স্বৈরাচারী রাজনীতির দুর্দশা লিখে ‘ম্যান বুকার প্রাইজ‘ পেলেন পল লিঞ্চ

গল্প-উপন্যাস সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

স্বৈরাচারী রাজনীতি, একনায়কতন্ত্র, গৃহযুদ্ধ আর মানুষের দুর্দশার কথা লিখে বিশ্ব সাহিত্যের মর্যাদা সম্পন্ন ‘ম্যান বুকার প্রাইজ‘ জিতলেন আইরিশ কথাসাহিত্যিক পল লিঞ্চ। কল্পনা আর বাস্তবতার মিশেলে রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং বাস্তুচ্যুতির বাস্তবতাকে চিত্রিত করেছেন তিনি।

গল্পটিতে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে একজন মায়ের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়েছে। একটি অত্যাচারী সরকার দ্বারা দেশটি যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তরিত হবার ঘটনাপ্রবাহ। পুলিশ কর্তৃক ‍নিগৃহিত একজন বিজ্ঞানী ও তার পরিবার চার সন্তানের জননী ইলিশ স্ট্যাক’র ভালোবাসা দারুণভাবে বর্ণিত হয়েছে লিঞ্চের ‘প্রফেট সং’ উপন্যাসে।

অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত ভাষায় লেখা উপন্যাসটিতে পাঠক স্বৈরাচারী রাজনীতির বিভ্রান্তিকর দুঃস্বপ্নের মধ্যে নিমজ্জিত একটি দেশের সর্বগ্রাসীবাদ এবং গৃহযুদ্ধের অভিজ্ঞতা লাভ করছেন। আর সে কারণেই ‘প্রফেট সং’ সামাজিক অনুরণনের জন্য বিচারক প্যানেল দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। হত্যা ও গুম সহ সিরিয়ার যুদ্ধ ও শরণার্থী সমস্যা গল্পের পাটাতন তৈরিতে সহায়ক হয়েছে বলে জানিয়েছেন লেখক।

বুকার বিচারক প্যানেলের প্রধান এসি এডিগিয়ান বলেন, আমরা এমন একটি উপন্যাস খুঁজছিলাম, যেটি বর্তমান সময়ের কথা বলবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে তার প্রয়োজনীয়তা বহাল থাকবে। বিচারকদের অভিমত, চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে লিঞ্চের বহুমাত্রিক উপন্যাসটিই বুকারের সবচেয়ে যোগ্য দাবিদার। লেখকের নান্দনিক ভাষার অত্যাশ্চর্য উৎকর্ষতা, আবেগময় গল্প বলার এবং সাহসী হওয়ার একটি ‘জয়’।

প্রকাশকদের জমা দেওয়া ১৬৩টি উপন্যাস হতে চূড়ান্ত পর্বে ছয়জন সাহিত্যিকের তালিকা থেকে লিঞ্চকে বেছে নেয়া হয়েছে। এ বছর বুকার পুরস্কারের চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য পল লিঞ্চের ‘প্রফেট সং’ ছাড়াও মনোনীত হয়েছিল, পল ম্যুরের ‘দ্য বি সিটিং’, চেতনা মারুর ‘ওয়েস্টার্ন লেইন’, পল হার্ডিংয়ের ‘হিজ আদার ইডেন’, জনাথন এসকোফারির ‘ইফ আই সারভাইব ইউ’ এবং সারাহ বার্নস্টেইনের ‘স্টাডি ফর ওবিডিয়েন্স’।

কানাডার সাহিত্যিক এসি এডিগিয়ান পুরস্কার ঘোষণার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রফেট সং’ উপন্যাস হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধসহ সমসাময়িক অনেক সংকটের সঙ্গে মিলে যায়। তবে শুধু সাহিত্যিক গুণাবলির কারণেই সেটি পুরস্কার পেয়েছে।

 

‘প্রফেট সং’ পল লিঞ্চের পঞ্চম উপন্যাস। যে গ্রন্থের জন্য গোটা পৃথিবীতে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে তিনি আরো চারটি উপন্যাস লিখেছেন। আর পঞ্চম উপন্যাসে ইংরেজি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি ‘বুকার প্রাইজ’ হাতে পেলেন।

এক সময়ের চলচ্চিত্র সমালোচক পল লিঞ্চ সাহিত্যের জগতে পা রাখেন ২০১৩ সালে। সেবছর তাঁর ‘রেড স্কাই ইন মর্নিং’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এরপর লিখেছেন ‘বিয়ন্ড দ্য সি’, ‘গ্রেস’ ও ‘দ্য ব্ল্যাক স্নো’। তার তৃতীয় উপন্যাস ‘গ্রেস’ ২০১৮ সালের কেরি গ্রুপ আইরিশ উপন্যাস পুরস্কার এবং ২০২০ সালে আয়ারল্যান্ড ফ্রাঙ্কোফোনি অ্যাম্বাসেডর্স সাহিত্য পুরস্কার জিতেছে। পল লিঞ্চের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য ব্ল্যাক স্নো’ সেরা বিদেশী উপন্যাসের জন্য ফ্রান্সের বই বিক্রেতা পুরস্কার প্রিক্স লিব্র’আ নস জিতেছে।

লন্ডনের ওল্ড বিলিংসগেটে আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ‘বুকার প্রাইজ’ ট্রফি হাতে নিয়ে ৪৬ বছর বয়সী ঔপন্যাসিক পল লিঞ্চ বললেন, বুকার পুরস্কারকে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে যেতে পারায় আমি আনন্দিত।

Paul Lynch, Winner of the 2023 Booker Prize celebrates shortly after the announcement in London, Sunday, Nov. 26, 2023. The Booker Prize is awarded to the best sustained work of fiction written in English and published in the UK and Ireland, in the opinion of the judges. Lynch won with his book ‘Prophet Song’, a dystopian vision of Ireland in the grips of totalitarianism. (AP Photo/Alberto Pezzali)

২৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে ‘ম্যান বুকার প্রাইজ‘ ঘোষণা হল। সেরা হাসি হাসলেন কথাসাহিত্যিক পল লিঞ্চ। বিশ্ব সাহিত্যে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হল। বিজয়ী ঘোষণার পর লেখকের হাতে স্মারক তুলে দেন প্রধান বিচারক এসি এডিগিয়ান। তারপর প্রদান করা হয় ৫০ হাজার ইউরোর অর্থমূল্য।

আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক শহরে ১৯৭৭ সালে জন্ম পল লিঞ্চের। তিনি কো ডোনেগালে বেড়ে ওঠেন এবং এখন বসবাস করেন আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন। এটি লিফি নদীর তীরে লেইনস্টার প্রদেশে অবস্থিত। ডাবলিন ও উইকলো পর্বতমালা বেষ্ঠিত। শহরটি ১৭ শতক থেকে দ্রুত প্রসারিত হয়। ১৮০০ সালে অ্যাক্টস অফ ইউনিয়নের পরে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ছিল। ১৯২২ সালে স্বাধীনতার পর ডাবলিন আইরিশ স্বাধীন দেশের রাজধানী হয়ে ওঠে। পরে এর নামকরণ করা হয় আয়ারল্যান্ড। ডাবলিন সমসাময়িক ও ঐতিহাসিক আইরিশ শিক্ষা, সংস্কৃতি, শাসন ও শিল্পের কেন্দ্র ছিল। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী শহরটিকে ‘গ্লোবালাইজেশন এন্ড ওয়ার্ল্ড সিটিস রিসার্চ নেটওয়ার্ক’ (GAWC) দ্বারা একটি বৈশ্বিক শহর হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়। ‘আলফা মাইনাস’ এর র‍্যাঙ্কিং এটিকে বিশ্বের শীর্ষ ত্রিশটি শহরের একটিতে স্থান দেয়।

পল লিঞ্চ গল্পের প্লট সাজিয়েছেন এই শহরকে ঘিরে। কল্পনায় একনায়কতন্ত্র আর গৃহযুদ্ধ কবলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটা পরিবারের গল্প। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও শরণার্থী সংকটে ভারাক্রান্ত হয়ে গল্পটি তিনি কল্পনা করেন।

উপন্যাসে আয়ারল্যান্ডকে কল্পনা করা হয়েছে। তুলে আনা হয়েছে একটি নব্য ফ্যাসিবাদী জাতীয়তাবাদী সরকারের শাসনের অধীনে অস্থির সময়কালের প্রেক্ষাপট। গল্পে ইউনিয়ন নেতা ও শাসনের অনুভূত শত্রুদের রহস্যজনকভাবে গুম বা অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখা যায়। তারপর শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। দেশের অর্থনীতির পতন ঘটে। এরকম অস্থির সময়কালে সর্বগ্রাসিবাদ থেকে হেফাজত করেন ডাবলিনে চার সন্তানের এক মা। কীভাবে তার পরিবারকে রক্ষা করেছেন তা-ই তুলে ধরা হয়েছে ‘প্রফেট সং’ উপন্যাসে।

পল লিঞ্চ উপন্যাসটি লেখার পেছনে চার বছর সময় ব্যয় করেছেন। ছেলের জন্মের কিছুদিন আগে বইটি তিনি লেখা শুরু করেন। আর লেখার কাজ শেষ হয়েছে, যখন তাঁর ছেলে সাইকেল চালাতে শিখেছে।

লিঞ্চ স্নেহশীল প্রাণবন্ত মানুষ। ব্যক্তিগত জীবনে তার দুটি ছোট বাচ্চা রয়েছে। তার মতে, লেখা শুরু করতে তিনি দেরি করেছিলেন, আগে আয়ারল্যান্ডের অধুনালুপ্ত দ্য সানডে ট্রিবিউনে কাজ করেছেন। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সানডে ট্রিবিউন পত্রিকার প্রধান চলচ্চিত্র সমালোচক ছিলেন এবং সিনেমার উপর সানডে টাইমসের জন্য নিয়মিত লিখতেন।

বুকার জয়ের শর্ত হলো, উপন্যাসটি ইংরেজিতে লেখা এবং যুক্তরাজ্যে বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত হতে হবে। এই পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৫০ হাজার পাউন্ড, বাংলাদেশের হিসাবে যা প্রায় ৭০ লাখ টাকা।

গত বছর ‘দ্য সেভেন মুনস অব মালি আলমেইদা’উপন্যাসের জন্য পুরস্কারটি লাভ করেন শ্রীলঙ্কার সাহিত্যিক শেহান করুণা তিলকা।

‘ম্যান বুকার‘ বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম মর্যাদা সম্পন্ন পুরস্কার। বিগত এক বছরে প্রকাশিত পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের উপন্যাস থেকে বাছাই করা শ্রেষ্ঠটি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এক সময় শুধুমাত্র কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ এবং আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০০৫ সাল থেকে এই পুরস্কার আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্বময় সম্প্রসারিত হয়েছে।

এ পর্যন্ত ম্যান বুকার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বিশ্বখ্যাত অনেক লেখক। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যের পি. এইচ. নিউবি – সামথিং টু আনসার ফর উপন্যাস, ১৯৭০ সালে যুক্তরাজ্যের বার্নিস রুবেনস- দ্য ইলেক্টেড মেম্বার উপন্যাস, ১৯৭১ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ভি এস নাইপল- ইন অ্যা ফ্রি স্টেট ছোটগল্প, ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যের জন বার্গার- জি উপন্যাস, ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্য আয়ারল্যান্ডের জেমস গর্ডন ফারেল- দ্য সেইজ অফ কৃষ্ণপুর উপন্যাস, ১৯৭৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নাডিন গর্ডিমার- দ্য কনজারভেশনিস্ট উপন্যাস ও যুক্তরাজ্যের স্ট্যানলি মিডলটন- হলিডে উপন্যাস, ১৯৭৫ সালে যুক্তরাজ্যের রুথ প্রয়ার ইয়াবভালা- হিট অ্যান্ড ডাস্ট উপন্যাস, ১৯৭৬ সালে যুক্তরাজ্যের ডেভিড স্টোরি- স্যাভাইল উপন্যাস, ১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্যের পল স্কট- স্টেয়িং অন উপন্যাস, ১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্যের আইরিশ মুরডক- দ্য সী উপন্যাস।

১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যের পেনেলোপে ফিটজেরাল্ড- অফশোর দর্শনতাত্ত্বিক উপন্যাস, ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের উইলিয়াম গোল্ডিং- রায়টস অফ পেসেজ উপন্যাস, ১৯৮১ সালে ভারতের সালমান রুশদি- মিডনাইট চিলড্রেন উপন্যাস, ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার থমাস কেনিলি- শিন্ডলার্স আর্ক জীবনী উপন্যাস, ১৯৮৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জন ম্যাক্সওয়েল কুতসি লাইফ অ্যান্ড টাইম অফ মাইকেল কে উপন্যাস, ১৯৮৪ সালে যুক্তরাজ্যের আনিতা ব্রুকনার- হোটেল ডু লাক উপন্যাস, ১৯৮৫ সালে নিউজিল্যান্ডের কেরি হুম- দ্য বোন পিপল রহস্য উপন্যাস, ১৯৮৬ কিংস্লে অ্যামিস- দ্য ওল্ড ডেভিলস্‌ কমিক উপন্যাস, ১৯৮৭ সালে যুক্তরাজ্যের পেনেলোপে লাইভলি- মুন টাইগার উপন্যাস, ১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার পিটার কেরি- অস্কার অ্যান্ড লুসিন্ডা ঐতিহাসিক উপন্যাস।

১৯৮৯ সালে যুক্তরাজ্যের জাপানী কাজুও ইশিগুরো- দ্য রিমেইনস অফ দ্য ডে ঐতিহাসিক উপন্যাস, ১৯৯০ সালে যুক্তরাজ্যের এ. এস. বায়াত- পজেসন: অ্যা রোমান্স ঐতিহাসিক উপন্যাস, ১৯৯১ সালে নাইজেরিয়ান বেন ওকরি- দ্য ফ্যামিস্‌ড রোড উপন্যাস, ১৯৯২ সালে কানাডার মাইকেল ওন্ডাৎজি- দ্য ইংলিশ পেশেন্ট ও যুক্তরাজ্যের ব্যারি উন্সওর্থ- স্যাক্রেড হাঙ্গার ঐতিহাসিক উপন্যাস, ১৯৯৩ সালে যুক্তরাজ্য আয়ারল্যান্ডের রডি ডয়েল- প্যাডি ক্লার্ক হা হা হা উপন্যাস, ১৯৯৪ সালে যুক্তরাজ্যের জেমস কেলম্যান- হাউ লেট ইট ওয়াজ, হাউ লেট উপন্যাস, ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যের প্যাট বার্কার- দ্য গোস্ট রোড যুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস, ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যের গ্রাহাম সুইফট লাস্ট অর্ডারস্‌ উপন্যাস, ১৯৯৭ সালে ভারতের অরুন্ধতী রায়- দ্য গড অফ স্মল থিংস উপন্যাস, ১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের ইয়ান ম্যাক্‌ইউয়ান- অ্যামস্টারডাম উপন্যাস।

১৯৯৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জন ম্যাক্সওয়েল কুতসি- ডিসগ্রেস উপন্যাস, ২০০০ সালে কানাডার মার্গারেট অ্যাটউড- দ্য ব্লাইন্ড অ্যাসাসিন ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০০১ সালে যুক্তরাজ্যের পিটার কেরি- ট্রু হিস্ট্রি অফ দ্য কেলি গ্যাং ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০০২ সালে কানাডার ইয়ান মার্টেল- লাইফ অফ পাই রোমাঞ্চকর উপন্যাস, ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার ডিবিসি পিঁয়ের- ভার্নন গড লিটল ব্ল্যাক কমেডি, ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যালান হলিংঘার্স্ট- দ্য লাইন অফ বিউটি ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্য আয়ারল্যান্ডের জন ব্যানভিল- দ্য সী উপন্যাস, ২০০৬ সালে ভারতের কিরণ দেশাই- দ্য ইনহেরিটেন্স অফ লস উপন্যাস, ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্য আয়ারল্যান্ডের অ্যান এনরাইট- দ্য গেদারিং উপন্যাস, ২০০৮ সালে ভারতের অরবিন্দ আদিগা- দ্য হোয়াইট টাইগার উপন্যাস।

২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের হিলারি ম্যান্টেল- উলফ হল ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের হাওয়ার্ড জ্যাকবসন- দ্য ফিঙ্কলার কোশ্চেন উপন্যাস, ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যের জুলিয়ান বার্নস- দ্য সেন্স অফ অ্যান এন্ডিং উপন্যাস, ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের হিলারি ম্যান্টেল- ব্রিং আপ দ্য বডিজ উপন্যাস, ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের এলিয়ানর ক্যাটন- দ্য লুমিনারিজ উপন্যাস, ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার রিচার্ড ফ্লানাগান- দ্য ন্যারো রোড টু দ্য ডিপ নর্থ উপন্যাস, ২০১৫ সালে জ্যামাইকার মারলন জেমস- অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ সেভেন কিলিং উপন্যাস, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পল বিটি- দ্য সেলআউট ব্যঙ্গধর্মী উপন্যাস, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ সান্ডার্স- লিংকন ইন দ্য বার্ডো ঐতিহাসিক উপন্যাস, ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যানা বার্নস- মিল্কম্যান উপন্যাস, ২০১৯ সালে কানাডার মার্গারেট অ্যাটউড- দ্য টেস্টামেন্টস উপন্যাস ও যুক্তরাজ্যের বার্নার্ডাইন এভারিস্টো- গার্ল, উইমেন, আদার উপন্যাস, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডগলাস স্টুয়ার্ট- শাগী বেইন উপন্যাস, ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেমন গ্যালগট- দ্য প্রমিস উপন্যাস এবং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার শেহাম করুনা তিলাকা- দ্য সেভেন মুনস অফ মালি আলমেদা উপন্যাস বুকার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

বাংলাদেশী পাঠকের কাছে ‘ম্যান বুকার‘ পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচিতদের মধ্যে রয়েছেন, ২০০১ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী প্রখ্যাত লেখক স্যার ভিএস নাইপল। ‘ইন আ ফ্রি স্টেট’ এর জন্য তিনি ম্যান অব বুকার অর্জন করেন। পিস অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে ডেভিড গ্রুসম্যানকে সবাই চিনে। ব্যতিক্রমী একটি উপন্যাস লিখে ২০১৭ সালে বুকার প্রাইজ লাভ করেন তিনি। ২০১০ সালে ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে অবস্থান ও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশের হাতে মারও খেয়েছেন ইসরায়েলের লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ডেভিড গ্রুসম্যান।

অরুন্ধতী রায় ভারতীয় ঔপন্যাসিক, বুদ্ধিজীবী এবং পিস অ্যাকটিভিস্ট। তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে আছেন তার উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ এর জন্য। ১৯৯৭ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী হৈচৈ পড়ে যায়। ১৯৯৮ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার লাভ করেন উপন্যাসটির জন্য। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি পরিবেশগত সংশ্লিষ্টতা এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়েও কাজ করেন। ভারতের আসাম রাজ্যের শিলংয়ে অরুন্ধতী জন্মগ্রহণ করেন।

সালমান রুশদি একজন ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তার দ্বিতীয় উপন্যাস মিডনাইটস চিলড্রেন ১৯৮১ সালে বুকার প্রাইজ অর্জন করে। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তার লেখা জঘন্য বিতর্কিত বই স্যাটানিক ভার্সেস বিশ্বের অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। বইটি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। এর প্রতিবাদ হয় বিশ্বের সকল মুসলিম দেশে। বাংলাদেশে সহ বিভিন্ন দেশে বইটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।

আরব বিশ্বের প্রথম সাহিত্যিক হিসেবে ২০১৯ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার জিতেছেন জোখা আলহারথি। মাতৃভূমি ওমানের রূপান্তর বিষয়ক উপন্যাস ‘সেলেস্টিয়াল বডিস’র জন্য এই পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বৈচিত্র্যময় আরব সংস্কৃতির নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে এই উপন্যাসে। বিচারকরা আলহারথির ঐশ্বর্যময় কল্পনাশক্তি, লেখার চিত্তাকর্ষক শৈলি এবং কাব্যিক অন্তর্দৃষ্টির প্রশংসা করেন।

উপন্যাসের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে আল-আওয়াফি গ্রামকে ঘিরে। একটি সনাতনী সমাজ থেকে ঔপনিবেশ-উত্তর যুগে যে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল ওমান, তিন বোনের মাধ্যমে সেই পরিবর্তন, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ওমানিরা কীভাবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে তা দেখাতে চেয়েছেন জোখা আলহারথি।

* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *