মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাফাহ আক্রমণ করা হলে তিনি আর্টিলারি শেলসহ কিছু অস্ত্র আটকে রাখবেন। গাজায় বেসামরিক মৃত্যুর আশঙ্কায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে একটি বোমার চালান স্থগিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বাস করেন যে গাজার রাফায় বড় ধরনের অভিযান চালিয়েই ইসরায়েলের পক্ষে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে হারানো সহজ নয়। হোয়াইট হাউস এ মন্তব্য করেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ‘তার মতে রাফা গুঁড়িয়ে দেয়া হলেও হামাসকে ধ্বংস করার ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী যদি গাজার রাফাহ অঞ্চলে পরিপূর্ণ আকারে আক্রমণের নির্দেশ দেন, তাহলে অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দেয়া হবে- যুক্তরাষ্ট্র এই মর্মে সতর্ক করার পর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল “একা লড়তে পারে”। তিনি বলেন, “যদি প্রয়োজন হয়… আমরা একাই দাঁড়াবো। আমি বলেছি যে প্রয়োজনে আমরা আমাদের নখ দিয়ে লড়াই করবো।”
নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গ্যালান্ট ইতোমধ্যে বলেছেন, ইসরায়েলের “শত্রুদের পাশাপাশি… সেরা বন্ধুদের” বোঝা উচিৎ যে তার দেশকে “বশ করা যাবে না। আমরা দৃঢ়তার সাথে দাঁড়াবো, আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করবো।”
ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো কাছাকাছি চলে আসার কারণে ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মাঝেও সোমবার থেকে ৮০,০০০ এরও বেশি মানুষ রাফাহ থেকে পালিয়ে গেছে, জাতিসংঘ এই কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পর মি. গ্যালান্টের ওই মন্তব্য এসেছে।
জাতিসংঘ আরও সতর্ক করেছে যে শহরটিতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি। কিন্তু তাদের খাদ্য ও জ্বালানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ এই শহরটি তার কাছাকাছি সংযোগস্থলগুলো থেকে কোনও সহায়তা পাচ্ছে না।
অভিযানের শুরুতে ইসরায়েলি সৈন্যরা মিশরের সাথে সংযুক্ত রাফাহ ক্রসিং নিয়ন্ত্রণে নেয় ও বন্ধ করে দেয়। তখন জাতিসংঘ বলেছিলো যে এটি বন্ধ করার পর ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত পুনরায় উন্মুক্ত করে দেওয়া কেরেম শালোম ক্রসিং-এ পৌঁছানো তাদের জন্য বিপজ্জনক হবে।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট মি. বাইডেন সিএনএনকে বলেছিলেন যে ফিলিস্তিনের বেসামরিকদের হত্যা করতে আমেরিকান বোমা ব্যবহার করা হয়েছিলো। “যদি তারা রাফাহতে আক্রমণ করে, আমি তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করছি না যা রাফাহ মোকাবেলায় ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে,” তিনি বলেছিলেন।
হামাস বলেছে যে তারা রাফাহ’র পূর্বাঞ্চলে তিনটি ইসরায়েলি সামরিক গাড়ির নিচে থাকা একটি টানেল উড়িয়ে দিয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে তাদের তিন সৈন্য আহত হয়েছে।
রাতারাতি শহরের পশ্চিম দিকের তাল আল-সুলতান পাড়ায় একটি পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিহতদের মাঝে তিনটি শিশু রয়েছে। সেই শিশুদের মাঝে একজনের বয়স আবার এক বছর।
সপ্তাহের শুরুতে গাজা ইসরায়েলের মাঝে শান্তিচুক্তি হওয়া নিয়ে যে আশার আলো দেখা গিয়েছিলো, তা এখন ম্লান হতে শুরু করেছে। যদিও সেই শান্তিচুক্তিতে হামাস সম্মত হলেও ইসরায়েল সম্মতি দেয়নি। বৃহস্পতিবার কায়রোতে ইসরায়েল ও হামাসের উভয় প্রতিনিধিই পরোক্ষ আলোচনা বন্ধ করেছে।
এদিকে, গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ৩৪ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া, ইসরায়েল বলেছে যে যাদেরকে জিম্মি করা হয়েছে, তাদের ১২৮ জনের হিসাব নেই এবং জিম্মিদের মাঝে ৩৬ জনকে মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুত্র: রয়টার্স ও বিবিসি