সুইডেনে কুরআন পুড়িয়ে ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টির পাঁয়তারা

সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

গত ২১ জানুয়ারি সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পবিত্র কুরআন পোড়ানো মতো ঘৃণ্য ঘটনা আবার সংঘটিত হয়েছে। উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দল হার্ড লাইনের বিতর্কিত নেতা রাসমুস পালুদান পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে কুরআনের একটি কপিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এর আগে প্রায় এক ঘণ্টা ইসলাম ধর্ম ও সুইডেনের অভিবাসনব্যবস্থাকে আক্রমণ করে গালিগালাজপূর্ণ বক্তব্য রাখেন তিনি। এ সময় প্রায় ১০০ জন সমর্থক তার পাশে ছিল। মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেনের সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে তুরস্কের আপত্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে দেশটির উগ্র ডানপন্থীরা। আর সেখানেই বিক্ষোভের নামে পবিত্র কুরআন পোড়ানো হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসে কুরআন পোড়ানোর ‘সফর’ ঘোষণা করে ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন পালুদান। তার ওই কর্মসূচি ঘিরে সুইডেনে ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি হয় (আলজাজিরা ইংলিশ, দি গার্ডিয়ান, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩)।

মূলত ২০২২ সালের জুনে সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে তুরস্কের সাথে চুক্তি করে ফিনল্যান্ড-সুইডেন। ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কুর্দি সন্ত্রাসীদের কোনো প্রশয় দিতে পারবে না এই দুটি দেশ। একই সাথে ফিনল্যান্ড-সুইডেনে বসবাসরত পলাতক কুর্দি সন্ত্রাসীদের তুরস্কের হাতে তুলে দিতে হবে। তবে সুইডেন সেসব শর্ত ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সামরিক জোট ন্যাটোতে তুরস্ক যোগ দেয় ১৯৫২ সালে। নিয়মানুযায়ী মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই জোটে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের সম্মতির প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে এই জোটে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে তুরস্কের। স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে কুরআন পোড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে সুইডেনের ন্যাটোভুক্তি অনুমোদন করবে না বলে তুরস্ক ইঙ্গিত দিয়েছে (প্রাগুক্ত)।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এক ভিডিওতে রাসমুস বলেন, ‘ইসলাম ও মুসলিমরা হচ্ছে শত্রু। এই পৃথিবীতে যদি একজন মুসলিমও না থাকে তা হলে খুব ভালো হবে, তা হলে আমরা আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাব।’ ডেনমার্কে বর্ণবাদী ভাষণের কারণে ২০১৯ সালে ১৪ দিনের জেল হয় পালুদানের। এর এক বছর পর ১৪ ধরনের বর্ণবাদী, মানহানি ও বিপজ্জনক ড্রাইভিংয়ের কারণে আরো জেল হয় পালুদানের। সুইডেনের স্ট্রাম কুর্স কট্টরপন্থী দল ডেনমার্কের ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে একটি আসনেও জয় পায়নি। বর্তমানে পালুদান আগামী ২০২৩ সালের জুনে নির্বাচনে ফের লড়বেন বলে পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তার প্রার্থিতার জন্য যথেষ্ট স্বাক্ষর নেই।

এটি সুইডেনের মতো সার্বভৌম দেশের নাগরিক আইন ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী। ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলমানদের অনুভ‚তিতে ক্ষুব্ধ করার মতলবে কতিপয় চরমপন্থী পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ করে। এটিকে উসকানিমূলক অপরাধ বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। ধর্ম ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে চরমপন্থা ও ঘৃণাকে পরাস্ত করার বৈশ্বিক প্রচেষ্টার বিপরীতে এ হামলাকে শান্তিপ্রিয় মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ধরনের বিদ্বেষপ্রসূত ঘটনা মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাকে জোরদার করার কথা বলছেন বোদ্ধামহল।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গবেষক ড. হামদান আল-শেহরি বলেন, ‘সন্ত্রাসী ও অপরাধী যারা অন্য ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সম্মান করে না এবং যারা মতবিরোধকে উসকে দিতে চায় এবং বিশ্বকে ধর্মীয় যুদ্ধে টেনে আনতে চায়, তাদের কর্মতৎপরতার পরিণতি যাই হোক, কোনোক্রমে ঘৃণা প্রকাশের অবারিত সুযোগ দেয়া উচিত নয়। অতীতে মুসলমানদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রথাগত বা মিডিয়ার মাধ্যমে একটি ভয়ঙ্কর প্রচারণা দেখেছি; মুসলমানরা বিশ্বের জনসংখ্যার ২০০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। এসব প্রচারাভিযান প্রকাশ্যে প্রতিক‚লভাবে পরিচালিত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দেয়া হয়।’ মুসলমানরা সবসময় সংস্কৃতি ও ধর্মকে সম্মান করতে আগ্রহী (আরব নিউজ, জেদ্দা, ১৯ এপ্রিল, ২০২২)।

পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় বিশ্বের দেশে দেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এরই মধ্যে ন্যক্কারজনক এ ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে তুরস্ক, সৌদি আরব, জর্দান, আরব আমিরাত, সোমালিয়া ও কুয়েত। নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তানও। মুসলিমবিদ্বেষী এ নেতা কুরআন পোড়ানোর পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দেয় তুরস্ক। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা আমাদের পবিত্র গ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলায় তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে এমন ইসলামবিরোধী কাজের অনুমতি দেয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটি মুসলিমদের নিশানা এবং আমাদের পবিত্র মূল্যবোধের অবমাননা করে।’ কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে তুরস্ক সুইডিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একটি আসন্ন সফর বাতিল করেছে। ওই সফরে সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। পুরনো সব সদস্যের সমর্থন ছাড়া এ পশ্চিমা সামরিক জোটে কেউ নতুন সদস্য হতে পারে না। তাই সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য হতে হলে অবশ্যই তুরস্কের সম্মতি আদায় করতে হবে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাকস্বাধীনতার আড়ালে সারা বিশ্বের মুসলমানদের পবিত্র মূল্যবোধের অবমাননার ঘটনায় বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইসলাম শান্তি ও সহনশীলতার ধর্ম উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই ধর্মের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হবে এবং সম্মান করতে হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক টুইটে বলেছেন, ‘সুইডেনে পবিত্র কুরআন অবমাননার মতো জঘন্য কাজের নিন্দা জানাতে কোনো শব্দই যথেষ্ট নয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিশ্বের দেড় শত কোটি মুসলিমের ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করা যায় না। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’ নিন্দা জানিয়েছেন খোদ সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। টোবিয়াস বিলস্ট্রম এক টুইটে ইসলামবিদ্বেষে উসকানিকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘সুইডেনে মতপ্রকাশের সুদূরপ্রসারী স্বাধীনতা রয়েছে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, সুইডিশ সরকার বা আমি প্রকাশ করা এ মতামতকে সমর্থন করি।’

আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, বাকস্বাধীনতা, মানবতা, সভ্যতা, মূল্যবোধের কথা মুখে বলা হলেও অন্য ধর্মের সংস্কৃতি বা ধর্মীয় প্রতীকগুলোকে অবমূল্যায়ন করা বা তাদের উপহাসের শিকার করা রীতিমতো ফ্যাশনে পরিণত করা হয়েছে। অতীতে স্বাধীন মতপ্রকাশের এ ব্যাখ্যাটি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ তারিখে ডেনিশ পত্রিকা ‘জিলান্ডস পোস্টেন’-এ প্রকাশিত নবী মুহাম্মদের ১২টি ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল। ১০ জানুয়ারি, ২০০৬-এ, নরওয়েজিয়ান পত্রিকা ম্যাগাজিনেট, জার্মান সংবাদপত্র ডাই ওয়েল্ট, ফরাসি সংবাদপত্র ফ্রান্স সোয়ার এবং ইউরোপের অন্যান্য সংবাদপত্র ছবিগুলো পুনঃপ্রকাশ করে। তাদের প্রকাশনা মুসলমানদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুভ‚তিতে আহত করেছিল এবং মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক স্তরে ব্যাপক নিন্দার সম্মুখীন হয়েছিল। মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ উসকে দেয়ার আরেকটি ধরন ছিল উপাসনালয়ে আক্রমণ, যেমন ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদ সন্ত্রাসী হামলা; ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্ট একজন অস্ট্রেলিয়ান সন্ত্রাসী। সে দুটি মসজিদে সে ৫১ জনেরও বেশি মুসলমানকে হত্যা করে। এ ধরনের বিদ্বেষমূলক কর্ম শান্তি, সহাবস্থান ও সভ্য বিশ্বের মূল্যবোধ প্রকাশ করে না। বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে তারা মুসলমানদের অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে (প্রাগুক্ত)। প্যারিসে ‘চার্লি হেবডো’ ম্যাগাজিন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে অবমাননা করে কার্টুন ছাপে। এটি ২০০ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

একটি সঙ্ঘবদ্ধ গোষ্ঠী ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম, নবী মুহাম্মদ সা:-কে অবমাননা ও কুরআন পোড়ানোর মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। আসলে ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ধর্মের অগ্রযাত্রা রোধ করা যায় না। এটি নিচু মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এতে সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অসম্ভব করে তোলে। ২০১৭ সাল থেকে ডেনমার্কে কুরআনকে অপবিত্র করা বৈধ। হার্ড লাইন পার্টির (ডেনিশ : স্ট্রাম কুর্স) একটি নিয়মিত ঘটনা হলো, কুরআন পোড়ানো। ২০০৫-এর মাঝামাঝি সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবিরে মুসলিম বন্দীদের সামনে কুরআনের ইচ্ছাকৃত অবমাননা করার অভিযোগ, কিউবায় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয় এবং দাঙ্গার দিকে পরিচালিত করে। একটি মার্কিন সামরিক তদন্ত কমিশন মার্কিন কর্মীদের দ্বারা কুরআন অপবিত্রতার চারটি ঘটনা নিশ্চিত করেছে (যার মধ্যে দুটিকে ‘অনিচ্ছাকৃত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে) এবং মুসলিম বন্দীদের দ্বারা নিজের ধর্মীয়গ্রন্থ অপবিত্র করানোর ১৫টি ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। সিবিসি নিউজের মতে, ‘বিবৃতিটি কেন আটক ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব পবিত্র গ্রন্থের অপব্যবহার করতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।’ গুয়ানতানামো বে ঘাঁটি, আরো মুসলিম অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে।

২০১০ সালে ডোভ ওয়ার্ল্ড আউটরিচ সেন্টারের খ্রিষ্টান যাজক টেরি জোনস ফ্লোরিডার গেইনসভিলে একটি গির্জায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে একটি কুরআন পোড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করা হলে তা আন্তর্জাতিক নিন্দার কারণ হয়ে ওঠে। তিনি পরে পরিকল্পনা বাতিল করেন; তবে ২০ মার্চ, ২০১১-এ তিনি একটি কুরআন পোড়ানোর তদারকি করেন। জবাবে আফগানিস্তানে মুসলমানরা প্রতিবাদ জানায় এবং সংঘর্ষে ১২ জন নিহত হয়। ২০১১ সালে লুই থেরাক্স ডকুমেন্টারি আমেরিকাস মোস্ট হেটেড ফ্যামিলি ইন ক্রাইসিসে, ওয়েস্টবোরো ব্যাপটিস্ট চার্চের মেগান ফেলপস এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এবং প্রকাশ্যে কুরআনের একটি কপি পুড়িয়েছে। ২০১২ সালের ফেব্রæয়ারিতে, মার্কিন সামরিক বাগরাম বিমান ঘাঁটিতে কুরআন অবমাননার জন্য আফগানিস্তানের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ‘আমেরিকার মৃত্যু হোক’ ¯স্লোগান দেয় এবং মার্কিন পতাকা পুড়িয়ে দেয়। এতে অন্তত ৩০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। এতে ছয় মার্কিন সৈন্য প্রাণ হারায়। ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই, নরম্যান্ডি চার্চে হামলার কয়েকদিন পর, মাল্টার মেটার দেই হাসপাতালের প্রার্থনা কক্ষে কুরআনের বেশ কয়েকটি কপি অপবিত্র করা হয়েছিল। পবিত্র ধর্মগ্রন্থের ভেতরে শূকরের মাংসের টুকরো রাখা হয়েছিল। হামলাকারীরা ক্যাথলিক ধর্মযাজক জ্যাক হ্যামেলের একটি ছবিও রেখে যায় যার ক্যাপশন ছিল ‘ভিকটিম অব ইসলাম’। এ ছাড়া বিভিন্ন মুসলিম দেশে কে বা কারা রাতের অন্ধকারে নালা নর্দমা ও ডোবায় পবিত্র কুরআন নিক্ষেপ করে। সৌদি আরবের তায়েফে এ রকম বহু ঘটনা সংঘটিত হয়।

২০১৭ সালের পিউ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনে সুইডেনের ১০ মিলিয়ন মোট জনসংখ্যার ৮.১ শতাংশ (প্রায় ৮,১০,০০০) মুসলিম বলে প্রকাশ করা হয়েছে। আধুনিক সুইডেনে প্রথম নিবন্ধিত মুসলিমগোষ্ঠী ছিল ফিনিশ তাতার যারা ১৯৪০-এর দশকে ফিনল্যান্ড এবং এস্তোনিয়া থেকে অভিবাসিত হয়েছিল। ১৯৬০-এর দশকে অভিবাসন সুইডেনে ইসলাম ছড়িয়ে দেয়ার প্রধান চালিকাশক্তি। ১৯৭০-এর দশকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অভিবাসনের সাথে সুইডেনে ইসলামের লক্ষণীয় উপস্থিতি শুরু হয়। সাবেক যুগোস্লাভ প্রজাতন্ত্র থেকে এবং সম্প্রতি সোমালিয়া থেকে অভিবাসীদের আরো ঢেউ সুইডেনে এসেছিল। ইরাক, সোমালিয়া ও আফগানিস্তান থেকে আসা অভিবাসীরাই সুইডেনে বসতি স্থাপন করে। সুইডেনে বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। ১৯৮৪ সালে মালমা মসজিদ এবং পরে ১৯৯৫ সালে উপসালা মসজিদ নির্মিত হয়। ২০-এর দশকে আরো মসজিদ নির্মিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে স্টকহোম মসজিদ (২০০০), উমিয়া মসজিদ (২০০৬) ও ফিট্টজা মসজিদ (২০০৭), স্টকহোমে বাংলাদেশ জামে মসজিদ, হ্যানিং (দক্ষিণ স্টকহোম) ব্র্যান্ডবার্গেন মসজিদ, স্কোগাস মসজিদ, গোথেনবার্গ (হিসিঙ্গেনে) তুর্কি মসজিদ ও গুরাবা মসজিদ অন্যতম। সৌদি আরব ও লিবিয়া সরকার সুইডেনের কয়েকটি বৃহত্তম মসজিদ নির্মাণে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে। ২০১৬ সালে গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ এসওএম জরিপে ৫৩ শতাংশ সুইডিশদের মধ্যে ইসলামের ধারণা নেতিবাচক যেখানে ৭ শতাংশ ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে, ৪০ শতাংশ অমীমাংসিত। সুইডেনের বিভিন্ন স্থানে ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, মুসলিম সোসাইটি, মহিলা সমিতি, দাওয়াহ কমিটি ধর্মপ্রচার, কুরআন শিক্ষা, কমিউনিটি উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। সুইডেনে বসবাসকারী মুসলমানরা রাষ্ট্রীয় আইন ও বিধি বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও নিয়ম-রীতি মেনে চলতে অভ্যস্ত। যে কোনো মূল্যে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। চরম উসকানির মুখেও তার সহনশীলতা ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।

ইসলামের পবিত্রতা ও মূল্যবোধের অবমাননাকারী এই ঘৃণ্য কাজের অনুমতি দেয়া সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। এটি একটি বিদ্বেষমূলক অনুশীলন ছাড়া আর কিছুই নয়, যা ঘৃণা ও বর্ণবাদকে প্রচার করে এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের এজেন্ডা পরিবেশন করে। বিশ্বের বিভিন্ন অংশের ধর্মীয় এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে বোঝাপড়ার পরিবর্তে বৈষম্য, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করবে। ঘৃণা ও চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করে সংলাপ, সহনশীলতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বের নানা জাতিগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *