পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে চরম ভোগান্তিতে প্রবাসীরা

প্রবন্ধ-কলাম সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ব্যারিস্টার নাজির আহমদ

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি valid legal instrument (বৈধ আইনি ডকুমেন্ট)। এটির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি বা অ্যাটর্নিরা তাদের উপর অর্পিত কার্য সম্পাদন করতে পারেন। এটা নিযুক্ত (appointed) অ্যাটর্নিরা এমনভাবে সম্পাদন করেন যেন (as if) মূল মালিকরাই করছেন। সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, বন্টন, মামলা দায়ের ও মামলা ডিফেন্ডসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এটা শত শত বছর ধরে চলে আসা স্বীকৃত আইনি পন্থা।

Unexpired (ভেলিড) বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়া এখন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করা যাচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশনে। তাও যদি আবেদন করার পর ২/১ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়া যেত তাহলে এই নিয়ম করার একটি যৌক্তিকতা হয়তো থাকতো। বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানাতে অনেক বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়ে। পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে ৬/৮ মাস বা এর চেয়েও বেশি সময় অপেক্ষা করেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পারসপোর্ট ইস্যু করা হয় মাত্র পাঁচ বছরের জন্য। ফলে অনেকটা চোখের নিমিষেই পাসপোর্টের মেয়াদ চলে যায়।

তাই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে নতুন নিয়মের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ প্রবাসীরা। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এসে দেখছি যেখানে সহজ হবার কথা সেখানে সহজ না হয়ে বরং বাংলাদেশে প্রবাসীদের সম্পত্তি রক্ষা ও অধিকার আস্তে আস্তে কঠিন ও সংকুচিত হয়ে আসছে।

পাওয়ার অ্যাটর্নি সম্পাদনে ভ্যালিড বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক নিয়ম কেন যে করা হলো তার যুক্তিসংগত কারণ ও ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সাথে ভ্যালিড বাংলাদেশি পাসপোর্ট বা বাংলাদেশি নাগরিকত্বের কি সম্পর্ক? পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা হাইকমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের স্বীকৃত (recognised) আইডি দেখতে পারে। সেই আইডির অংশ হিসেবে যেকোন ধরনের পাসপোর্ট যথেষ্ট ছিল এবং হওয়া উচিৎ। ভ্যালিড বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক এই নিয়মটি চালু করা হয়েছে মাত্র দু’বছর আগে। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে পঞ্চাশ বছর এই নিয়ম ছিল না। তখন তো প্রবাসীরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন এবং তাতে তো কোন সমস্যা হয়নি। এখন অযথা এই অযৌক্তিক নিয়ম বা শর্তারোপ করার হেতু কি?

স্বাধীনতার পর থেকে ৭/৮ বছর আগ পর্যন্ত বৃটেন থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়ার নিয়ম ছিল – পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ড্রাফট করে আইডিসহ যেকোন ব্যারিস্টার বা সলিসিটরের সামনে গিয়ে দস্তখত করতে হতো। উল্লেখ্য বৃটেনে qualified সব ব্যারিস্টার বা সলিসিটর হলেন “Commissioner for Oath. অর্থাৎ তারা Oath তথা শপথ এডমিনিস্টার করতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। ব্যারিস্টার বা সলিসিটর sign ও seal দেয়ার পর সম্পাদিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নিকে Foreign and Commonwealth Office -এ পাঠানো লাগতো Legalisation করার জন্য। Legalisation হয়ে আসার পর হাইকমিশনে পাঠানো লাগতো তা Attestation করার জন্য। উল্লেখ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনের জন্য তখন সশরীরে কেবলমাত্র ব্যারিস্টার বা সলিসিটরের সামনে উপস্থিত হতে হতো। Foreign and Commonwealth Office বা হাইকমিশনে সশরীরে যেতে হতে না। পোস্ট/ডাক বা প্রতিনিধির মাধ্যমে পাঠালে হতো।

কিন্তু হঠাৎ করে ৭/৮ বছর আগে নিয়ম করা হলো যে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সশরীরে হাইকমিশনে আইডিসহ (যেকোন ধরনের পাসপোর্ট) উপস্থিত হতে হবে। এতে প্রবাসীরা বিশেষ করে যারা দূরে থাকেন বা বয়স্ক বা শারিরীক প্রতিবন্ধী তারা কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলেন। তবে হাইকমিশন কয়েক জায়গায় মোবাইল কনস্যুলার সেবা চালু করায় সমস্যা কিছুটা দূর হয়েছিল। কিন্তু দু’বছর আগে ভ্যালিড বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক নিয়ম চালু করায় লক্ষ লক্ষ প্রবাসীরা পড়েছেন মারাত্মক বিপাকে।

যেকোন স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের Competent Public Authority দ্বারা ইস্যুকৃত পাসপোর্টই তো সর্বোচ্চ আইডি। এটা দিয়েই তো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে পারার কথা। বৃটিশ পাসপোর্ট বা বৃটিশ পাসপোর্টে যাদের “No visa required for travel to Bangladesh” স্টাম্প/স্টিকার আছে তাদেরকে কেন এটা দিয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে দেয়া হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বা পিতামাতার নাগরিকত্ব বা বাংলাদেশের সাথে যথাযথ connection যথাযথ ডকুমেন্ট দিয়ে প্রমাণ করা ছাড়া কিন্তু “No Visa required for travel to Bangladesh” stamp/স্টিকার পাওয়া যায় না। এতো কিছুর পরেও এটা দিয়ে কেনো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে দেয়া হয় না তার ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায় নি।

অনেক বৃটিশ নাগরিক তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বা সংযুক্ত আবর আমিরাতের দুবাইতে ইনভেস্ট করেছেন, কিনেছেন বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট। তারা সহজেই বৃটিশ পাসপোর্ট দিয়ে লেনদেন করছেন, বিক্রি বা হস্তান্তর করছেন তাদের সম্পত্তি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে। যেখানে তো তুরস্ক বা সংযুক্ত আবর আমিরাত শর্ত দেয়নি যে, তাদের দেশের ভ্যালিড পাসপোর্ট লাগবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে। অনুরূপভাবে চীন, জাপান ও রাশিয়ার নাগরিকদের প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট আছে লন্ডনের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে। বৃটিশ সরকার যদি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে ভ্যালিড বৃটিশ পাসপোর্ট থাকার শর্ত জুড়ে দিতো তাহলে ঐ দেশগুলোর বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যেত। ফলে লন্ডন অনেকটা ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়। আচ্ছা, বৃটেন, সংযুক্ত আবর আমিরাত ও তুরস্কের কথা না হয় বাদই দিলাম, বাংলাদেশের অনেক নাগরিকদের রিয়েল এস্টেটে ইনভেস্টমেন্ট আছে মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশে। তারা যদি বাংলাদেশের মতো নিয়ম করে যে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে তাদের স্ব স্ব দেশের ভ্যালিড পাসপোর্ট লাগবে, তখন কেমন হতো বা দেখতে কেমন লাগতো?

সম্প্রতি কথা হয়েছিল বৃটিশ-বাংলাদেশি একজন শীর্ষ ব্যবসায়ীর সাথে। আলাপে তিনি জানালেন যে তার সম্প্রতি ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি এসেট যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি (যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবীকে অ্যাটর্নি বলা হয়) তাকে বললেন যে, কম্পিউটার থেকে একটি sample পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ডাউনলোড করত: প্রিন্ট করে দু’জন সাক্ষীর সামনে সই করে পাঠিয়ে দিন। কোন ল’ইয়ারের কাছে যাবারও দরকার নেই কেননা আপনার এসেট বিক্রি করে তো আপনার একাউন্টেই ডলার জমা হবে। এই প্রসঙ্গ টেনে বৃটিশ-বাংলাদেশি সেই শীর্ষ ব্যবসায়ী আফসোস করে বললেন “কত সহজে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে আমার ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের এসেট বিক্রি করলাম যুক্তরাষ্ট্রে। অথচ ছোট একটি বিষয়ে বাংলাদেশে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়াটাতে কত না ঝামেলায় ফেলানো হয়েছে।” তিনি আরও বলেন “দেশের সমৃদ্ধি হয় এবং দেশ এগিয়ে যায় regular transactions, give and take, দেয়া-নেয়া, আদান-প্রদান ও লেনদেনের মাধ্যমে। নতুন নিয়ম করে প্রবাসীদেরকে বিড়ম্বনায় ফেলে, তাদের সম্পত্তিকে stalemate (অচলাবস্থা) কি অর্জন করা হচ্ছে আমার বুঝে আসে না।” তার কথার সাথে দ্বিমত করার কোনো স্কোপ দেখি না।

লন্ডনে অবস্থানরত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সাবেক সিনিয়র বিচারপতির সাথে কথা হলো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে ভ্যালিড বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক অভিনব নিয়ম নিয়ে। তিনিও বললেন পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সাথে পাসপোর্ট বা নাগরিকত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। বড়জোর যথাযথ আইডি দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশে সুপ্রীম কোর্টে প্র্যাকটিস করছেন এমন একজন আইনজীবীর সাথে কথা বললাম। তিনি জানালেন চট্রগ্রাম পোর্টে অহরহ বিদেশি পাসপোর্ট দিয়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করা হচ্ছে। তাহলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্যমূলক ও বিমাতাসুলভ নিয়ম করার কারণ কি?

একজন প্রবীণ বয়স্ক ব্যক্তি ফোন করছিলেন তাঁর একটি পাওয়ার এব অ্যাটর্নির ব্যাপারে। বললেন মাস খানেক আগে তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেছেন। তিনিও সপ্তাহে ৩ বার কিডনীর জন্য ডায়ালাইসিস নেন। তিনি নিজে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বাংলাদেশ সফরে অক্ষম। তাঁর সম্পত্তির ব্যাপারে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে পারছেন না। দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে পাওয়ার অব অ্যাটর্নিসহ প্রবাসীদের বিভিন্ন অধিকারের ব্যাপারে কথা বলি বলে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন “ব্যারিস্টার সাব, আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না। দেশে যেতেও পারছি না, এখান থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নিও দিতে পারবো না। এমন দেশ কি চেয়েছিলাম? এভাবে জানলে দেশে কোন টাকাই পাঠাতাম না। দেশে কোন সম্পদই করতাম না।” তাঁর কথায় ঠায় বসে রইলাম। কোনো জবাব দিতে পারিনি প্রবীণ বয়স্ক এই মুরব্বীকে।

প্রবাসীরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নিসহ নানান সমস্যায় জড়িত। এ গুলো দেখার বা সুরাহা করার যেন কেউ নেই। প্রবাসে যারা সরকারি দল করেন তারা অনেকটা মুখে লাগাম দিয়ে বসে আছেন। এটা সব সরকারের সময়ই ঘটে। উপযুক্ত চ্যানেলে প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া তুলে ধরার পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ এলে তাদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে ফটো তোলাকেই তারা শ্রেয় মনে করছেন। তাদের দল ক্ষমতায় থাকায় তারা হয়তো অন্যদের চেয়ে সুযোগ সুবিধা ও অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। এটা সাময়িক। সরকার পরিবর্তন হলে তারাও পড়বেন বিপদে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী লন্ডন সফরে এলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আমাদের এক ছোট ভাই ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধূরী তাদের এক দলীয় মিটিং-এ অত্যন্ত সাহস করে এই ইস্যুটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনে। আমরা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখেছি প্রধানমন্ত্রী প্রতিউত্তরে তাকে বলেন “বৃটিশ আইন কি বলে?” আমি আশ্চর্যিত হয়েছি আমলারা প্রধানমন্ত্রীকে এই ইস্যুতে কিভাবে অন্ধকারে রেখেছেন! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বৃটিশ আইন অত্যন্ত উদার এ ক্ষেত্রে। কোনো বাঁধা তো নয়ই, বরং সহায়ক। আপনি চাইলেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন, দূর করতে পারেন প্রবাসীদের চরম ভোগান্তি। অনেক কিছুতে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত আপনি নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট আমলাদেরকে আপনার একটি ধমকই যথেষ্ট দু’বছর আগে চালু হওয়া বৈষম্যমূলক নিয়মের আগে ফিরে যাওয়া। আর এতে পাবেন আপনি কোটি প্রবাসীর অকৃত্রিম ভালবাসা।

মুক্তিযুদ্ধে বিলেত প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য, কি-না তারা করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন ট্রেজারিতে কোনো অর্থই ছিল না তখন বিলেত প্রবাসীরা অর্ধ মিলিয়ন পাউন্ডের উপর কন্ট্রিবিউট করেছেন। গত অর্ধ শতাব্দি ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখে ইনভেস্ট করেছেন, জায়াগা-জমি কিনেছেন, সম্পত্তি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে অভিনব নিয়ম তাদেরকে আজ চরম ভোগান্তিতে ও বেকায়দায় ফেলেছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আশু প্রয়োজন।

নাজির আহমদ: বিশিষ্ট আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং ইংল্যান্ডের প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার। Email: ahmedlaw2002@yahoo.co.uk

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *