পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন  এখন থেকে লর্ড ক্যামেরন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাকে। (ছবিতে) নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণার পর পররাষ্ট্র দপ্তরে যাওয়ার সময় তিনি হাসিমুখে ছিলেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ব্রিট্রেনের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসে ক্যামরনের মনোনয়ন অনুমোদন দিয়েছেন রাজা চার্লস। এর মাধ্যমে পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্য না হলেও লর্ড হয়ে একজন মন্ত্রী হিসেবে সরকারের ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়।

ডেভিড ক্যামরন ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্রেক্সিট গণভোটের ফল প্রকাশের পর তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। গণভোটে ব্রিটিশ জনগন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন।

ক্যামেরন তার সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘গত সাত বছর থেকে যদিও আমি সামনের সারির রাজনীতির বাইরে ছিলাম, তবে আশা করি কনজারভেটিভ নেতা হিসেবে এগারো বছরের এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ছয় বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে আমি সক্ষম হব।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্র্যাভারম্যানকে সরানোর পর পরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ডেভিড ক্যামেরনের নাম ঘোষনা করেনে। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সরকার পরিচালনায় ঋষি সুনাককে সহায়তা করতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ক্যামেরন।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সরকারে ফিরে আসায় সামাজিক মাধ্যমে বেশ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেকই বিস্মিত হয়েছেন। তবে সরকারী দলের লোকেরা খুব চাঙ্গা হয়ে আশাবাদী অভিমত ব্যক্ত করছেন। তাদের মতে ক্যামেরনকে সরকারে নিয়ে বেশ চমক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক।

একইভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সুয়েলা ব্রাভারম্যানকে বরখাস্ত করে প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও তারা বলছেন। নিজ দেশের পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ফিলিস্তিনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শনের জন্য দোষারোপ করার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আজ সোমবার তাকে বরখাস্ত করেছেন।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বড়ধরনের বিক্ষোভ হয় ১১ নভেম্বর শনিবার। এতে ৮ লাখের বেশি মানুষ অংশ নেন। অংশ গ্রহনকারী অনেকে বলেছেন প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে এই শনিবার ছিল আর্মিস্টিক ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মরণ দিবস। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ প্রধানকে বিক্ষোভ বাতিল করতে বলা হয়েছিল। শনিবার এই বিক্ষোভ যাতে না হয় সেই পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মার্ক রাওলি সেই অনুরোধ নাকচ করে দেন। তিনি বলেছেন, বিক্ষোভে বড় ধরনের সহিংসতা হওয়ার কোনো ইঙ্গিত বা আশঙ্কা নেই। তাই সরকারি অনুরোধে এ বিক্ষোভ বন্ধ করার সুযোগ নেই।

একই দিনে বিক্ষোভ ও স্মরণ অনুষ্ঠানের শৃংখলা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল। সেনোটাফ স্মৃতিসৌধে আয়োজিত সৈনিকদের স্মরণ দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। সপ্তাহান্তে কয়েক হাজারেরও বেশি অফিসার রাজধানীর রাস্তায় দারুণভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বিক্ষোভকে ‘বিদ্বেষমূলক মিছিল’ বলার পর জনমনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

অনেকে বলছেন, ব্র্যাভারম্যানের মন্তব্য কট্টর ডানপন্থিদের আকৃষ্ট করেছে এবং ফিলিস্তিনি সমর্থকদের মোকাবেলা করার জন্য একটি অজুহাত খুঁজে পেয়েছে। সুয়েলা ব্রেভারম্যানকে বরখাস্তের দাবি তুলেন মানবতাবাদী জনতা।

স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হামজা ইউসুফ বলেছেন, ব্রিটেনে আইন প্রয়োগের তদারকি করা ব্র্যাভারম্যানকে এখন পদত্যাগ করতে হবে। ইউসুফ এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক ফার-রাইট গ্রুপকে উসকে দেওয়া হয়েছে।

লেখক, সময় সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *