বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান স্বাধীনতার পর দেশের জন্য অন্যতম সর্বোচ্চ অর্জন। এই সংগ্রামে দুই হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন এবং ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন; সেই রক্তের ঋণ পরিশোধের জন্য জাতি পরবর্তী সরকারের ওপর অপেক্ষা করবে না। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা উচিত এবং তার আগে জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়া জরুরি। এ দাবি শুধু জামায়াতের নয়, দেশপ্রেমিক জনতারও দাবি; এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বাদ জুমআ নগরীর কোর্টপয়েন্টে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। পরে সেখানে থেকে একটি বিশাল গণমিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা পয়েন্টে শেষ হয়। মিছিলে সিলেট মহানগর ও বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের হাজারো জনশক্তি অংশ নেন।
সমাবেশে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আরও বলেন, জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবির কারণে তাদের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে যে তারা নির্বাচন চাইছে না। অথচ এক বছর আগে তারা ২০০ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। বড় দলগুলোর একটি আসনে এখনও ১০ জনের অধিক প্রার্থী কাজ করছেন-এ ধরনের অভিযোগও উঠেছে। তিনি বলেন, কেউ পিআর পদ্ধতি বুঝতে পারছেন না; সময় গেলে সেটাও বোঝা যাবে। তাঁর ভাষ্য-কেয়ারটেকার পদ্ধতির মতো পিআরও এ দেশে কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য হবে। ৫-দফা দাবি না মানলে ফের গণআন্দোলনের সূচনা হবে।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিন যৌথভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াত কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা আমীর এবং সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান।
অন্যান্য উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন- জেলা নায়েবে আমীর (সিলেট-২ আসনে প্রার্থী) অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, সিলেট-৩ আসনের প্রার্থী ও সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি এডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট জুবায়ের আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে। ওই কমিশন গত ৮ মাস ধরে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করেছে এবং ৮৪টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি রয়েছে। এছাড়া সংবিধানে জামায়াত প্রস্তাবিত জুলাই অধ্যাদেশ জারির ব্যাপারেও একমত হয়েছে- এজন্য তিনি দ্রুত গণভোট আয়োজনের দাবি রাখেন।
পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, পিআর হলে বেশি ভোট কাস্ট হবে, মনোনয়নবাণিজ্য বন্ধ হবে এবং জনগণের ভোটের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত হবে। তিনি দাবি করেন, স্বৈরশাসকের সাথে থাকা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করা উচিত এবং আগামী নির্বাচন সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে আয়োজন করা হবে-নাহলে ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা পূরণ হবে না।
বিশেষ অতিথি মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, জনগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলকে ক্ষমতায় এনেছে, এবার তারা দাঁড়িপাল্লাকে বিজয়ী করতে চায়। তিনি পুনরায় জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা মেনে নিয়ে ফেব্রুয়ারী মাসে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করার আহ্বান জানান এবং সতর্ক করে বলেন— অন্যথায় ছাত্র-জনতার আবার রাস্তায় নামার সম্ভাবনা রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, দলের চেয়েও দেশ বড়, তাই ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য জাতিকে প্রতারিত করা চলবে না। তিনি বলেন, যেনতেন নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ- জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা মেনে নিয়েই সরকারকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়েই সরকারকে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।