ভারতীয় বংশোদ্ভূত রামাসোয়ামি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চান

আমেরিকা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে তিনজন রিপাবলিকান অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন তাদের মধ্যে দুজন হলেন ভারতীয়-আমেরিকান। নিকি হ্যালি বেশ পরিচিত নাম হলেও, প্রার্থী হিসেবে আকস্মিকভাবে নাম ঘোষণা করা ভিভেক রামাসোয়ামি, যিনি তেমন একটা পরিচিত নন। খবর বিবিসি।

রামাসোয়ামির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা এবং তিনি পরিবর্তন আনতে পারবেন কিনা সেটি মূল্যায়ন করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক সাংবাদিক সাভিতা প্যাটেল।

রামাসোয়ামি, একজন ধনাঢ্য উদ্যোক্তা এবং ‘ওক, ইঙ্ক’ শীর্ষক বইয়ের লেখক। একুশে ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজ শোতে নিজের রাজনৈতিক মতামত তুলে ধরার সময় ক্যামেরার সামনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেন।

নতুন আমেরিকান স্বপ্ন নির্মাণে ‘সাংস্কৃতিক আন্দোলন’ গড়ে তুলতে চান রামাসোয়ামি। যার ভিত্তি হবে ‘দক্ষতা ও যোগ্যতা’। তিনি বলেছেন “মানুষের সঙ্গে মানুষের যদি বন্ধন তৈরি করা না যায় তাহলে বৈচিত্র্য থাকা অর্থহীন”।

সাঁইত্রিশ বছর বয়সী রামাসোয়ামি ওহাইওতে জন্মগ্রহণ করেছেন, হার্ভার্ড এবং ইয়েলে পড়াশোনা করেছেন। বায়োটেকনোলজি উদ্যোক্তা হিসাবে লাখ লাখ ডলার উপার্জন করেছেন। এরপর একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তিনি বর্ণবাদ এবং জলবায়ু নিয়ে কর্পোরেট বিশ্বের “ওকেইজম” এর বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার ভূমিকায় আছেন। তার দাবি এটি ব্যবসা এবং দেশ উভয়েরই ক্ষতি করছে।

রামাসোয়ামি মূলত ইএসজি (পরিবেশ, সামাজিক এবং কর্পোরেট গভর্নেন্স) উদ্যোগের বিরোধী। এর মাধ্যমে মূলত একটি কোম্পানির সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাব পরিমাপ করা হয়। তিনি চীনের উপর মার্কিন অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমাতে চান।

রামাসোয়ামির মতামত কারো কারো সঙ্গে মিলে যায়। যেমন সহকর্মী রিপাবলিকান বিক্রম শারামানির সাথে মেলে। যিনি ২০২২ সালের মধ্যবর্তী মেয়াদে নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে মার্কিন সেনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং সম্প্রতি রাজ্যে সফরের সময় মি. রামাসোয়ামির সাথে তার দেখা হয়।

শারামানি তার এই ভারতীয়-আমেরিকান সহকর্মীকে “খুবই হৃদয়গ্রাহী, স্পষ্টবাদী এবং চিন্তাশীল” হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও একইরকম “আমেরিকাকে আলাদা করার পরিবর্তে একত্রিত করা”।

“ব্যক্তি পরিচয়ের রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রে শিকড় গেড়েছে এবং এতে একতার পরিবর্তে বিভক্তিমূলক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে”।

আমাদের মধ্যে যে বিষয়গুলোয় মিল রয়েছে তার উপর ভর করেই আমাদের দাঁড়াতে হবে।” শারামানি বলেন, তার পরিবারও সম্প্রতি নিউ হ্যাম্পশায়ারে নিকি হ্যালিকে দাওয়াত করেন।

কিন্তু এমনও কিছু ভারতীয়-আমেরিকান যারা আছেন, যারা রামাসোয়ামির রাজনীতির সঙ্গে একমত নন। তাদের ধারণা। রামাসোয়ামির প্রচারণায় গভীরতার অভাব রয়েছে।

ডেমোক্র্যাট শেখর নারাসিমহান, এএপিআই (এশিয়ান আমেরিকানস অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডার্স) ভিক্টরি ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন যে মার্কিন রাজনীতিতে এশিয়ান-আমেরিকানদের প্রাধান্য পেতে দেখে তিনি খুশি হলেও রামাসোয়ামির বিষয়ে তিনি আস্থাশীল নন।

“তিনি একজন ব্যবসায়ী মানুষ এবং তার ব্যক্তিত্বে কোন দাগ নেই, কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি কী?” শ্রী নারাসিমহান প্রশ্ন তোলেন।

“তিনি কি বয়স্কদের চিকিৎসার বিষয়ে খেয়াল রাখেন? অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের বিষয়ে তার পরিকল্পনা কী? তার নির্দিষ্ট কোন অবস্থান নেই এবং এখনও তার নীতিগুলো স্পষ্ট করেননি।”

বিভিন্ন কমিউনিটির অনেক মানুষ আছেন যারা বহু বছর যাবত রিপাবলিকানদের সমর্থন করছেন। তারা বলেছেন, রামাসোয়ামি এই লড়াইয়ে না আসা পর্যন্ত তারা কখনও তার সম্পর্কে শোনেননি।

“আমি তার সঙ্গে কখনো দেখা করিনি। আমাকে বলা হয়েছে তার অনেক টাকা আছে এবং বেশ ভালো কথা বলেন। কিন্তু তিনি অন্য দশটা প্রার্থীর মতো একজন প্রার্থী। তার খুব বেশি সুযোগ নেই,” বলেছেন ডা. সাম্পাত শিভাঙ্গি, একজন সুপরিচিত রিপাবলিকান পার্টি সমর্থক এবং তহবিল সংগ্রহকারী।

অন্যরাও তার বক্তব্যে একমত জানান।

জর্জ ডব্লিউ বুশের পর থেকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহকারী হোটেল ব্যবসায়ী ড্যানি গ্যাকওয়াড বলেছেন, ” তিনি [রামাসোয়ামি] যদি প্রথম দিকে তার উপস্থিতি জানান না দেন, তাহলে কেউ তার কথা জানতে চাইবে না।”

যদিও গ্যাকওয়াড প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মি. রামাসোয়ামির সাহসের প্রশংসা করেন, তিনি বলেছেন যে, তার একটি কৌশল থাকা বেশ জরুরি – সেটি হল “ভারতীয়-আমেরিকানদের জন্য কিছু আছে”।

তিনি আরও যোগ করেন যে, আমরা এখনও বেশ প্রাথমিক অবস্থায় আছি, ফ্লোরিডায় দুজন শক্তিশালী প্রার্থী থাকতে পারেন- এরমধ্যে গভর্নর রন ডিসান্টিসের কথা তিনি উল্লেখ করেন, যিনি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেননি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ভারতীয়-আমেরিকান রিপাবলিকানরা “মিস্টার ট্রাম্প, মিস্টার ডিসান্টিস এবং মিস হ্যালির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের” ভবিষ্যদ্বাণী করছেন।

নিকি হ্যালির আক্রমণাত্মক প্রচারণা শৈলীর প্রশংসা করে মি. শিভাঙ্গি বলেন, মি. ট্রাম্প যদি প্রার্থিতার লড়াই থেকে ছিটকে পড়েন তাহলে তিনি মিস হ্যালিকে সমর্থন করবেন।

“মিস্টার ট্রাম্পের ৪০% রেটিং রয়েছে এবং মিসেস হ্যালি একক সংখ্যায় আছেন, কিন্তু তিনি আমাদের প্রার্থী। তিনি ভারতীয়-আমেরিকান হওয়ার কারণেই আমরা তার এতোটা কাছাকাছি আছি,” তিনি বলেন।

রাজনৈতিক মতপার্থক্য নির্বিশেষে, ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ক্রমে বাড়তে থাকায় ওই সম্প্রদায়ের মানুষ বেশ খুশি, বিশেষ করে গত তিন দফার নির্বাচনে, এবং এবারে তাদের একজনের প্রার্থিতার সম্ভাবনা বেশ গর্বিত করেছে।

“একটি সুন্দর জিনিস ঘটছে: ভারতীয়-আমেরিকানরা সামনে আসছে,” মি. গ্যাকওয়াড বলেছেন, সাম্প্রতিক এই লড়াই ভারতীয়-আমেরিকানদের স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে উৎসাহিত করতে পারে৷

এমনকি রাজনৈতিক বিরোধীরাও এতে একমত হবেন।

“আমাদের বাচ্চারা যদি দেখে যে রামাসোয়ামি বা খান্না বা কৃষ্ণমূর্তির মতো নামধারী আমেরিকানরা জয়ী হচ্ছে, তাহলে সেটা দারুণ হবে,” নারাসিমহান বলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *