সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করলেন রুশনারা আলী‌

বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্যের গৃহহীনতা-বিষয়ক মন্ত্রী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনী‌তিক রুশনারা আলী‌। পুরোনো ভাড়া‌টিয়াকে স‌রিয়ে ব্যক্তিগত একটি সম্পত্তির ভাড়া রাতারাতি ৭০০ পাউন্ড বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিট তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বুধবার সন্ধ্যায় আবাসন-বিষয়ক দাতব্য সংস্থা ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার কয়েক ঘণ্টা পর পদত্যাগের ঘোষণা দেন রুশনারা। বাড়িটি বিক্রি না হওয়ার পর বেশি দামে পুনরায় ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং ভাড়াটেদের উচ্ছেদের ঘোষিত কারণের মধ্যে বিরোধিতা নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তিনি চাপে ছিলেন।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী। গত বছর লেবার পার্টি সরকার গঠনের পর গৃহায়ন, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হন তিনি।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ‘দ্য আই পেপার’ এর এক প্রতিবেদনে এই বিতর্ক শুরু হয়। তাতে বলা হয়, গত নভেম্বর মাসে রুশনারা আলীর পূর্ব লন্ডনের বাড়িটির ভাড়াটেদের জানানো হয়েছিল, তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি নবায়ন করা হবে না, কারণ বাড়িটি বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে। এরপরই ওই সম্পত্তিটি ভাড়া দিতে পুনরায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তবে আগের ভাড়ার চেয়ে মাসিক ৭০০ পাউন্ড বেশি চাওয়া হয়।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ভাড়াটেদের অধিকার-সংক্রান্ত এমন একটি আইন আগামী বছর কার্যকর হওয়ার কথা যেখানে সম্পত্তি বিক্রির জন্য ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করে পরে বেশি ভাড়ায় পুনরায় ভাড়া দেওয়া যাবে না। তাছাড়া নির্দিষ্ট মেয়াদে ভাড়ার চুক্তিও করা যাবে না।

রুশনারা আলীকে নিয়ে এই বিতর্কের পর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সমালোচনা করে কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান কেভিন হলিনরেক বলেন, তিনি ‘ভণ্ডামি ও স্বার্থসেবামূলক’ একটি সরকার পরিচালনা করছেন। রুশনারার পদত্যাগকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এদিকে রুশনারার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভাড়াটেরা তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি অনুযায়ী ছিলেন। সম্পত্তি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে থাকতে পারেন বলেও জানানো হয়েছিল, কিন্তু ভাড়াটেরা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি এবং সম্পত্তি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন

কিয়ের স্টারমারকে লেখা পদত্যাগপত্রে রুশনারা আলী লিখেছেন, তিনি সব আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছেন এবং গুরুত্ব সহকারে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি পদে থাকলে বিষয়টি সরকারের উচ্চাভিলাষী কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেবে। তাই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পদত্যাগের পর রুশনারার শ্রম ও নিবেদনের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। তার অনুপস্থিতি হাউজিং, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আশাপ্রকাশ করেন, রুশনারা আলী পেছন থেকে সরকারে সমর্থন অব্যাহত রাখবেন এবং বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের জনগণের সেবা করে যাবেন।

এর আগে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এই ঘটনা সরকারি পদে থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার তালিকায় আরেকটি সংযোজন।

২০১০ সালে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন রুশনারা। গতবছরের নির্বাচনে তিনি টানা পঞ্চমবারের মত পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।

রুশনারার জন্ম ১৯৭৫ সালে সিলেটে। মাত্র সাত বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে চলে যান লন্ডনে। বাংলাদেশে রুশনারার পৈতৃক নিবাস সিলেটের বিশ্বনাথের বুরকি গ্রামে। রাজনীতি, অর্থনীতি ও দর্শন পড়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। তিনি পরামর্শক সংস্থা ইয়ং ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক। ইউএনবি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *