সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর ইন্তেকালে জামায়াতের শোক প্রকাশ

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সভাপতি, দৈনিক সংগ্রামের চীফ রিপোর্টার বিশিষ্ট সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

শোকবাণীতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সভাপতি রুহুল আমিন গাজী দেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক সমাজে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তার লেখনি এবং বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্রের বিকাশ এবং সত্য প্রতিষ্ঠার একজন অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ফ্যাসিবাদের কবর রচনায় তাঁর ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

জামায়াত নেতা আরো বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পড়ে তাকে দীর্ঘদিন কারাবরণ করতে হয়েছিল। তারপরও তিনি সত্যের পক্ষে লেখনি চালিয়ে গেছেন। মজলুমের পাশে দাঁড়াতে তিনি কখনো কুণ্ঠাবোধ করেননি। মজলুমের পক্ষে তাঁর লড়াই স্মরনীয় হয়ে থাকবে। রুহুল আমিন গাজীর শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। তাঁর ইন্তিকালে আমরা একজন দেশপ্রেমিক, অকুতোভয় ও মেধাবী সংবাদিক নেতাকে হারালাম।

শোকবাণীতে তিনি আরও বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁকে ক্ষমা ও রহম করুন এবং তাঁর কবরকে প্রশস্ত করুন। তাঁর গুনাহখাতাগুলোকে ক্ষমা করে দিয়ে নেকিতে পরিণত করুন। কবর থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রত্যেকটি মঞ্জিলকে তাঁর জন্য সহজ, আরামদায়ক ও কল্যাণময় করে দিন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন এবং তাঁর শোকাহত পরিবার-পরিজনদেরকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, রাজধানীর পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালে দুই দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। রুহুল আমিন গাজী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা, উচ্চ ডায়াবেটিস, ব্যাক পেইন, লবণ ঘাটতিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, রোববার রাত পৌনে ৩টার দিকে জ্যেষ্ঠ এ সাংবাদিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে নিতে চেষ্টা হয়েছিল। তবে নানা জটিলতায় তা হয়ে ওঠেনি। পরে আবার তাকে ঢাকার বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার দুপুরের পর তার অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।

মরহুম রুহুল আমিন গাজীকে শ্রদ্ধা জানাতে তার মরদেহ আজ বুধবার ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে রাখা হবে। সেখানে নামাজা জানাজাও অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাকে ঢাকায় শাহজাহানপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পরিবারের সদস্যরা বলেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক দৈনিক সংগ্রামে কর্মরত ছিলেন। সেখানে বিশেষ প্রতিনিধি, চিফ রিপোর্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

চাঁদপুরের গুবিন্দিয়া গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণকারী রুহুল আমিন গাজী শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর দৈনিক ইত্তেফাকে ১৯৭৪ সালে রিপোর্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

শেখ হাসিনার সরকারের সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন টানা ১৮ মাসের বেশি সময়। কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও জামিন পাননি তিনি। বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।

মরহুম রুহুল আমিন গাজীর মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া সহ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *