‘নজিরবিহীন ভোটবিমুখতা’

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

‘নজিরবিহীন ভোটবিমুখতা’ – এটি দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার প্রথম পাতার খবর। এতে বলা হয়েছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের পর ২০২৪ সালের শুরুতে আরেকটি উচ্ছ্বাসহীন নজিরবিহীন ভোটবিমুখতার জাতীয় নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ।

কারণ, ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি এতটাই কম ছিল যে কোথাও কোথাও মাইকিং করেও ভোটার আনা যায় নি।

খবরটিতে বলা হয়, ভোট উৎসবের পরিবর্তে সর্বত্র যেন ভোট বর্জনের এক নীরব প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে। এদিন সকাল ৮টায় সারা দেশে ভোট গ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টা পরেও ভোট দেয়ার হার কোথাও ছিল ৩ শতাংশ, কোথাও ৫ কিংবা ৮ শতাংশ।

কম ভোটার উপস্থিতি ছাড়াও সারা দেশে দিনভর ভোটকে কেন্দ্র করে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, জাল ভোট, ব্যালট বাক্সে আগুন, ব্যালট পেপার ছিনতাই, এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

নির্বাচন নিয়ে নিউএইজ পত্রিকার শিরোনাম Low turnout, rigging, boycott mark JS polls অর্থাৎ ‘কম ভোটের হার, কারচুপি, বর্জন নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন’।

এই খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ভোটারের কম উপস্থিতি, সহিংসতা, কারচুপি এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দলসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ফলে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে।

‘নিরুত্তাপ ভোট, উপস্থিতি কম’ শিরোনামে প্রায় একই বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে দৈনিক প্রথম আলো’র প্রথম পাতার প্রধান খবরে।

খবরটিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও এর শরিক-মিত্রসহ বিভিন্ন মহলের একমাত্র লক্ষ্য কেন্দ্রে বেশি ভোটার আনা হলেও শেষ পর্যন্ত তারা সেভাবে কেন্দ্রে ভোটারদেরকে আনতে পারে নি।

বিএনপিসহ আন্দোলনকারী দলগুলোর ভোট বর্জন, হরতাল আতঙ্ক, অনীহার কারণে ভোটার কতটা আসবেন— নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই সেই প্রশ্ন বারবার এসেছে।

ভোট গ্রহণ শেষে রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। অবশ্য তিনি বলেছেন, এটা চূড়ান্ত নয়, হেরফের হতে পারে। তবে সিইসির এই হিসাব ধরলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়া নির্বাচনের মধ্যে অন্যতম হল এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

এদিকে, বেলা তিনটা পর্যন্ত সারা দেশে ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছিল ইসি। পরে ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়ার যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তাতে শেষ এক ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৩ শতাংশের বেশি।

এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের বর্জনের মুখে ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল। অবশ্য সেই ভোটের পর বিএনপির সরকার মাত্র দেড় মাসের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।

খবরটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনগুলোর বেশিরভাগেই নৌকা ছাড়া প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট দেখা যায় নি।

এ নিয়ে ডেইলি স্টার লিখেছে, ‘AL helps itself to fourth straight win’ অর্থাৎ নিজেকেই চতুর্থবারের মতো বিজয়ী করলো আওয়ামী লীগ।

এই খবরে বলা হয়েছে, আগে থেকেই যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল, সেভাবেই রেকর্ড চতুর্থবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হতে চলেছে আওয়ামী লীগ, যদিও সবচেয়ে কম ভোটের দিক থেকেও দ্বিতীয় রেকর্ড করা হয়েছে।

‘ভোট বর্জন’ করায় ভোটারদের ধন্যবাদ বিএনপিসহ ২৭টি দলের- বণিক বার্তার প্রথম পাতার এই খবরে বলা হয়েছে যে রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জন করায় ভোটাররদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপিসহ ২৭টি দল।

নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে ভোটগ্রহণ শেষে রাতে গণমাধ্যমে এক বিবৃতি দেন বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে সরকারের তোড়জোড়ে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো শুরু থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করে। গণতন্ত্রকামী দলগুলোর আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও রাষ্ট্রযন্ত্রে নিজের ‘সেটআপে’ জাতীয় নির্বাচন সম্পাদন করতে অনড় থাকে সরকার। ফলে আন্দোলনরত অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা ও দাবিকে অগ্রাহ্য করে তামাশার নির্বাচন করতে উঠে-পড়ে লাগে।”

ভোটে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে দাবি করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আজকের জালিয়াতির নির্বাচনে যেটি উন্মোচন হয়েছে। তা হলো, বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনাকে সম্পূর্ণরূপে অপমান করা।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের বিবেকবান লোকও আজ ভোট দিতে যায়নি বলেও খবর পেয়েছি। ২ শতাংশের বেশি ভোটার কেন্দ্রে নিতে পারেনি।”

“২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে গরু-ছাগল দেখা গেছে, এবারের ভোটের দিন যুক্ত হয়েছে বানরও। প্রহসনের তামাশার ভোট, যেখানে নিজেরা নিজেরা ভোট করছে সেখানেও এ অবস্থা। আমরা কী কারণে ভোট বর্জন করেছি, তা প্রমাণিত।”

ঝড় তুলে ‘বিরোধী’ স্বতন্ত্র, এটি দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রথম পাতার খবর। এতে বলা হয়েছে, ভোটের মাঠে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নৌকার সঙ্গে পাল্লা দিলেও নির্বাচনে তেমন বেশি আসন পায় নি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

এমনকি, নির্বাচনের শুরু থেকে ভোটের মাঠে উৎসবের আমেজ এনে দেওয়া আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঝড়ের সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছিল। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছিল, ততই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা বাড়ছিল।

মনে করা হচ্ছিল, ৬০-৭০টি আসনে তারা জিততে পারে। আর ১০০ আসনে চ্যালেঞ্জ করতে পারে নৌকা প্রার্থীকে। কিন্তু বিভিন্ন সংসদীয় আসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা ভোটের মাঠে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে থাকলেও ব্যালটে নৌকা প্রতীকেই সিল মেরেছেন তারা।

বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ হামলা গুলি, নিহত ২, এটি যুগান্তর পত্রিকার প্রথম পাতার খবর। খবরটিতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোববার বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, হামলা, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

কিছু কেন্দ্র দখল, জালভোট, এজেন্টকে মারধর ও বের করে দেওয়াসহ নানা অনিয়ম হয়েছে। এসব ঘটনায় ২ জন নিহত ও ১৬ গুলিবিদ্ধসহ ১৩৩ জন আহত হয়েছেন। অনিয়মের কারণে চারটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ২৭ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। – বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *