বৃটেনের প্রভাবশালী সংগঠন মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের (এমসিএ) দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা রবিবার (৫ অক্টোবর ২০২৫) লন্ডন মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদস্যদের সরাসরি ভোটে ২০২৫-২০২৭ সেশনের জন্য খ্যাতিমান আইনজীবী ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ পুনরায় এমসিএ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বর্তমান সভাপতি ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুল মতিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও দারস পেশ করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শায়খ আব্দুল কাইয়ুম।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্যারিস্টার হামিদ আজাদ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সদস্যদের আত্মত্যাগ ও সহযোগিতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমরা মুসলিম হিসেবে সমাজ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও এমসিএ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে মুসলমানদের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ফিলিস্তিনে চলমান মানবিক সংকট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
শায়খ আব্দুল কাইয়ুম কোরআন ও সুন্নাহ‘র আলোকে নেতৃত্বের দায়িত্ব ও গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেন, ইসলামী সংগঠনের ঐতিহ্য অনুসারে নেতৃত্বের আসন চাওয়া নয়, বরং আমানত হিসেবে তা পালন করাই প্রকৃত সাফল্য।
দুপুরের বিরতির পর সভাপতি হামিদ হোসেন আজাদ সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং দ্বিবার্ষিক রিপোর্টের উপর আলোচনা হয়, যা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।
এরপরই অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন পর্ব। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছ ও পেশাদারভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন। নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন হাবিবুর রহমান। তাকে সহযোগীতা করেন কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল বারী, আয়ুব খান, ড. আশরাফ মাহমুদ ও রাহেলা চৌধুরী। কমিশনের পক্ষ থেকে ২০২৫–২০২৭ সেশনের রিজিয়ন সভাপতি ও শুরা কাউন্সিল নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
সকল প্রার্থী ও সদস্যরা নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও দক্ষতার প্রশংসা করেন। উপস্থিত প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা জানান, এবারের নির্বাচন এমসিএ’র ইতিহাসে অন্যতম সুশৃঙ্খল ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে।
২০২৫–২০২৭ সেশনের নতুন রিজিয়ন সভাপতিরা হলেন- এফ কে এম শাহজাহান (লন্ডন নর্থওয়েস্ট), সৈয়দ আহমদ (লন্ডন ওয়েস্ট), কাজী ফয়জুল ইসলাম পারভেজ (লন্ডন সাউথইস্ট), আবুল হোসেন রায়হান (লন্ডন ইস্ট), মোহাম্মদ জুবায়ের মিয়া (লন্ডন নর্থইস্ট), হাসানুল বান্না (মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনালস অ্যান্ড স্টুডেন্টস), জয়নাল আবেদীন লিটন (লন্ডন সাউথওয়েস্ট), কামাল উদ্দিন (সাউথইস্ট ইংল্যান্ড মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন), গিয়াস উদ্দিন (সাউথওয়েস্ট ইংল্যান্ড ইসলামিক সোসাইটি), শরীফুর রহমান (ইস্ট অব ইংল্যান্ড), রেজাউল করিম চৌধুরী (ইস্ট মিডল্যান্ড), এস বদরুল আলম (নর্থওয়েস্ট), আসাদ আহমেদ (ওয়েলস), ফরিদ মিয়া (ওয়েস্ট মিডল্যান্ড), মাসুদুল হাসান (ইয়র্কশায়ার অ্যান্ড হাম্বার), জাহিদ ইসলাম (নর্থইস্ট)।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত ১৬ জন রিজিয়ন সভাপতি শুরা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও নির্বাচিত হন। এছাড়া নির্বাচিত ডেলিগেটদের মাধ্যমে আরও ২৪ জন শুরা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- আবদুদ দাইয়ান মোহাম্মদ ইউনুস, আনসার মুস্তাকিম, দিলোয়ার হোসেন খান, ড. আবদুস সালাম আজাদি, ড. দিলদার চৌধুরী, হাফিজ আবুল হোসেন খান, হাসান সিরাজুস সালেকিন, হাসান কাওসার আহমদ, মোঃ আব্দুল মুমিন, মনোয়ার হোসেন, মুহাম্মদ মুস্তাক আহমদ, মুসাদ্দিক আহমদ, নেসার আহমদ, নজমুল হোসেন, নুরুল মতিন চৌধুরী, রাজু মোহাম্মদ শিবলী, সিরাজুল ইসলাম হীরা, সৈয়দ জামিরুল ইসলাম বাবু, ড. মাহেরা রুবি, আসমা খান, ড. শিরিন সোবহানি, রওশনারা কবির এবং আনজুমারা বেগম।
অনুষ্ঠানের শেষে ২০২৩–২০২৫ সেশনের কার্যক্রমের রিপোর্ট উপস্থাপন ও ইয়ুথ কার্যক্রমের ওপর সচিত্র প্রতিবেদন প্রদান করা হয়। এছাড়াও সেশনের বিভিন্ন রিজিয়নের কার্যক্রমের ভিত্তিতে তাদের কাজের মূল্যায়ন ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবারের নতুন এসকল উদ্যোগ উপস্থিত সকলের প্রশংসা অর্জন করে।
উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতিদের বক্তব্য:
সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান জিলু বলেন, “এমসিএ বর্ণবাদ ও ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এজন্য সকলকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে হবে।
সাবেক সভাপতি দিলোয়ার হোসেন খান নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন “ইয়ুথদের উন্নয়নে সময়, মেধা ও সম্পদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের সেক্রেটারি শায়েখ মুসলেহ ফারাদি স্থানীয় দাওয়াহ কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সমাপনী বক্তব্যে নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ বলেন, আমরা এমসিএকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, যোগ্যতা, এবং এখলাসই হবে আমাদের সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহর সন্তুষ্টিই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।” তিনি এমসিএ’র ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এটি হবে বৃটেনে মুসলমানদের ঐক্য, নেতৃত্ব ও কল্যাণের রূপরেখা।