হেড স্কার্ফ ও হিজাব বিতর্ক এবং সাম্রাজ্যবাদীদের বাণিজ্যিক স্বার্থ

ধর্ম ও দর্শন লাইফ স্টাইল
শেয়ার করুন

ড. মো. নূরুল আমিন : বর্তমানে পাশ্চাত্য বিশ্বে হিজাব নিঃসন্দেহে আলাপ আলোচনার অন্যতম প্রধান সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারেন যে, নাইন ইলেভেনের পর হিজাব হচ্ছে পাশ্চাত্যদেশে ক্রমবর্ধমান মুসলিম বিদ্বেষের পরিচায়ক। আবার কারুর কারুর মতে ইসলামী পুনর্জাগরণ এবং মুসলিম পরিচয়ের বাহন হচ্ছে হিজাব এবং এ প্রেক্ষিতে এর অভিব্যক্তি নতুন করে পাশ্চাত্য সমাজে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। নাইন ইলেভেনর পর হিজাব বিরোধী প্রচারণা নতুন গতি পেয়েছে সন্দেহ নেই, তবে শুধুমাত্র মুসলিম বিদ্বেষ কিংবা ইসলামী পুনর্জাগরণকে হিজাব বা মাথার স্কার্ফ বিরোধী অভিযানের মূল কারণ হিসেবে গণ্য করা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে কর্পোরেট বিশ্বে হিজাব দীর্ঘকাল ধরেই গায়ের কাঁটা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নারী চরিত্রের শালীনতা ও পবিত্রতার বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানকে কেবলমাত্র শাণিত করতেই সাহায্য করেছে বলে আমার ধারণা। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, স্কার্ফ বা হিজাববিরোধী পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণের চেয়ে অর্থনৈতিক কারণই হচ্ছে মুখ্য; বাস্তবতাও তাই বলে।

হিজাবের প্রশ্নটি আলোচনার আগে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, দুনিয়ার সব অতি নারী সমাজের দৈহিক সৌন্দর্যকে পবিত্র বলে মনে করেছে এবং প্রাথমিক অবস্থায় তারা তাদের ইজ্জত-আবরু সভ্যতার অন্যতম মানদণ্ড বলে মনে করতো। সেটি ব্যবহার করায় তারা বিরোধী ছিল এবং হিজাব তাদের সামাজিক জীবনের অন্যতম অংশ ছিল। কিন্তু কাল পরিক্রমায় মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। ভোগ ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বড় হয়ে দেখা দেয় এবং নারীরা বিপণনের পণ্য হয়ে পড়ে। এটা একদিনে ঘটেনি।

শিল্প বিপ্লবের সূচনালগ্নে অর্থলিপ্সা তাড়িত অর্থনৈতিক মৌলবাদ নীতি-নৈতিকতার আদর্শের মূলে কুঠারাঘাত করে। এর ফলে পাশ্চাত্য জগৎসহ বিভিন্ন দেশে নারীবাদ এবং নারী প্রগতির ইস্যুটি সামনে চলে আসে। সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে নারীদের আন্দোলনের মুখে ঠেলে দেয়া হয় এবং তাদের কর্মক্ষেত্রকে যেমন ঘরের বাইরে নিয়ে আসা হয় তেমনি পুরুষের বিরুদ্ধে তাদের লেলিয়ে দিয়ে স্বাধীন চলাফেরার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। নারীরা স্বাধীন হয়ে উঠেন। পাশ্চাত্য এবং তার বাইরে পরিচালিত নারীবাদী আন্দোলনগুলো এমন একটা সামাজিক সাংস্কৃতিক আবহের সৃষ্টি করে যা সামাজিক কর্মকাণ্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করেছিল। নারীবাদ নারীদের মধ্যে এমন একটা অভিজাত্যের অনুভূতির সৃষ্টি করে যার উৎস ছিলো স্বাধীন ও বন্ধনহীন জীবন। ঘরে থাকা, সন্তান ধারণ ও পালন এবং স্বামীর সংসারকে তারা দাসত্বের কেন্দ্র হিসেবে দেখতে শুরু করে। তারা এটা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয় যে, স্বাধীনতার নামে তাদের প্রকৃতপক্ষে অশ্লীলতা ও যৌন দাসত্বের দিকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং এর পেছনে মুনাফালোভী একটি ব্যবসায়ী তারা কাজ করছে। তারা নারী-পুরুষের মধ্যেকার মোহিনী শক্তিকে স্বার্থকভাবে অপব্যবহারে সফল হবার পর একটি বিশাল ব্যবসায়িক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়ে পড়ে।

এই ব্যবসা হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে যৌন কাজে মহিলাদের অপব্যবহার। অর্থলিপ্সু এই ব্যবসায়ীরা এর মধ্যে যৌনতার এক বিরাট বাজার দেখতে পায়। দামি গাড়ি, বাড়ি, বিলাসবহুল আসবাবপত্র অথবা মূল্যবান পোশাক-পরিচ্ছদের লোভ বা চাহিদা থাকলেও সবার ভাগ্যে তা জুটে না। সামর্থ্যের অভাবে অনেকে চায়ও না। কিন্তু যৌন প্রবৃত্তিও যৌন ক্রিয়ার প্রতি মানুষের না আকর্ষণ সার্বজনীন এবং এমনকি অত্যন্ত ধার্মিক লোককেও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সহজে আকৃষ্ট হয়ে উঠি। ধ্বংস করতে দেখা যায়। নৈতিক ভিত্তি না থাকলে একজন পুরুষ একাধিক নারীকে শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে পেতে চায়। মানব প্রবৃত্তি ও প্রবণতার এই অন্তর্নিহিত দুর্বলতা বিশ্বব্যাপী মানবজীবনের একটি অলঙ্ঘনীয় সত্য। এই সত্যকে ভিত্তি করেই পাশ্চাত্যের মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সেক্স বা যৌনক্রিয়ার বাণিজ্যিকীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ও এ পথে লাখ লাখ কোটি ডলার আয়ের পথ সুগম করে নেয়। নাইটক্লাব, পাব-শো, ডিসকো শো পতিতাবৃত্তি, হোটেল মোটেলে মাসেজিং সার্ভিস, কলগার্ল পদ্ধতি, বুফিলা প্রভৃতি এই ব্যবসারই অঙ্গ। নারী দেহের যৌন আবেদনের পাশাপাশি তারা আন্যান্য পণ্য সামগ্রী বিপণনের কাজেও ব্যবহার করতে শুরু করে এবং নারীরাও মডেল হিসেবে এমনকি উলঙ্গ পোজ দিতে তৈরি হয়ে যায়। বিজ্ঞাপনের পণ্য হিসেবে তারা তাদের বিভিন্ন অঙ্গের আপত্তিকর ব্যবহারেও সক্রিয় সহযোগিতা করতে শুরু করে।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং বিলাসবহুল জীবনের প্রতি মোহ নারীদের বেপরোয়া করে তোলে। পরিবার প্রথা ভেঙ্গে যায়। নারী পুরুষ দুই পার্টনারের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সংকট এতই প্রকট হয়ে উঠে যে, যে কোনও সময় তালাক ও স্বাতন্ত্র্য বাসের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিটি নতুন বিবাহ রেজিস্ট্রি হতে থাকে এবং তালাক, পারিবারিক জীবনের অশান্তি, মারামারি, সন্তানের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে মামলা মোকদ্দমা বিয়ে-শাদির প্রতি তাদের বিতৃষ্ণ করে তোলে। ফলে সমকামিতা, লিভ টুগেদার, বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্ভোগ প্রভৃতি বৃদ্ধি পায়। নারীদের ‘স্বাধীন’ করে পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের এখন বিলাসের সামগ্রীতে পরিণত করেছে। নারীরাও যৌন উচ্ছৃঙ্খলতার মধ্যে স্বাধীনতার আনন্দ ভোগ করছে। তারা প্রকৃত স্বাধীনতার দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা এবং মেকি স্বাধীনতার আড়ালে তাদের দৈহিক ও মানসিক শোষণের মধ্যে তফাৎ খুঁজে পাচ্ছে না। অথবা খুঁজে পাবার জন্য যে প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার দরকার তা তাদের মধ্যে নেই।

নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের কাছেই এমনকি বয়সের ব্যতিক্রম ছাড়াই এই শব্দটি প্রিয় হয়ে উঠে এবং তা অচিরেই শিল্পে পরিণত হয়। ফ্যাশন ডিজাইন একটি লাভজনক ও আকর্ষণীয় পেশায় রূপান্তরিত হয়। এই ফ্যাশনবিদরা নারী দেহের রূপ সুষমাকে তুলে ধরার জন্য তার পোশাককে খাটো করতে শুরু করে। দুনিয়ার সকল দেশে সকল ধর্ম বিশ্বাসে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মাথায় ঘোমটা বা টুপি দেয়াকে একটা সদগুণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মেয়েদের ঘোমটা বা স্বার্থ তাদের মাথা, গ্রীবাদেশ ও বক্ষদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকত এবং তা ঢেকে রাখতো। এটা উন্নত চরিত্র, শিষ্টাচার এবং নামি নিষ্টতার প্রতীক ছিল। দুর্ভাগ্যবশত ফ্যাশনের প্রথম বলিই হচ্ছে এই স্কার্ফ বা মাথার ঘোমটা। এর পরিবর্তে মাথায় উঠে আসে অসংখ্য হেয়ার স্টাইল। এরপর কাঁধ এবং বাহু উন্মুক্ত করা হয় এবং নেকলাইন নিচের দিকে নামাতে নামাতে বক্ষদেশের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে আসে। স্কার্ফ ছোট হতে থাকে এবং মিনি স্কার্ট জাতীয় সারি পোশাক ফ্যাশন জগতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভোগের জন্য পর্যটন ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে। কোন কোন পত্র পত্রিকা ও ম্যাগানিজ সাময়িকীতে নারীর উলঙ্গ ছবি প্রকাশিত হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ার ফটো গ্রাফারের তেলেসমাতিতে কদর্শ মহিলার ছবিও ভোক্তাদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সিনেমা, নাটকের বিজ্ঞাপনে স্নানরতা নারীর দিগম্বরী চিত্রের প্রকাশ নিত্যনৈমিঠিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি শুরু হয় ব্লু ফিল্মে প্রতিক্রিয়ার অম্লীল দৃশ্য যা দাবানলের মতো এখন সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।উপরিউক্ত অবস্থায় নারীবাদের ছত্রছায়ায় লালিত অর্থনৈতিক মৌলবাদীরা পর্দা ও হিজাবের মধ্যে তাদের ধ্বংসের ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পায়। তারা মনে করে যে, যদি হিজাব বা পর্দার প্রত্যাবর্তন ঘটে তাহলে নারীদের নিয়ে তাদের ব্যবসা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে। এই কারণেই যে দেশ, সমাজ, জনগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র জাতিসতা পোশাক আশাকের ন্যূনতম নীতিমালাও (Code) অনুসরণ করে ভোগবাদী শাসক বুদ্ধিজীবীরা তাদের বিরুদ্ধেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। আসলে হিজাবের পবিত্রতায় এমন একটি আকর্ষণ আছে যা সতী-সাধ্বী সকল নারীর কাছেই পছন্দনীয়। ভোগবাদীরা তা বুঝতে পারে বলেই তার প্রয়ার রোধ করতে চায়। তারা জানে যে, নারী তার মুখ ও চুল খুলে তা দেখাতে চায় না। কাজেই হিজাবের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামকে তারা অব্যাহত রেখেছে। মহিলাদের উন্নয়নের পথে তাদের দৃষ্টিতে হিজাব হচ্ছে প্রধান প্রতিবন্ধক। অবশ্য যারা মনে করেন যে উলঙ্গ হবার স্বাধীনতা বিবাহবহির্ভূত অনাচার, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ এবং পারিবারিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকাই নারী উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। তাদের কাছে পর্দা হিজাব, হেড স্কার্ফ ঘৃণার বস্তু হওয়াটাই স্বাভাবিক। মেয়েরা মাথায় স্কার্ফ পরবে এটা তাদের জন্য অপ্রত্যাশিত। তাদের শালীন পোশাককে তারা অসহ্য বলে মনে করবে। এজন্য পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা বের হয়, সামাজিক সার্কেল ও পাবলিক প্লাটফরমে তিজ্ঞ বাকবিতণ্ডা হয় তারা পুরুষদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পোশাকাচ্ছাদিত করতে পারে, এতে আপত্তিকর কিছু থাকে না। কিন্তু প্রচণ্ড শীতের মধ্যে মেয়েদের শরীরের অর্ধেক খোলা রাখার মধ্যে তারা আপত্তিকর কিছু দেখে না। এই পোশাকের ব্যাপারে আরেকটু অগ্রসর হলে আমরা অনেক বৈপরীত্য দেখতে পাই।

সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মোটা কাপড়ের ইউনিফরম এবং মাথা ভারী হেলমেট পরেন। তপ্ত আবহাওয়ায় তাদের কাজ করতে কোনও অসুবিধা হয় না। আদালতের বিচারক এবং আইনজীবীরা শীত গ্রীষ্ম সব সময়ই কালো জুব্বা পরেন, ডাক্তাররা মোটা কাপড়ের সাদা এপ্রোন পরেন; এতে তারা অস্বস্তিবোধ করেন না। হাসপাতালের নার্স এবং গীর্জার পাদ্রী বা নানরা হেড স্কার্ফ পরেন এতে তাদের চলাফেরায় অসুবিধা হয়। না। কিন্তু মহিলারা যদি তাদের দেহকে শালীন করার জন্য অতিরিক্ত কোনও কাপড় ব্যবহার করেন তাহলেই নারীবাদীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পাশ্চাত্য মূল্যবোধে সতিত্বের কোনও স্থান নেই, অর্থনৈতিক মৌলবাদীদের কাছে তো এর কোন মূল্যই নেই। কেননা সতিত্ব টাকা আনতে পারে না।

সতিত্বের প্রতিষেধক হচ্ছে উলঙ্গপনা। এই উলঙ্গপনাকে জনপ্রিয় করার জন্য দু’টি জিনিসের প্রয়োজন, এক তার স্তুতি বা উলঙ্গপনাকে পুরস্কৃত করা, দুই, তার সাথে সম্পৃক্ত লাজ লজ্জাকে ঝেড়ে মুছে ফেলে দেয়া। এই দু’টি কাজ করতে না পারলে সমাজে নারীরা এগুতে পারে না বলেই তারা বিশ্বাস করে। এ জন্য পাশ্চাত্য বিশ্ব অশ্লীলতাকে গৌরবান্বিত করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উলঙ্গ নারীর পেইন্টিং ও তৈলচিত্র লক্ষ লক্ষ ডলারে বিক্রি হয় এবং চিত্রকররা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়। বলা হয়, তাদের এই উলঙ্গ চিত্রে বাস্তবতা এবং সৌন্দর্যের প্রতিফলন ঘটেছে। চারুকলা এবং বাস্তবতার নামে ছায়াছবি, টিভি এবং ভিডিও ফিলো মেয়েদের পূর্ণাঙ্গ উলঙ্গ ছবি প্রদর্শন করা হয়। এর যারা বিরোধিতা করেন তাদের কারো শিল্প ও সত্যের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সত্যকে চিত্রিত করার ফলে যখন টাকা আসতে থাকলো তখন তার প্রশংসা করা হলো, যখন মিথ্যার প্রয়োজন হলো তখন উপন্যাসের বিষয়বস্তু অথবা সৃষ্টিশীল চিত্রকর্ম হিসেবে তার পূজা করা হলো। আবার শোষণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বায়নের কনসেপ্ট যখন বাস্তবায়ন শুরু হয় তখন মুসলিম দেশগুলোকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কেননা ব্যবসা জগতের শক্তিধর খেলোয়াড়রা এটা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে যদি হিজাবের ইসলামী পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ ও ধ্বংস করা না যায় তাহলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে পারে না এবং তাদের ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রাও ভেঙে যেতে বাধ্য এবং অর্থনৈতিক মৌলবাদীরা মুসলিম বিশ্বকে গোমরাহ করার জন্য শক্তিশালী সব রকমের তথ্য মাধ্যমসমূহকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। বলাবাহুল্য, বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট হচ্ছে সবচেয়ে বড়। অবস্থার প্রেক্ষাপটেই বিশ্বায়নের শক্তিশালী। এই ইন্টারনেটে এখন অশ্লীলতা, নগ্নতা ও উলঙ্গপনার ব্যাপক বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। এমন লক্ষ লক্ষ ওয়েব সাইট রয়েছে যার মাধ্যমে উলঙ্গ ছবি, নগ্ন প্রোগ্রাম ও বু ফিচ প্রভৃতি নির্লজ্জভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে। মুসলিম দুনিয়ার অনেক দেশকেই এই ধ্বংসাতাক সংস্কৃতি গ্রাস করে নিয়েছে।

মিশরের নারী ও শিশু বিষয়ক একটি গবেষণা কোন্দর এক জরিপ অনুযায়ী ঐ দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ নারী ব্লু ফিল্ম দেখে আনন্দ পায়। ৭৫ ভাগ নারী নগ্ন দৃশ্য দেখতে ভালবাসে এবং ৮৫ ভাগ নারী মারপিট ও এ্যাকশান ছবি দেখে উদ্বেলিত হয়। একটি মুসলিম দেশের তাহজিব তমদ্দুন ধ্বংসের এই সাফল্য তাদের আগ্রাসী তৎপরতারই সাফল্য। হিজাবের প্রত্যাবর্তন রোধ তাদের প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের অংশ মাত্র। উভয় যুদ্ধে তারা ভেতর বাইরের তাদের অনুগত দাসদের ব্যবহার করছে। এ ব্যাপারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি রাখ-ঢাক না করেই পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, “আমরা সাদা চামড়ার সভ্য লোকেরা এই বিশ্বের ওপর আমাদের স্বাধীন চিত্তাকর্ষক ও সুন্দর আকীদা বিশ্বাস চাপিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হব…। আজকের পর কারো দাড়ি রাখার উপর আর কোন ধরনের কড়াকড়ি থাকবে না। নারীদের আর বোরকায় আবৃত থাকতে হবে না। আজ থেকে সব সময়ের জন্য সকল স্থানের লোক মদ ও নেশাদ্রব্য গ্রহণ করতে পারবে। কিংবা স্বীয় বেডরুমে, যৌন সুড়সুড়িমূলক ছবি দেখতে পারবে এবং তাতে অংশ নিতে পারবে। আমাদের যে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের নগ্ন ও যৌন ছবি তৈরি করে নিকট ভবিষ্যতে তা কোন ধরনের অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই বিশ্বের আনাচে কানাছে পৌঁছে যাবে।”

পাশ্চাত্য শক্তিগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নগ্নতা ও যৌন বাণিজ্য প্রসারের যে মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে তার বিরুদ্ধে হেড স্কার্ফ বিরোধী পদক্ষেপকে যারা খাটো করে দেখেন তারা বিষয়টির আসল তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেন না বলেই আমার বিশ্বাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *