দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা

আন্তর্জাতিক সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি বিদায় না নিতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে নতুন রোগ ‘মাঙ্কিপক্স’। এখন পর্যন্ত আফ্রিকা, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার কয়েকটি দেশে নতুন এ রোগটি শনাক্ত হয়েছে।

বিবিসর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ১১টি দেশে মোট ৮০ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে ডাব্লিউএইচও।

গত ১৮ মে, বুধবার যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও পর্তুগালে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সর্বশেষ গত ২০ মে, শুক্রবার ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন, বেলজিয়াম, জার্মানি, সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়ায় মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ২০ মে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমবারের মতো মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি ইউরোপ থেকে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কানাডাতেও দুজনের মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।

ইউরোপের দেশ সুইডেনে একজন এবং ইতালিতে একজন রোগী শনাক্ত হন। সুইডিশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের দেশের ওই নাগরিক কীভাবে আক্রান্ত হলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, একজন রোগী মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি কানাডা সফর করেছেন।

এছাড়া বুধবার পর্তুগালে পাঁচজন ও স্পেনে সাতজন শনাক্ত হয়েছেন। ইউরোপে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে কোনো অনুমোদিত টিকা নেই। স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইসের তথ্য অনুযায়ী, প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় স্পেন কর্তৃপক্ষ গুটিবসন্তের টিকা কিনেছে। গুটিবসন্তের মতো একই ভাইরাস পরিবারের সদস্য মাঙ্কিপক্স।

মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দুর্গম এলাকায় মাঙ্কিপক্স খুব পরিচিত রোগ। তবে পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে এ রোগের উপস্থিতি বিরল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হওয়ার আগে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এর আগে গত ৭ মে যুক্তরাজ্যে প্রথম মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তাই যুক্তরাজ্য সরকার মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য গুটিবসন্তের টিকা কিনে রেখেছে। সম্প্রতি নাইজেরিয়া ভ্রমণ করেছিলেন ওই ব্যক্তি। পরে তার মাধ্যমে এটি আরো ছড়িয়েছে বলে জানায় ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সংস্থা (ইউকেএইচএসএ)। ইতোমধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়েছে।

মাঙ্কিপক্স এর লক্ষণগুলো কী কী?
প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফুলে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা এবং সাধারণ ক্লান্তি। জ্বর সারা শুরু হলে ফুসকুড়ি তৈরি হতে পারে, প্রায়শই তা মুখমণ্ডল থেকে শুরু হয়। তারপর শরীরের অন্যান্য অংশে, সাধারণত হাতের তালু এবং পায়ের তলায় ছড়িয়ে পড়ে।ফুসকুড়িগুলোতে খুব চুলকানি হতে পারে। বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যায়ে খোসা গঠিত হতে পারে। খোসাটি পরে পড়ে যায়। এর ক্ষত থেকে দাগ থেকে যেতে পারে। তবে সংক্রমণটি সাধারণত নিজে থেকেই চলে যায়। এটি ১৪ থেকে ২১ দিন স্থায়ী হয়। এ ভাইরাসের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে – পশ্চিম আফ্রিকান এবং মধ্য আফ্রিকান।

মানুষ কীভাবে মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত হতে পারে?
কেউ সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাসটি ত্বকের ক্ষত, শ্বাসতন্ত্র বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এটিকে আগে যৌনবাহিত সংক্রমণ হিসাবে বর্ণনা করা হয়নি, তবে যৌনতার সময় সরাসরি শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।

সংক্রমিত প্রাণী যেমন বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির সংস্পর্শ থেকে বা ভাইরাস-লেগে থাকা বস্তুর মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে- যেমন বিছানা এবং পোশাক। সুতরাং, সতর্ক ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কোন বিক্ল্প নেই।

প্রতিরোধ বা চিকিৎসা কী?
মাঙ্কিপক্সের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের কৌশল নিলে এর বিস্তার ঠেকানো সম্ভব। মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে টিকা ৮৫% কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধও সাহায্য করতে পারে।

মাঙ্কিপক্স কতটা বিপজ্জনক?
এ ভাইরাসের প্রভাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হালকা। কখনও কখনও চিকেনপক্সের মতো হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেই সেরে যায়। তবে মাঙ্কিপক্স কখনও কখনও গুরুতর হতে পারে। পশ্চিম আফ্রিকায় এতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

সূত্র: বিবিসি, এএফপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *