুশফিককে ক্যাচ দেন ডুহানি।

এক ওভার পরে নিজের পঞ্চম ওভারে এসে মাত্র ১ রানের বিনিময়ে এবার হাসান মাহমুদ তুলে নেন জোড়া উইকেট। ফেরান স্টার্লিং ও হ্যারি টেক্টরকে। পল স্টার্লিং ১২ বলে ৭ ও হ্যারি টেক্টর আউট হন ৩ বলে ০ রানে।

হাসানকে দেখে উজ্জীবিত হয়ে উঠেন তাসকিন আহমেদও। নিজের পঞ্চম ও দলীয় ১০ম ওভারে আইরিশ অধিনায়ক বালবির্নিকে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানান। বালবির্নি ফেরেন ১৮ বলে মাত্র ৬ রানে। বিপরীতে পাওয়ার প্লে শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৭ রান যোগ করতে পারে সফরকারীরা।

এরপর আইরিশদের মেরুদণ্ড ভাঙার কাজটা সারেন এবাদত হোসেন, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা আইরিশদের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান তিনি। যদিও পঞ্চম উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল বালবির্নি বাহিনী। স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন লরকান টাকার ও ক্যাম্ফার। এবাদতের এক ওভারে টানা তিন চার হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসটাও পেয়েছিলেন তারা।

তবে সেই এবাদতই কাল হয়ে দাঁড়াল তাদের জন্য ১৯তম ওভারে এসে, কোনো রান না দিয়েই শেষ দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন এবাদত। সেই সাথে ভাঙেন আয়ারল্যান্ডে ইনিংস সর্বোচ্চ ৪২ রানের জুটি। প্রথমে ফেরান ৩১ বলে ২৮ রান করে ফেলা টাকারকে, পরের বলেই সদ্য নামা ডকরেলকে গোল্ডেন ডাক উপহার দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন তার।

টপ অর্ডার ভেঙে দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ, মেরুদণ্ড ভাঙেন এবাদত হোসেন; এবার লেজ ছাঁটতে শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। নিজের সপ্তম ও দলীয় ওভারে ২২তম এভারে এসে কোনো রান না দিয়েই জোড়া উইকেট তুলে নেন তাসকিন। ম্যাকবির্নিকে ৭ বলে ১ রানে নাসুম আহমেদের ক্যাচ বানানোর পর মার্ক অ্যাডেইরের স্ট্যাম্প ভাঙেন তাসকিন।

তাসকিনের জোড়া আঘাতের পর আইরিশদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২২ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৭৯ রান। তবে আয়ারল্যান্ডের ভরসা হয়ে তখনো মাঠে ছিলেন ক্যাম্ফার, তাকে ফেরান হাসান মাহমুদ। ক্যাম্ফার করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৬ রান। শেষ উইকেটটাও তুলে নেন হাসান মাহমুদ, পূরণ করেন ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেটের মাইলফলক।

তবে এর আগে কোনো রকমে তিন অঙ্কের ঘর স্পর্শ করে আয়ারল্যান্ড, থামে ২৮.১ এভারে ১০১ রানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *