মানুষের যতটা প্রয়োজন : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন মতামত সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ: মাসুম খলিলী

এক. আপনি যখন কারো উপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, তখন সর্বশক্তিমান আপনাকে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারেন শুধুমাত্র আপনাকে এটি দেখানোর জন্য যে আপনার শক্তি কোথায় রয়েছে। মনে রাখবেন, আমাদের মানুষের প্রয়োজন কিন্তু সর্বশক্তিমানকে যতটা প্রয়োজন ততটা নয়।

দুই. যারা আপনার ক্ষতি করেছে তাদের মন্দ কামনা করবেন না। এর পরিবর্তে, তারা যাতে ভুল বুঝতে পারে এবং সত্য পথ পায় তার জন্য প্রার্থনা করুন। প্রতিশোধ নিয়ে চিন্তা করবেন না। সর্বশক্তিমান আমাদের শিক্ষা দিন যাতে আমরা সঠিক সময়ে তা কাজে লাগাতে পারি। যিনি সঠিক ও ন্যায্য,সর্বশক্তিমান সর্বদা তার সাথে আছেন।

পূনশ্চঃ

এক. ১৭ বছর ধরে ১৪০ বর্গমাইলের একটি প্রাচীর ঘেরা এবং গেটবদ্ধ খোলা আকাশের বন্দী শিবিরে থাকতে বাধ্য করা বিশ লাখেরও বেশি লোকের ওপর এখন সবচেয়ে শক্তিধর পারমাণবিক বাহিনী নিরলসভাবে বোমাবর্ষণ করছে। পানি, খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, হাসপাতাল, স্কুল, আবাসিক ভবন, গির্জা ও মসজিদ, রাস্তা আর সমস্ত অবকাঠামো ধ্বংস করে, শত শত শিশু, মা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের হত্যা করা হচ্ছে সাদা ফসফরাস বোমা আর সবচেয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে।এ এক গণহত্যার অভিযান আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এই নির্বোধ হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। মৌলিক মানবাধিকার ও শালীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এই বিপর্যয় থেকে আমরা কীভাবে পৃথিবীতে শান্তি পেতে পারি? পুরো বিশ্ব এটি দেখছে। ইতিহাসের সঠিক দিকে থাকুন।

দুই. যারা মনে করে শান্তি স্থাপনের জন্য হাসপাতাল, গীর্জা, মসজিদ, স্কুল, কিন্ডারগার্টেন ইত্যাদি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে হবে, সেখানকার সমস্ত জীবন নির্মূল করতে হবে তারা নিজেদের ছাড়া আর কাউকে বোকা বানাচ্ছে না। এটা শুধুমাত্র বিপরীত প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসতে পারে। এটি ক্ষমার অযোগ্য।

তিন. সর্বশক্তিমান আপনাকে যা করতে বলেছেন তা করার পরও আপনি কি বারবার পরীক্ষার মুখে পড়ছেন? মন খারাপ করবেন না এতে। জেনে রাখুন যে আপনার পরীক্ষা একটি আশীর্বাদ, শাস্তি নয়। তিনি আপনাকে ভালবাসেন এবং তার সেরা সৈন্যদের জন্য কঠিনতম পরীক্ষা পাঠান। ভালোভাবে ধৈর্য ধারণ করুন।

চার. আপনার জীবন নামক অভিযাত্রায় সক্রিয় হোন। আপনি রাস্তা দিয়ে কতক্ষণ হাঁটছেন তা কোন ব্যাপার না, একবার আপনি শেষ প্রান্ত দেখবেন, এরপর আর কোন রাস্তা নেই- এমন চিহ্ন সেখানে একেঁ দেয়া। নিজেকে এরপর ঘুরিয়ে নিন। আপনি যদি সর্বশক্তিমানের সাথে সংযুক্ত থাকেন তবে আপনি কখনই আটকে থাকবেন না। তিনি আপনার জন্য সর্বদা একটি উপায় খুঁজে রাখবেন!

পাঁচ. আপনার কি এমন কেউ আছে যিনি সর্বদা দোষ খুঁজে পান আর আপনার জীবন, চাকরি, অভ্যাস ইত্যাদি সম্পর্কে আপনাকে পরামর্শ দেন? কিন্তু সে ব্যক্তি কখনো তার নিজের পরামর্শ অনুসরণ করেন না। কারও কারও একটি এজেন্ডা থাকে এবং আপনার আত্মবিশ্বাসকে খারাপভাবে আঘাত করতে পারে। আপনার সময়কে এমন লোকদের দেবেন না যারা নিজেরা যা নয় তা হবার ভান করে ।

ছয়. লোকেরা আপনার সম্পর্কে মতামত জানাবে এবং এ ব্যাপারে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। এটি করা একেবারে সহজ হয়ে গেছে, বিশেষত কীবোর্ডের আড়ালে থেকে। এর জন্য কোনও জবাবদিহিতা, বোঝাশোনার দরকার নেই। এর পরিবর্তে আমরা কীভাবে সহানুভূতি গড়ে তুলতে পারি সেটি দেখি; অন্যরা কী অনুভব করছে তা উপলব্ধি করার ক্ষমতা অর্জন করি!

সাত. অন্যের নামে দুর্নাম ছড়ানো থেকে ভালো কিছু আসে না। আপনি কিছুক্ষণের জন্য “ভাল” অনুভব করতে পারেন তবে বিশ্বাস করুন, এটি দীর্ঘকালে আরও সমস্যা তৈরি করবে। আপনি কখনই কল্পনা করেননি এমনভাবে তা আপনার কাছে আবার প্রত্যাঘাত হিসাবে ফিরে আসবে। সর্বশক্তিমান এটি দেখছেন। এই জাতীয় বিষাক্ত কাজ থেকে দূরে থাকাই উত্তম।

দ্রষ্টব্যঃ

হে নবী, অবশ্যই মুমিনদের মধ্যে শক্রতায় মানুষের মধ্যে ইহুদী ও মুশরিকদেরকেই আপনি সবচেয়ে উগ্র দেখবেন। আর যারা বলে ‘আমরা নাসারা’ মানুষের মধ্যে তাদেরকেই আপনি মুমিনদের কাছাকাছি বন্ধুত্বে দেখবেন, তা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত ও সংসারবিরাগী রয়েছে। আর এজন্যেও যে, তারা অহংকার করে না। (সূরা মায়েদা : ৮২)

আর ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত রুদ্ধ, তাদের হাতই রুদ্ধ করা হয়েছে এবং তারা যা বলে সে জন্য তারা অভিশপ্ত, বরং আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত; যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন। আর আপনার রব-এর কাছ থেকে যা আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে, তা অবশ্যই তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফরী বৃদ্ধি করবে। আর আমরা তাদের মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী শক্রতা ও বিদ্বেষ ঢেলে দিয়েছি। যখনই তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালায় তখনই আল্লাহ্ তা নিভিয়ে দেন এবং তারা দুনিয়ায় ফাসাদ করে বেড়ায়; আর আল্লাহ্ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না। (সূরা মায়েদা : ৬৪)

কেবলমাত্র সুরক্ষিত জনপদের অভ্যন্তরে অথবা দুর্গ-প্রাচীরের আড়ালে থেকে ছাড়া তারা (ইহুদিরা) সবাই সমবেতভাবেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সমর্থ হবে না। পরস্পরের মধ্যে তাদের যুদ্ধ প্রচন্ড। তুমি মনে কর তারা ঐক্যবদ্ধ, কিন্তু তাদের মনগুলি ভিন্ন ভিন্ন। এটা এ জন্য যে, ওরা হল নির্বোধ সম্প্রদায়। (সূরা হাশর : ১৪)

(তাদের প্রতি আল্লাহর অসন্তোষ নেমে এসেছে) তাদের ওয়া‘দা ভঙ্গের কারণে, আর আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করার কারণে, অন্যায়ভাবে নবীগণকে তাদের হত্যা করার কারণে, আর ‘আমাদের হৃদয়গুলো আচ্ছাদিত’ তাদের এ কথা বলার কারণে- বরং তাদের অস্বীকৃতির কারণে আল্লাহ তাদের হৃদয়গুলোতে মোহর মেরে দিয়েছেন। যে কারণে তাদের অল্পসংখ্যক ছাড়া ঈমান আনে না। (সূরা নিসা : ১৫৫)

* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *