ভোট শুরুর আগেই পাঁচকেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার তার কর্তন

সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার নির্বাচন শুরুর আগেই ৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার তার কর্তন করে দুর্বৃত্তরা। তিনটি সচল করতে পারলেও বাকি দুটি অচল ছিল। তারগুলো কেটে নিয়ে যায় তারা। একই সঙ্গে ভোট শুরুর আগেই সাংবাদিককে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে রিটার্নিং অফিসারের উপস্থিতিতে উপজেলা চত্বরে ঝুলিয়ে পেটানোর হুমকিও দেওয়া হয়। ভোটের দিন সকালে আবার ঐ সাংবাদিককে টেলিফোনে আঙুল কর্তন করার ঘোষণা দেন ভাণ্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। নির্বাচনি মাঠে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়। নিয়ন্ত্রিত ভোটে কার্যত অসহায় প্রতিপক্ষরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিসি ক্যামেরার তার কর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। সেটি তার কর্তন করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুসারীরা। একইভাবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র নিজে উপস্থিত থেকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ দেওয়া হলেও নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং রিটার্নিং অফিসারের সামনে সাংবাদিককে প্রকাশ্য ঝুলিয়ে পিটানোর ঘোষণার বিষয়ে ভোটের পরে ব্যবস্থার কথা বলা হয়। এতে করে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। যদিও নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিক হুমকির বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সিসি ক্যামেরার তার কর্তনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে পাঁচটি কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার তার কোন পক্ষের নির্দেশনায় কাটা হয়েছে তা খুঁজে বের করবে নির্বাচন কমিশন। এজন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভাণ্ডারিয়ায় কিছু কিছু মিসক্রিয়েন্ট রবিবার রাতে সিসি ক্যামেরার ক্যাবল কেটে দিয়েছে। কাটা পড়েছে বললাম না।

আমরা গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চিন্তা করেছিলাম কাটাকাটি করবে। কিন্তু দেখলাম সেই কাটাটা ভাণ্ডারিয়ায় হলো। এটা আমরা খুঁজে বের করব কে, কখন, কারা, কীভাবে, কোন পক্ষের হয়ে এ জিনিসগুলো করেছে। আমি নির্দিষ্টভাবে এসপিকে দায়িত্ব দিয়েছি। ডিবির কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছি। রাস্তায় অনেক ফুটেজ থাকে, সিসি ক্যামেরায় থাকে, কোনো কোনো বাসায়ও থাকে। এটা খুঁজে বের করার জন্য বলেছি। ডিসি, এসপি, গোয়েন্দা সংস্থা লাগিয়ে চেক করেছি। ওপরের ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। পাঁচটা কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ক্যাবল কাটা হয়েছে। তিনটা ঠিক করা হয়েছে। এটা এজন্য বললাম যে, তারটা কেটে সরিয়ে নিয়ে গেছে, যেন সহজে সারানো না যায়। সেই পাঁচটা কেন্দ্রে আমাদের পৃথক পাঁচ জন পর্যবেক্ষক দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, সাংবাদিক পেটানোর হুমকিদাতা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, সাংবাদিককে টাঙিয়ে পেটানোর হুমকিদাতা পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরষিদের চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম মিরাজকে ছাড়ব না। আমরা বিষয়টি কমিশন বৈঠকে তুলে ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আমরা এটি ছাড়ব না। আমরা কমিশনে ওঠাব। সেই চেয়ারম্যান ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।

গত রবিবার রাত ৯টার দিকে ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জিয়াউর রহমান খলিফা তার কার্যালয়ে ঢাকা থেকে আগত ইসির বিটের ১০-১২ জন সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন। এ সময় সেখানে আকস্মিকভাবে উপস্থিত হন ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। সভায় উপস্থিত ইত্তেফাক পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি শঙ্করকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোকে সারা দিন বেশ কয়েক বার এ কার্যালয়ের এখানে ঘুরতে দেখছি, তোর এখানে কাজ কী? আবার যদি তোকে এখানে দেখি, তাহলে তোকে উপজেলা চত্বরে টাঙিয়ে পেটাব। এ কথার পর শঙ্করকে ঐ অফিস থেকে বের করে দেয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে আসা দুই ব্যক্তি। পরবর্তীতে ঐ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ হলে সোমবার সকালে শঙ্করকে পুনরায় টেলিফোন দিয়ে আঙুল কেটে নেওয়ার হুমকি দেন মিরাজ। একই সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, যার অডিও নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হয়। – ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *