সিলেটে ভয়াবহ বন্যা; দেড় যুগে এমন বন্যা দেখেনি সিলেটবাসী

সময় সংবাদ সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

সিলেটে উজানের ঢল, টানা বৃষ্টিতে বন্যার স্রোতে ভেসে গেছে ঘর, আসবাবপত্র, গবাদিপশু৷ বাড়ছে বন্যার পানি, সেইসঙ্গে বাড়ছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। হঠাৎ আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলো বেশি বন্যা কবলিত হয়েছে৷ সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাটের বাসিন্দারা দুর্বিষহ দিন পার করছেন৷ সড়কে বন্যার পানি থাকায় মানুষের যাতায়াত বন্ধ৷সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর পাশাপাশি এখন নগরেও বন্যার পানি ঢুকছে।

সিলেটের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেটের ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় এলাকাবাসীরা দুর্বিসহ দিন পার করছেন৷তাই ৩২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷বর্তমানে ৯৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭ হাজার ৩৪৯ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছেন৷আশ্রিতদের শুকনো খাবার সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। সিলেট মহানগর ও উপজেলাগুলোতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১৩ লাখ টাকা, ২৩৪ মেট্টিকটন চাল, ৩ হাজার ৯৯ প্যাকেট শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে৷

সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা দুর্বিসহ দিন পার করার খবর নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন এালাকায় ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে৷নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে।

খবর নিয়ে আরও জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জের কাঁঠালবাড়ি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় থানাবাজার আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও সেখানেও স্বস্তিতে নেই মানুষ৷ এক প্যাকেট চিড়া ও গুড় সাহায্য পাচ্ছেন৷

মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর স্কুল বন্ধ ছিল৷ এখন হঠাৎ বন্যার কারণে আবারও স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে৷

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে খবর নিয়ে জানা যায়, এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ৩৪টি বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে বিভিন্ন এলাকায়৷ তাতে সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পর এবার বিয়ানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷

২০ মে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুমরা নদীর পানি কানাইঘাটে বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৩৮ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ষোল সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল৷ তবে গত এক দিনে ওই তিন পয়েন্টেই সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে৷

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে৷ আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও হবিগঞ্জ জেলার নদীর পানির সমতল কিছু স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে৷

এই সময়ে সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে, তবে সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে৷বন্যাকবলিত মানুষের সবচেয়ে বড় সংকট খাবার পানি৷ টিউবওয়েল পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার উপায় নেই৷ বিদ্যুৎ ও খাবার পানিও নেই৷জীভন বাঁচাতে বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে হাওরের পানিই খাচ্ছেন জনসাধারন।

উপজেলাগুলোর মত সিলেট মহানগরেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বিদুৎ না থাকায় পানির সংকটে পড়েছেন নগরবাসী নিচু এলাকায় ঘরের ভেতর হাঁটু পানির কারণে রান্না বন্ধ৷বন্যার পানি দুর্গন্ধ ছড়ানোয় ভোগান্তিতে পড়ে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়ছেন নগরবাসী৷

সবচেয়ে দুর্বিসহ দিন পার করছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকার বস্তির মানুষজন৷ তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, এত দ্রুত পানি বাড়তে আগে কেউ কখনও দেখেননি৷

জানা যায়, এর আগে ২০০৪ সালে এমন বন্যা হয়েছিল। এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় কি না, সেই শঙ্কায় আছে সিলেটবাসী। আশ্রয় কেন্দ্রেও বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকটের কথা বলছেন আশ্রয়গ্রহণকারীরা। ‘চোখে অন্ধকার’ দেখছেন পানিবন্দি মানুষজন। এখন নিরাপদ আশ্রয়ের পাশাপাশি বন্যাকবলিত মানুষজনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সহায়তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *