সংগীত সংশ্লিষ্টদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো ‘সিএমও কনফারেন্স’

ফিচার বাংলাদেশ বিনোদন সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ফাহিম ফয়সালঃ সময়ের পরিক্রমায় সারা পৃথিবীতেই এখন কপিরাইট একটি বহুল আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ধারা ২৭-এ দেয়া হয়েছে এর স্বীকৃতি। এ বিষয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ সচেতনতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছে; প্রণয়ন করেছে আইন ও বিধি; প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের দেখভাল এবং সুরক্ষার প্রেক্ষিতে কাজ করা সময়বান্ধব উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের অধ্যায় ৯ এর ধারা ৩৮ থেকে ৪৪-এ ব্যক্তির মেধাস্বত্ব সুরক্ষার জন্য করণীয় সম্পর্কে বিধান রাখা হয়েছে।

তারই ধারাবাহিকতা এবং প্রয়োজনীয়তায় দেশীয় সংগীত সংশ্লিষ্টদের অধিকার আদায় ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ লিরিসিস্টস, কম্পোজার্স অ্যান্ড পারফর্মার্স সোসাইটি (বিএলসিপিএস)’ এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘সিএমও কনফারেন্স’। গত ৬ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার অভিজাত একটি মিলনায়তনে আয়োজিত এই কনফারেন্সের উদ্দেশ্য ছিলো বিশ্বব্যাপী মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত বিষয়াদি ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত সংস্থাসমূহের আন্তর্জাতিক কনফেডারেশন ‘সিসাক’ এর সঙ্গে যুক্তভাবে কাজ করার রূপরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার দাউদ মিয়া, এন.ডি.সি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘সিসাক’ এর সম্মানিত উপদেষ্টা সাতোশি ওয়াতানাবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ‘বিএলসিপিএস’ এর বর্তমান সিইও হামিন আহমেদ, ‘বিএলসিপিএস’ এর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ব্যারিস্টার এবিএম হামিদুল মিসবাহ। দেশের বাইরে থাকায় ‘বিএলসিপিএস’ সভাপতি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন এর পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন বিএলসিপিএস এর সাবেক সিইও সুজিত মোস্তফা। দেশের স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকারদের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দেশবরেণ্য সংগীতজ্ঞ শেখ সাদী খান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার দাউদ মিয়া, এন.ডি.সি

‘বিএলসিপিএস’ এর এই সম্মেলনে, ‘সিএমও’র প্রয়োজনীয়তা ও বিশ্বব্যাপী সংগীতের মেধাস্বত্ব প্রতিষ্ঠা ও রয়্যালটি সংগ্রহে ভূমিকা এবং কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়সমূহ নিয়ে ‘সিসাক’ এর উপদেষ্টা সাতোশি ওয়াতানাবে বিশেষ বক্তব্য ও প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তথা সংস্থাটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন কিংবদন্তি সুরকার আলাউদ্দিন আলী এবং জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর, যারা ভীষণ অসুস্থতার মাঝেও অক্লান্তভাবে সোসাইটির জন্য কাজ করে গেছেন। BLCPS এই দুই প্রয়াত গুণী শিল্পীর অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছে।

‘সিসাক’ এর উপদেষ্টা সাতোশি ওয়াতানাবে বিশেষ বক্তব্য ও প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন

‘বিএলসিপিএস’ (BLCPS) কি?
BLCPS (Bangladesh Lyricist Composers & Performers Society), গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত সংগীত বিষয়ক প্রথম এবং একমাত্র CMO (Collective Management Organization)। BLCPS বাংলাদেশের সংগীত শিল্পের জন্য প্রথম CMO তথা যৌথ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি বাংলাদেশের গীতিকার, সুরকার, গায়ক এবং পরিবেশকদের অধিকার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালে সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়। BLCPS এর মাধ্যমে Lyricists, Composers এবং Performers, দেশে ও দেশের বাইরে থেকে তাদের প্রাপ্য রয়্যালটি বুঝে পাবেন।

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে একাত্ম হয়ে BLCPS বাংলাদেশের সংগীত স্রষ্টাদের মেধাসত্ত্ব সংরক্ষণে দৃঢ় ভূমিকা পালন করে যেতে বদ্ধপরিকর। বর্তমানে BLCPS-এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একটি অলাভজনক ট্রাস্ট্রি বোর্ডের অধীনে, যার নেতৃত্বে আছেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।

▶️ দেখুন কপিরাইট সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি-পার্ট ১ (নির্মাণ, ফাহিম ফয়সাল)

‘সিএমও’ (CMO) কি?
CMO হলো সরকার অনুমোদিত সেই কর্তৃপক্ষ, যারা এর নিবন্ধিত সদস্যদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে এবং মেধাস্বত্বের বিপরীতে প্রাপ্য রয়্যালটি আদায় করে থাকে। এই সংস্থা মেধাস্বত্বের অপব্যবহার প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।

‘সিসাক’ (CISAC) কি?

CISAC (The International Confederation of Societies of Authors and Composers) হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত বিষয়াদি ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত সংস্থাসমূহের আন্তর্জাতিক কনফেডারেশন।

কনফারেন্সে উপস্থিত দেশের স্বনামধন্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পীদের একাংশ

বিশ্বজুড়ে মেধাভিত্তিক স্বার্থ সুরক্ষার জন্য এবং এই সংক্রান্ত স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য আজ থেকে প্রায় ২৪৭ বছর আগে ১৭৭৭ সালে, পশ্চিমের দেশ ফ্রান্সে গঠিত হয়েছিলো এমন এক সংস্থা, যা বর্তমানে Collective Management Organization বা CMO নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ব্যক্তিবর্গ এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যোগাযোগ, স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রযুক্তি বিনিময়ের লক্ষ্যে ১৯২৬ সালে একটি সম্মিলিত কনফেডারেশন গঠন করেন; যা International Confederation of Societies of Authors and Composers বা CISAC নামে পরিচিত। লেখক ও সুরকারদের এই আন্তর্জাতিক কনফেডারেশনটিকে বলা হয় লেখক-সুরকারদের জন্য কাজ করা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কনফেডারেশন। পৃথিবী জুড়ে ১১৬টি দেশে, ২২৫টি CMO এবং ৫০ লক্ষেরও বেশি নির্মাতাদের সাথে নিয়ে CISAC বর্তমানে সংগীত, অডিও-ভিজ্যুয়াল, নাটক, সাহিত্য এবং ভিজ্যুয়াল আর্টস এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে।

▶️ দেখুন কপিরাইট সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি-পার্ট ২ (নির্মাণ, ফাহিম ফয়সাল)

‘ওয়াইপো’ (WIPO) কি?
জাতিসংঘের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা WIPO (World Intellectual Property Organization), বিশ্বব্যাপী ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মানুষের Intellectual Property (IP) তথা বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিসমূহ সংরক্ষণ এবং এই সংক্রান্ত তথ্য এবং নীতিমালা সংরক্ষণের জন্য কাজ করে আসছে।

উল্লেখ্য, সংগীতে বাংলাদেশের একমাত্র ‘সিএমও’ হিসেবে ‘সিসাক’ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করার জন্য ‘বিএলসিপিএস’-এর সক্ষমতার শর্তাবলী পূরণকল্পে সাতোশি ওয়াতানাবে ঢাকায় তিন দিনব্যাপী কর্মশালা পরিচালনা করেছেন। যেখানে ‘বিএলসিপিএস’-এর ট্রাস্টিগণ, কোর সদস্যরা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *