অনুবাদ: মাসুম খলিলী
এক. নিজের সম্পর্কে কাউকে বেশি বলার ভুল করবেন না। ওভারশেয়ারিং খারাপ। এটি তাদের কাছ থেকে নেতিবাচক শক্তি ও ভাইবকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে যারা আপনার জন্য ভাল চান না। শুধুমাত্র তাদের সাথে শেয়ার করুন যারা প্রমাণ করেছেন যে তারা সত্যিই আপনার বিষয়ে যত্নশীল।
দুই. মানুষ জানতে চায়, কেন ভাল মানুষের সাথে খারাপ জিনিস ঘটে, যখন ভালটা মন্দদের কাছে যায়? আপনি যদি আরও গভীরে যান, আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার জীবনে যা কিছু ঘটে তা সর্বশক্তিমানের পরিকল্পনা অনুসারে হয়। এটি সর্বদা আপনার কল্যাণের জন্যই কার্যকর হবে, তা এই পৃথিবীতে হোক অথবা পরকালে। ধৈর্য্য ধারণ করুন।
তিন. আমরা প্রায়শই লোকেদের তাদের ভাগ্যকে অভিশাপ দিতে শুনি, ভাবছি কেন সবসময় তাদেরই কষ্ট পেতে হয়। কেন সর্বশক্তিমান আমাকে পরীক্ষা করছেন? যারা পাপ করে তাদের কেন তিনি বেশি সম্পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেন? সত্য হল আমাদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে পরীক্ষা করা হয়। তিনি জানেন তিনি কি করছেন। চলতে থাকুন।
চার. কেউ আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে অথবা কোন নিয়োগকর্তা আপনাকে বরখাস্ত করেছে- ইত্যাদি দিয়ে আপনার নিজের মূল্য নির্ধারণ করবেন না। সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞ। তিনি আপনাকে এমন জিনিস থেকে রক্ষা করছেন আপনি এখনও সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তবে শেষ পর্যন্ত তা জানবেন। এটাই আমাদের রবের করুণা। তিনি সর্বদা আমাদের পিছনে আছেন! তাঁর উপর বিশ্বাস রাখুন!
পূনশ্চঃ
এক. লোকেরা যখন আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং পরিকল্পনা আঁটে তখন দুঃখ করবেন না। সর্বশক্তিমান সব কিছুর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। মনে রাখবেন, তাঁর ইচ্ছাই সমস্ত কিছুর ওপরে।
দুই. আগে ঘর এরপরই পর। তাই আপনার বন্ধুদের আপনার পরিবারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করবেন না। কিছু লোক তাদের বাড়ির বাইরের লোকদের সাথে খুব ভাল, কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে আপত্তিজনক কথাবার্তা ও কাজ দিয়ে খারাপ ব্যবহার করে। যদি সেটি হয়ে থাকে তবে এখন আপনার করার অনেক কিছু আছে।
তিন. সর্বশক্তিমান। আপনি সত্যিই সেরা পরিকল্পনাকারী। আমরা যখন হাল ছেড়ে দেওয়ার মত অনুভব করি তখন আমাদের শক্তি দেওয়ার জন্য আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আতঙ্কিত না হতে শিখেছি কারণ আমরা জানি আপনি আমাদের সাথে আছেন। আমাদের অন্তরকে ঈমানে দৃঢ় রাখুন। আপনি আমাদের জন্য যা পরিকল্পনা করেছেন আমরা তার সমস্ত কিছুর উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করি। আমীন
চার. আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু পোস্ট করার আগে ভাবুন! শেষ বিচারের দিনে, আপনি সর্বশক্তিমানের দরবারে দাঁড়িয়ে প্রতিটি টুইট, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি পোস্ট, প্রতিটি লাইক, প্রতিটি কটু বাক্য ইত্যাদির জন্য জবাবদিহি করছেন। এসময় আপনি কি শান্ত ও খুশী হবেন নাকি দুঃখিত বা বিব্রত হবেন?
পাঁচ.আমরা সবাই মানুষের জীবন নিয়ে বিশেষজ্ঞ। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের এমন করে দিয়েছে! অন্যরা অনলাইনে কী পোস্ট করে এবং আমরা কী শুনি তার ভিত্তিতে সমস্ত কিছু জেনে গেছি বলে আমরা দাবি করি। আমরা যা জানি না, তা আমরা বানিয়ে নেই। তা আমরা সাজিয়ে নেই। আমরা ভুলে গেছি যে বিচারের দিন আমাদের এসবের প্রত্যেকটির জন্য জবাবদিহি করতে হবে! সতর্ক থাকুন!
ছয়. বাতিল সংস্কৃতি থেকে সাবধান। এটি ঘটে যখন কোনও সেলিব্রিটি বা জনব্যক্তিত্ব আপত্তিজনক কোন কিছু করে বা করতে বলে। প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়ায় এর প্রকাশ্য ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয়। তারপরে সে ব্যক্তিকে বাতিল করা এবং তার ক্যারিয়ার শেষ করার জন্য আহ্বান আসে। কোন কিছুতেই হুমড়ি খেয়ে পড়বেন না এবং প্রমাণ ছাড়া কোন কাজ করবেন না!
দ্রষ্টব্যঃ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের (মুমিন/মুসলমান) ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। (পক্ষান্তরে ইসলাম বিদ্বেষীরা) তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে ক্রটি করবে না; তারা যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে তা-ই তারা কামনা করে। তাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা গোপন রাখে তা আরো গুরুতর। তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি, যদি তোমরা অনুধাবন কর।‘(সুরা আলে-ইমরান : ১১৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফিক এবং যার মধ্যে তার একটি দেখা যাবে তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থাকবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিহার করবে— (১) যখন তার নিকট কোনো আমানত রাখা হয়, সে তা খেয়ানত করে, (২) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, (৩) যখন অঙ্গীকার করে, ভঙ্গ করে এবং (৪) যখন কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করে, তখন সে অশ্লীলভাষী হয় (অশ্লীল গালমন্দ করে)। (মিশকাত : ৫৬)
* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি
