‘বিভাজনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

বাংলাদেশ মতামত সময় টিভি সময় সংবাদ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার
‘বিভাজনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে’

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে গণকমিশনের দেওয়া শ্বেতপত্র নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে৷ এই শ্বেতপত্র নিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ৷

অভিযোগগুলোর ব্যাপারে তাদের ভাষ্য কী? ভবিষ্যত পরিকল্পনাই বা কী? কী ধরনের আন্দোলনের কথা তারা ভাবছেন? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান৷

ডয়চে ভেলে : গণকমিশনের প্রতিবেদনকে আপনারা অসত্য বলছেন৷ কেন বলছেন?

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান : গণকমিশনের যারা প্রবক্তা তারা আগে থেকেই বিতর্কিত এবং ইসলাম বিদ্বেষী৷ এদেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে সেটা তারা নষ্ট করার জন্য এটা করেছেন৷ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ আছে যেখানে আইএসসহ নানা ধরনের সংগঠন তৈরি করে তাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলা হয়েছে৷ তারা অতীতেও এগুলো নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন, কিন্তু সফল হয়নি৷ আমাদের দেশ যেহেতু মসজিদ এবং মাদ্রাসার দেশ, এখানে ওলামায়ে ইকরামরা অনেক বেশি সচেতন এবং শিক্ষিত৷ তারা এখানে একটা বিভাজন তৈরি করে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেশটাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন৷

ডয়চে ভেলে : ওয়াজের নামে নারী বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে থাকেন কেউ কেউ৷ এদের বিরুদ্ধে আপনারা কি কখনও পদক্ষেপ নিয়েছেন?

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান :
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার৷ ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা এবং অধিকার দিয়েছে, অন্য কোনো ধর্মে সেটা নেই৷ হিন্দু ধর্মে কোনো নারীর বিয়ের পর স্বামী মারা গেলে তিনি সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন৷ এমনকি বাবার সম্পত্তির অধিকার থেকেও তিনি বঞ্চিত হন৷ কিন্তু ইসলাম ধর্মে একজন নারী স্বামী এবং বাবা উভয়ের সম্পত্তির অধিকার পান৷ কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তো আমাদের নেই৷ আমরা এগুলোর প্রতিবাদ করি৷ আমরা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বক্তব্য রাখি৷ কেউ কেউ যদি এটা করে থাকেন তাহলে তারা কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য করেন৷

ডয়চে ভেলে : ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, টাকা পাচারের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা সত্য নয় কেন বলছেন? আপনি তো কারও ব্যক্তিগত বিষয় জানেন না?

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান : আজকে দেখেন এই দেশটা দুর্নীতির সূচকে কোন পর্যায়ে চলে এসেছে৷ এসব দুর্নীতি নিয়ে কেউ কথা বলে না৷ গণকমিশনের এই মেয়েটা তার ব্যক্তিগত জীবন আপনি দেখেন, তার মার সঙ্গে কী আচরণ করেছে৷ মা এবং ভাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বঞ্চিত করেছেন৷ তারা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন৷ তার মা আজ প্রবাসে৷ সে কীভাবে শান্তির কথা বলবে, যে নিজে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, সে কীভাবে অন্যের দুর্নীতির কথা বলবে? রাতের আঁধারে বোরকা পরে যিনি বড় অংকের টাকা দুর্নীতি করেন তিনি কীভাবে অন্যের কথা বলবেন৷ সামাজিক মাধ্যমে তো এগুলো ভাইরাল হয়েছে৷ডয়চে ভেলে : যদি কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা টাকা পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তখন আপনারা কী বলবেন?

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান : আপনারা জানেন আমাদের এই কওমি মাদ্রাসাগুলো জনসাধারণের সাহায্য-সহযোগিতায় চলে৷ জাকাত, ফিতরা, কোরবানির চামড়া এগুলো দিয়ে এই দ্বীনের প্রতিষ্ঠানগুলো চলে৷ প্রত্যেকটি মাদ্রাসায় অডিট হয়৷ সমস্ত আয়-ব্যয় তারা জনগণের সামনে তুলে ধরে৷ জঙ্গি অর্থায়নে তারা কীভাবে সাহায্য করবে? প্রশ্নই হঠে না৷ বরং জঙ্গিমুক্ত করার জন্য এই ওলামায়ে-ইকরামরা যে ভূমিকা রেখেছেন সেটা কখনই ফোর্স ক্রিয়েট করে করা যেত না৷ যদি সেটা হতো তাহলে লিবিয়া, সিরিয়া বা ইরাকে হতো৷ তাদের সামরিক শক্তি তো কম ছিল না৷ এগুলোর বিরুদ্ধে আমরাই সোচ্চার হয়েছি৷ আমরা শান্তির কথা বলি৷ আমরা যদি মাঠে ময়দানে কাজ না করতাম তাহলে মানুষের চরিত্রের অবক্ষয় হতো, সামাজিক অবক্ষয় হতো৷ আমরা মানুষকে আল্লাহর ভয়ের কথা বলি, আখেরাতের কথা বলি, জাহান্নামের কথা বলি৷

ডয়চে ভেলে : সমাজে আলেম-ওলামাদের শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়৷ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেই যখন এই ধরনের অভিযোগ আসে, তাহলে মানুষ কাদের মান্য করবে?

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান : সমাজে তো ওলামায়ে-ইকরামরা শ্রদ্ধার পাত্র৷ তারা দুর্নীতিগ্রস্ত, এই ধরনের তকমা যদি তাদের দেওয়া যায়, তাহলে তাদের সুবিধা হবে, যারা গণমাধ্যমের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে৷ আলেমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে৷ যাতে তাদের থেকে মানুষকে দূরে সরানো যায়৷ এই দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর টার্গেট তাদের৷ তারা অন্যের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই এই কাজ করছে৷ আমরা কাউকে ক্ষমতায় বসাতেও চাই না, ক্ষমতা থেকে নামাতেও চাই না৷ আমরা চাই এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে শান্তিতে চলবে৷ একজন অমুসলিমকেও ইসলাম যে অধিকার দিয়েছে সেটা দিতে হবে৷ তাদের ব্যক্তিগত জীবন যদি পর্যালোচনা করেন তাহলে বুঝতে পারবেন তারা কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এই ইস্যু সৃষ্টি করছে৷

ডয়চে ভেলে : অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ছড়ানোর যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা নিয়ে আপনি কী বলবেন?

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান : আমরা এটাকে সমর্থন করি না, করবও না৷ ইসলামের মধ্যে এমন কিছু নেই৷ একটি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহ রসুল সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে গেছেন৷

ডয়চে ভেলে : শ্বেতপত্রে ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট যে অভিযোগ আনা হয়েছে৷ আপনারা এসব অভিযোগ খন্ডন করেননি৷ কেন করছেন না?

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান : এটার জন্য তো আমাদের সময় দিতে হবে৷ তাদের অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে তথ্যবহুল জবাব দিতে হবে৷ তারা আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এনেছে, তার সুনির্দিষ্ট জবাবদিহি করতে হবে৷ ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে৷

ডয়চে ভেলে : ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মানুষ তো হেফাজতের তান্ডব দেখেছে৷ তাহলে আপনারা সন্ত্রাসের বিষয়টি কীভাবে অস্বীকার করবেন?

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান : আপনারা যেটিকে তান্ডব বলছেন, সেখানে কিছু অতিউৎসাহী মানুষ ঘোলাজলে মৎস শিকারের চেষ্টা করেছে৷ আমাদের মূল আন্দোলনটা ছিল, ঈমান-আকিদা ও ইসলামের হেফাজতের জন্য৷ কিন্তু সেখানে মানুষ ঢুকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে৷ তারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকারের সঙ্গে আমাদের নেতৃবৃন্দের যে সমঝোতা হওয়ার কথা ছিল, সেটা করতে দেয়নি৷ সেটা যদি হতো তাহলে আজকে যারা আস্ফালন দেখাচ্ছে তারা দেখাতে পারত না৷ কিছু মানুষ তখন দেখেছে সরকারের সঙ্গে যদি সমঝোতা হয়ে যায় তাহলে তাদের স্বার্থ উদ্ধার হবে না৷ তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ক্ষমতা থেকে হঠানোর চেষ্টা করেছে৷ ওই এজেন্ডা বাস্তবায়নে তারা কাজ করেছে৷

ডয়চে ভেলে : আপনারা গণকমিশনকে দমন করতে বলেছেন৷ না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন৷ কী ধরনের আন্দোলনের কথা আপনারা ভাবছেন?

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান : দমন একটা শক্ত কথা, কটু কথা৷ দমন করা বলতে আমরা যেটা বলেছি, আমরা সরকারের কাছে এর প্রতিকার চাইব৷ আমাদের যারা জাতীয় নেতৃবৃন্দ তাদের ব্যাপারে যদি কেউ কোনো কথা বলে সরকার তো তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে৷ বিচারের আওতায় আনা হয়৷ আমরাও ডিজিটাল আইনে মামলা করার জন্য জনমত সৃষ্টি করব৷ মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধের যে ষড়যন্ত্র সেটা বিরুদ্ধে আমরা জনমত সৃষ্টি করব৷ যাতে এদেশে আমরা শান্তিপ্রিয়ভাবে ইসলামের খেদমত করতে পারি৷ কিন্তু ইসলামের নামে কেউ যদি হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়, আমরা সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে নেই৷

ছবি: রয়টার্স
সূত্র: ডয়চে ভেলে

আরও পড়ুন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *