বিষাক্ত মানুষ সম্পর্কে সচেতন থাকুন : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন মতামত
শেয়ার করুন

অনুবাদ: মাসুম খলিলী

এক.. বিষাক্ত মানুষ শিকার নিয়ে খেলা পছন্দ করে। তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকুন। আপনি যে ‘খারাপ’ লোক তা বিশ্বাস করাবার জন্য তারা অন্যদের ম্যানিপুলেট করতেও দক্ষ। আপনি যা আসলেই করেননি তার জন্য আপনাকে দোষারোপ করা হলে তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আসলে এটাই জীবন। যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল সর্বশক্তিমানই যে সর্বজ্ঞ সে সম্পর্কে সচেতনতা।

দুই. মানুষ হিসাবে, যখন আমরা একটি সুন্দর জায়গায় থাকি তখন আমরা সর্বদা সেরাটি দেখতে চাই। জান্নাতে আমাদের এটাই হবে। দুঃখের বিষয়, আমরা অনেকেই এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি এবং আমাদের পরকালের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভুলে গিয়েছি। ট্র্যাক ফিরে পেতে চেষ্টা করুন।

তিন. লোকেরা আপনাকে কষ্ট দেবে, আপনাকে আঘাত করবে, আপনাকে হেয় করবে, আপনার মধ্যে নিজের সম্পর্কে খারাপ বোধ সৃষ্টি করবে। আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন তা এ ব্যাপারে ফলাফল নির্ধারণ করবে। মনে রাখবেন, যতক্ষণ না আপনি তাদের ক্ষমতায়ন করতে না চান ততক্ষণ পর্যন্ত তারা শক্তিহীন। তাদের প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ দেবেন না।

চার. জীবন আসলে একটি ভ্রমণ। এতে সফল তিনিই হন যিনি ভারসাম্যহীনতা না হারিয়ে চলাচল করতে পারেন। আপনার অতীত সম্পর্কে চিন্তা করবেন না, আত্ম-প্রেমে ডুবে যাবেন না, নিজের ভুলগুলি পুনর্বার করবেন না, নেতিবাচকতার দিকে মনোনিবেশ করবেন না, যাত্রাপথে অন্যকে সহায়তা করুন, আপনি যেখানেই যান দয়াশীলতার বিস্তার করুন!

পূনশ্চঃ

এক. আপনি যদি সর্বশক্তিমানের আপনার জন্য করা পুরো পরিকল্পনাটি দেখতে পান তবে এরপরও আপনি কি অভিযোগ করবেন? তিনি প্রকৃতপক্ষে সেরা পরিকল্পনাকারী। আপনি যদি আপনার সমস্ত পরীক্ষার শেষ ফলাফল দেখতে পান তবুও কী আপনি দু:খী হবেন? মনে রাখবেন, প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি রূপালী আস্তরণ থাকে। চলতে থাকুন, তাকে বিশ্বাস করুন।

দুই. ভাল কাজ করুন, এমনকি আপনার কাছে এটি একেবারে তুচ্ছ কাজ মনে হলেও । সর্বশক্তিমান সব দেখেন, শুনেন ও জানেন। তিনি এর জন্য আপনাকে পুরস্কৃত করবেন। তিনি মানুষের মতো নন, তিনি ভুল, ত্রুটি এবং সিস্টেমের ব্যর্থতার সম্পূর্ণ উর্ধে। মনে রাখবেন, তিনি নিজে নিখুঁত, তবে তিনি আমাদের কাছ থেকে পরিপূর্ণতার আশা করেন না। চান কেবল আন্তরিক প্রচেষ্টা!

তিন. আপনি যখন তার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন, তখন এটি এমন বাধাগুলো ভেঙে দেবেন যার অস্তিত্ব সম্পর্কে আপনি কখনো জানেন না। সুতরাং যখন আপনার হৃদয়ে কষ্ট হবে তখন প্রার্থনা করুন। সর্বশক্তিমানের হাতে সবকিছু সমর্পণ করুন। শেষ পর্যন্ত, তিনি সর্বশক্তিমান, যিনি আমাদের প্রত্যেকে কী পাবার যোগ্য সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আমাদের অন্তর ভালোবাসায় পূর্ণ করুন এবং আমাদের প্রাপ্যের চেয়ে আমাদের আরো বেশি দিন।

চার. কঠিন সময় ছদ্মবেশে আশীর্বাদই হয়। যতই কষ্ট হোক না কেন, এগিয়ে যান। এখানে শক্ত পাঠ থাকবে, তা থেকে শিখুন এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠুন। মনে রাখবেন, আমাদের সবারই হৃদয়ে কষ্ট এবং দুঃখ থেকে উদ্ভূত মুহূর্ত থাকে । এ সময়ে আপনি যখন সর্বশক্তিমানের ওপর সম্পূর্ণরূপে আস্থাশীল থাকবেন, তখন সেটাকেই বলে ঈমান।

পাঁচ. অন্তরকে পবিত্র করার জন্য প্রচেষ্টা চালান। কেন আমরা হৃদয়কে চাপে রাখছি? কারণ আপনি যা কিছু এতে ধারণ করেছেন আপনি যখন এই পৃথিবী ছেড়ে যাবেন তখন তা আপনার সাথে যাবে। আর. আমরা সবাই সময়ে সময়ে হতাশ হই। এই হতাশা আপনার ওপর চেপে বসার আগে তা ছেড়ে দেয়া জরুরি। তাই ছোট জিনিসকে উপেক্ষা করতে শিখুন।

দ্রষ্টব্যঃ

তিনিই তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর একটি কাল পর্যন্ত নির্দিষ্ট করেছেন। আর একটি নির্ধারিত সময়সীমা আছে, যা তিনিই জানেন। তবু তোমরা সন্দেহ কর। (সূরা আনআম: ২)

আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ´ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে এবং ভয় করে তাদের প্রতিপালককে ও ভয় করে কঠোর হিসাবকে। (সুরা রাদ: ২১)

তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। (সুরা ফুরকান : ৬৭);
এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থি জাতি বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের ওপর সাক্ষী হও এবং রাসুল সাক্ষী হন তোমাদের ওপর। (সুরা বাকারা : ১৪৩);

  • লেখক:  মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি  * অনুবাদ: মাসুম খলিলী, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *