বজ্রপাতের সময়ে করণীয়

অন্যান্য বাংলাদেশ সময় টিভি সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বছরের এ সময়ে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ বাড়ে। আর বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে বা পরে নানা সময়ে বজ্রপাত হয়। অনেক সময়ে বজ্রপাতে মানুষ, পশু-পাখিরও মৃত্যু হয়।

বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকতে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা হলো। যা নিজে জানুন, অন্যকেও জানান।

বজ্রপাত এর সময়ে ১৯টি করণীয়, সেগুলো হলো:

১. এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়; বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন।

২. ঘন কালাে মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাহির হবেন না; অতি জরুরি প্রয়ােজনে রবারের জুতা পড়ে বাইরে বের হতে পারেন।

৩. বজ্রপাতের সময় খােলা জায়গা, খােলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে থাকবেন না।

৪. বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খােলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকুন।

৫. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

৬. উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুটি, মােবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।

৭. কালাে মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডােবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।

৮. বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযােগ ঘটাবেন না; সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনাে কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।

৯.
বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।

১০. বজ্রপাতের সময় মােবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলাে বন্ধ রাখুন।

১১. বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। জরুরি প্রয়ােজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে পারবেন।

১২. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খােলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন।

১৩. বজ্রপাতের সময় ছাউনি বিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না, তবে এ সময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।

১৪. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।

১৫. প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরােধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।

১৬. খােলাস্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যান।

১৭. কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান।

১৮. বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়ােজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্র আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

১৯. বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় (দোয়া করতে থাকুন) চাইতে থাকুন।
হাদীসে এসছে, রাসুল (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আ-ফিনা কবলা জালিকা।’ (তিরমিজি : ৩৪৫০)অন্য রেওয়ায়েতে আছে, হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৯২১৩)

এবার আসুন জেনে নেই বজ্রপাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার পবিত্র কুরআনে কি বলেছে।

বজ্রপাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, বজ্রপাত আল্লাহ তা’আলার শক্তির নিদর্শনগুলোর একটি, যা তিনি তার প্রিয় বান্দাদের সাবধান করার জন্য রেখেছেন। তিনি চাইলেই যে কাউকে এর মাধ্যমে যেকোনো সময় শাস্তি দিতে পারেন। যদিও সব ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহ তা’আলা এমনটি করেন না। তাই কেউ বজ্রপাতের কবলে পড়ে মারা গেলেই তাকে আল্লাহর অপ্রিয় বান্দা ভাবা যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বজ্র তারই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে এবং তাঁর ভয়ে ফেরেশতাগণও (তাসবিহরত রয়েছে)। তিনিই গর্জমান বিজলি পাঠান, তারপর যার ওপর ইচ্ছা একে বিপদরূপে পতিত করেন। আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে তারা আল্লাহ সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তাঁর শক্তি অতি প্রচণ্ড। ’ (সুরা : রা’দ, আয়াত : ১৩)

মানুষের অপকর্মই বজ্রপাতের মূল কারণ। খোদাদ্রোহিতা দুনিয়ায় যত বাড়বে, ততই দুনিয়ার বুকে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ বাড়বে। উপরোক্ত আয়াতটির শেষাংশে [আর তাদের (অর্থাৎ কাফিরদের) অবস্থা এই যে তারা আল্লাহর সম্পর্কেই তর্কবিতর্ক করছে, অথচ তার শক্তি অতি প্রচণ্ড।] এ ধরনের আল্লাহ বিরোধী ব্যক্তিদের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

হাদীসের আলোকে বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়:

মহান আল্লাহ বজ্রপাত যেমন সৃষ্টি করেছেন, তার প্রিয় নবী (সা.)-এর মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে তা থেকে বাঁচার পথও বাতলে দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের প্রবল পরাক্রমশালী প্রভু বলেছেন, যদি আমার বান্দারা আমার বিধান মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম, সকালবেলায় সূর্য দিতাম এবং কখনো তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শোনাতাম না। (মুসনাদে আহমদ : ৮৭০৮)

বজ্রপাতের শব্দ শুনলে দোয়া:
বজ্রপাত আল্লঅহ প্রদত্ত দুর্যোগ, এর থেকে বেঁচে থাকার কিছু বাহ্যিক করণীয়ও রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করার জন্য সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করে। সেগুলো পালনের পাশাপাশি প্রিয় নবী (সা.) তার উম্মতদের বজ্রপাত থেকে রক্ষার যে দোয়াগুলো শিখিয়েছেন, সেগুলোর ওপর গুরুত্বসহ আমল করতে হবে।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আ-ফিনা কবলা জালিকা।’ (তিরমিজি : ৩৪৫০)

অন্য রেওয়ায়েতে আছে, হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৯২১৩)

মহান আল্লাহ সবাইকে সব ধরনের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন, আমিন।

আরও পড়ুন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *