‘পুলিশ বাথরুম থেকে পানি এনে বাসার সব বিছানায় ঢেলে দিছে’

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যখন একের পর এক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করছে তখন দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বিরোধী নেতা-কর্মীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করছে। অভিযোগ উঠছে যে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের আটক করতে না পেরে পরিবারের অন্য সদস্যদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেইজে দাবি করা হয়েছে, গত ২৯শে অক্টোবর থেকে সারাদেশে তাদের আট হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। “টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে বাসায় না পেয়ে তাদের পিতা, ভাই কিংবা অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে,” সোমবার এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

গত ২৮শে অক্টোবরের পর থেকে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিবের নজরেও এসেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক ২রা নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ অথবা খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার করা না হয়, সেজন্য তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি।

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম আশফাকের বাড়িতে পুলিশ হানা দেয় গত ৩১ শে অক্টোবর রাতে। গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক সংঘাতের পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন মি. আশফাক। তাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে বাড়িতে না পেলে তার ছোট দুই ছেলেকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ।

অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোনে মি. আশফাক বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেন, তার ছোট দুই ছেলের বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিলনা এবং তারা কখনোই রাজনীতির সাথে জড়িতও ছিলনা। মি. আশফাকের বড় ছেলে আনান ইসলাম আকাশ কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি।

“আমি ও আমার বড় ছেলে রাজনীতির সাথে জড়িত। এটা ঠিক আছে। আমাদের নামে যত মামলা ছিল সবগুলো মামলায় জামিন ছিল। আমরা নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. আশফাক। ছোট দুই ছেলে – শহীদুল ইসলাম অনিক ও মাকসুদুল ইসলাম আবিরকে – আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের একজন ডিগ্রি প্রথম বর্ষ এবং আরেকজন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

মি. আশফাক অভিযোগ করেন, তার ছোট দুই ছেলের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুরের মামলা দেয়া হয়েছে আটক করার পরে। অভিযানে গিয়ে পুলিশ ঘরের ভেতরে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

“পুলিশ বাথরুম থেকে পানি এনে বাসার সব বিছানায় ঢেলে দিছে। এসব ঘটনা কল্পনার অতীত,” বলেন মি. আশফাক। তবে এক্ষেত্রে পুলিশের ভাষ্য আলাদা। পুলিশের তরফ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন্স) মো. আল আমিন হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, যে দুজনকে আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। আটকের সময় আইন মেনে সবকিছু করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে।

মি. হোসাইন বলেন, বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম আশফাকের বাড়ির পাশে সরকারি গাড়ি ভাঙচুর এবং রেল লাইনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে তার ছেলেদের বিরুদ্ধে ‘সম্পৃক্ততার’ অভিযোগ পেয়েছে এবং সেজন্য তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *