সাঈদ চৌধুরী
টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিসহ বিশ্বের ৭৮টি দেশের নেতৃবৃন্দ এই শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ন্যাটো এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসি সহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (৩ জুন ২০২৩) তিনি এ শপথ নেন। আঙ্কারার পার্লামেন্টে এরদোগান বলেন, আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে মহান তুর্কি জাতি ও ইতিহাসের সামনে আমার সম্মান ও অখণ্ডতার শপথ করছি- রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য সংবিধান, আইনের শাসন, গণতন্ত্র, আতাতুর্কের নীতি ও সংস্কার এবং ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রের নীতি রক্ষার।
বক্তব্যটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ৬৯ বছর বয়সী এ নেতার আজই নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করার কথা। পার্লামেন্টে শপথ অনুষ্ঠান শেষে রাজধানী আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এক জমকালো অনুষ্ঠান হবে, যেখানে বহু সংখ্যক বিশ্বনেতা উপস্থিত থাকবেন।
তুরস্কে শত বছেরর সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান পশ্চিমা নেতিবাচক প্রচার ও পূর্বাভাস এবং ইসলাম বিরোধী ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
২৮ মে অনুষ্ঠিত রান-অফ তথা দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। এবারে দেশটিতে ভোটার ছিলেন ৬ কোটি ৪২ লাখ মানুষ। রজব তাইয়েব এরদোগান পেয়েছেন ৫২ দশমিক ১৮ শতাংশ (২,৭৮,৩৪,৬৯২ ভোট) এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলু পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ (২,৫৫,০৪,৫৫২ ভোট)। নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৮৪ দশমিক ১৫ ভাগ ভোটার।
১৪ মে তুরস্কে প্রথম দফার ভোট হয়। এরদোগান ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ (২,৭১,৩৩,৮৩৭ ভোট) এবং তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ (২,৪৫,৯৪,৯৩২ ভোট) পেয়েছিলেন। এরদোগান তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২৬ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন। কিন্তু তুরস্কে ভোটের নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। তাই নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়।
তুরস্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত রান-অফ নির্বাচনে জয়ী হয়ে এরদোগান নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। হয়ে ওঠেছেন তুরস্কের সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক। ৯ বছর প্রেসিডেন্ট আর ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা এরদোগানের নেতৃত্বের প্রতি জনতার সুদৃঢ় সমর্থন দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এরদোগান ১৯৯৪ সালে প্রথম ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০০২, ২০০৭ ও ২০১১ সালের জাতীয় নির্বাচনেও জয় হয় এরদোগানের। ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। এরপর দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ভোটেও তার ওপরই আস্থা রাখেন তুরস্কের জনগণ।
এবার ২০২৩ সালে এসে নিজের সেই জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছেন এরদোগান। টানা তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। আগামী পাঁচ বছরও মুসলিম বিশ্বে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে চলা দেশটির নেতৃত্ব দেবেন তিনি।