বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতে নজরুল সমুদ্রের মতো গভীর ও ব্যাপক। তাঁর গানের সীমাহীন ঢেউ ও কবিতার গর্জন বাংলা অঞ্চলের মানুষের মনে ও মননে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে আসছে শতাব্দী কালব্যাপী। বিশেষভাবে বাঙালি মুসলমানের ‘সাংস্কৃতিক আইকন’ হিসেবে নজরুলের গ্রহণযোগ্যতা অদ্বিতীয়। তবে নজরুল বিচিত্র পরিচয়ে পরিচিত, জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী। বিশেষভাবে তাঁর কবিতা, সঙ্গীত ও ঘটনাবহুল জীবনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। কবিতা দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্য জয় করেছেন; নতুন একটি জগৎ সৃষ্টি করেন। গানের ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধন করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেন। অন্যদিকে বাঙালি মুসলমানের পুনর্জাগরণ তাঁর হাতেই সুসম্পন্ন হয়। বাংলা কথাসাহিত্য তাঁর সৃজনে নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়। সাংবাদিকতায় বিরল প্রতিভা বিচ্ছুরিত হয়। তবে প্রাবন্ধিক নজরুলের পরিচয় খুব একটা শোনা যায় না। তিনি যে শুধু বাংলা সাহিত্য নয়; বিশ^সাহিত্য সম্পর্কে ব্যাপক ও গভীর ধারণা রাখতেন- সে বিষয়ে আমাদের জানাশোনা সীমিত। ‘বর্তমান বিশ্ব-সাহিত্য’ প্রবন্ধটি তাঁর মননশীল প্রাবন্ধিকের পরিচয় বহন করে। এখানে নজরুলের সাহিত্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত। সেইসাথে ‘জন-সাহিত্য’ অভিভাষণেও সে-মনোভাব প্রকাশিত।
নজরুল বিশ্বসাহিত্যকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করেন: এক. স্বপন-বিহারী, দুই. মাটির দুলাল। একদিকে ইংরেজ কবি শেলীর স্কাইলার্ক বা মিল্টনের বার্ডস অব প্যারাডাইসের মতো পৃথিবীর মাটি থেকে অনেক উপরে আকাশের কাছাকাছি যার বিচরণ ক্ষেত্র – স্বপ্নলোকে উড়ে উড়ে বেড়ানো পাখি শুধু সন্ধান করে স্বর্গের ঠিকানা। তাই কবি মাটি ও মানুষ থেকে দূরবর্তী আকাশ-স্বপ্ন-স্বর্গলোকের সন্ধানী সাহিত্যকে বলেন: স্বপন-বিহারী। অন্যদিকে মা, মাটি ও গণমানষের নিকটবর্তী; গাছের শেকড়ের মতো মাটির গভীরে বিস্তৃত এবং বাস্তব জীবন ও জগৎ-কেন্দ্রিক সাহিত্যকে অভিহিত করেন: মাটির দুলাল। এই দুই ধরনের প্রবণতাসম্পন্ন অর্থাৎ রোমান্টিক ও রিয়ালিস্টিক সাহিত্যকে কবি নির্দেশ করেন।
প্রথম বিশ^যুদ্ধে কবি নজরুল সরাসরি যোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্ব ও বিশ্বসাহিত্যের সাথে পরিচিত হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগের বছরই (১৯১৭) রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব হয়। সমাজবাদী রাষ্ট্র কায়েমের সাথে সাথে সমাজবাদী ও বাস্তববাদী সাহিত্যের প্রভাব সমগ্র বিশ্বসাহিত্যে ও বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সাহিত্যে সমাজ বাস্তবতার যে প্রসারতা সেদিক বিবেচনা করে কবি বাস্তববাদী সাহিত্যের প্রতি নিজের পক্ষপাত জানিয়েছেন। শিল্পী-সাহিত্যিকের সমাজচেতনা সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনা যে মার্কস, এঙ্গেলস এবং তাদের অনুসারীদের দ্বারাই শুরু হয়েছে তা নয়।
বস্তুতপক্ষে মার্কসবাদের আবির্ভাবের অনেক পূর্বেই বুর্জোয়া শিল্পী সাহিত্যিকদের দ্বারাই শিল্পী সাহিত্যিকের সমাজচেতনা সম্পর্কিত প্রশ্নটির সূত্রপাত ঘটে। এ প্রসঙ্গে রোমান্টিক কবি শেলীর বিখ্যাত রচনা ‘The Defence of Poetry’ বিশেষভাবে স্মরণীয়। উনশ শতকের বিশের দশকে লিখিত এই রচনাটিতে শেলী তৎকালীন প্রগতিশীল ইউরোপীয় বুর্জোয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হিসেবে শিল্পী-সাহিত্যিকের সামাজিক দায়িত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং তাতে তিনি শুধু যে শিল্পী-সাহিত্যকের সমাজচেতনার কথা বলেন তা-ই নয়; সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাদের সক্রিয় ভূমিকার কথাও তিনি আলোচনা করেন। কাজেই লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকের সমাজচেতনার বিষয়টি মানব ইতিহাসে মার্কসবাদীদের আবিষ্কার নয়। এর ইতিহাস শিল্প-সাহিত্যের আদি ইতিহাসের মতোই প্রাচীন। আদিম সাম্যবাদী ব্যবস্থা, দাস ব্যবস্থা, সামন্ত ব্যবস্থা ও বুর্জোয়া ব্যবস্থা প্রত্যেকটির মধ্যেই শিল্পী-সাহিত্যিকের সমাজচেতনার প্রশ্নটি নানাভাবে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন যুগের নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে শিল্পী-সাহিত্যিকরা নিজেরাই এ বিষয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য আলোচনা এবং উদাহরণ স্থাপন করেছেন। সামাজিক সত্তা হবার ফলেই সমাজজীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতায় কবি সাঁতার কাটেন। সমাজে ঘটমান বিষয়াবলীকে অস্বীকার করতে পারেন না। তবে কবি-শিল্পী সমাজ-সংস্কারক নন, বরং সমাজ-দ্রষ্টা হিসেবে নিজের কাব্যলোকে সৃজনশীল। প্রবহমান সমাজজীবনের অঙ্গীভূত হয়েও আলাদা এক প্রকৃতি নিয়ে বিরাজমান।
বিশ্বসাহিত্যে যুগে যুগে সমাজচেতনার নানা মাত্রিক দিকগুলো প্রতিফলিত হয়ে আসছে। ইংরেজি কবিতায় ষোল শতকের মাঝামাঝি থেকে রেনেসাঁসের প্রভাবে মানুষের জন্যে একটি নতুন ও উন্নত জীবনের দ্বার উন্মুক্ত হবার প্রত্যয় সমাজচৈতন্যে অনুভূত হয়। পরবর্তীকালে ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯) সমগ্র ইউরোপের সমাজ-রাজনীতি ও চিন্তা-চেতনার বৈপ্লবিক রূপান্তরের মহত্তম সাংগঠনিক রূপ হিসেবে প্রকাশিত, যার প্রভাব-প্রতিক্রিয়া বিশ্বসমাজ, রাজনীতি ও চৈতন্যপ্রবাহে হয়ে ওঠে দূরসঞ্চারী। আধুনিক কবিতায় এই ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব অত্যন্ত গভীর। ওয়ার্ডস্ওয়ার্থ (১৭৭০-১৮৫০), এস. টি. কোজরিজ (১৭৭২-১৮৩৪), পি. বি. শেলী (১৭৯২-১৮২২), জন কীটস্ (১৭৯৫-১৮২১), লর্ড বায়রন (১৭৮৮-১৮২৪) বিপ্লব পরবর্তী নতুন জীবনচেতনা ও সমাজবোধের সার্থক প্রতিনিধি। ইংরেজি কবিতায় দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা ধারণ করে টেনিসন এবং ফরাসি কবিতায় সমাজ চৈতন্যের সমগ্রতা উন্মোচনে ভিক্টর হুগো মৌলিকত্বের স্বাক্ষর রাখেন। [রফিকউল্লাহ খান, কবিতা ও সমাজ] অতঃপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৮) সামাজিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক জীবন, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ইত্যাদি মানবীয় ভিত্তির রক্তক্ষরণ অনুভব করা যায় টি.এস.এলিয়ট, ইয়েটস ও এজরা পাউন্ডের কবিতায়। সমাজ জীবনের পরিবর্তন ও বিবর্তন আধুনিক কবিতায় এভাবে আন্দোলিত।
রেনেসাঁস পরবর্তী ইউরোপীয় সমাজের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, যুক্তিনিষ্ঠা, মানবতাবাদ, ধর্র্র্র্মীয় বিশ্বাসের পুনর্মূল্যায়ন প্রভৃতি উনিশ শতকে বৃটিশ শাসিত ভারতে শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবনবোধ ও শিল্প জিজ্ঞাসার ক্ষেত্রে অপরিসীম গতিচাঞ্চল্য সঞ্চার করে। ঔপনিবেশিক শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জীবনচেতনার অঙ্গীকারে বাংলার সমাজমানস পশ্চিমের আধুনিকতা ও নবচেতনায় প্রভাবিত হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা নবযুগের সেই চেতনারই সফল শিল্পকর্ম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় তার চূড়ান্ত পরিণতি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রণরক্ত তাকে বিচলিত ও চঞ্চল করে তোলে। তবে কাজী নজরুল ইসলাম ঔপনিবেশিক শক্তির অত্যাচার-অন্যায়-অসত্যের মূলোৎপাটনে সামাজিক-রাজনৈতিক চেতনাবাহী কবিতার ধারা সৃষ্টি করেন।
কাজী নজরুল বিশ্বসাহিত্যের প্রধান লেখকদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন- রোমান্টিক ও বাস্তববাদী। তবে বিষয়টা এমন নয় যে, যারা রোমান্টিক তাদের মাঝে বাস্তবতা নেই; আবার বাস্তববাদীর সাহিত্যে রোমান্টিকতা নেই। উভয় ক্ষেত্রেই মিশ্রণই লক্ষণীয়। মূল চরিত্র কোন্ দিকে গতিমান সেই বিবেচনায় কবি এই ভাগ করেন।
দুই দিকেই বড় বড় রথী-মহারথী। একদিকে নোগুচি, ইয়েটস, রবীন্দ্রনাথ প্রভৃতি dreamers স্বপ্নচারী; আর একদিকে গোর্কি, যোহান বোয়ার, বার্নার্ড শ, বেনাভাঁতে প্রভৃতি। আজকের বিশ্বসাহিত্যে এই দুটো রূপই বড় হয়ে উঠেছে। এর অন্যরূপও যে নেই, তা নয়। এই দুই extreme -এর মাঝে যে, সে এই মাটির মায়ের কোলে শুয়ে স্বর্গের কাহিনী শোনে। রূপকথার বন্দিনী রাজকুমারীর দুঃখে সে অশ্রু বিসজন করে, পঙ্খীরাজে চড়ে তাকে মুক্তি দেবার ব্যাকুলতায় সে পাগল হয়ে ওঠে। সে তার মাটির মাকে ভালবাসে, তাই বলে স্বর্গের বিরুদ্ধে অভিযানও করে না। এই শিশু মনে করে- স্বর্গ এই পৃথিবীর সতীন নয়, সে তার মাসিমা। তবে সে তার মায়ের মতো দুঃখিনী নয়, সে রাজরানি, বিপুল ঐশ্বর্যশালিনী। সে জানে, তারই আত্মীয় স্বর্গের দেবতাদের কোনো দুঃখ নেই, তারা সর্বপ্রকারে সুখী-কিন্তু তাই বলে তার উপর তার আক্রোশও নেই। সে তার বেদনার গানখানি একলা ঘরে বসে বসে গায়- তার দুঃখিনী মাকে শোনায়। তার আর ভাইদের মতো, তার অশ্রুজলে কর্দমাক্ত হয় যে মাটি, সেই মাটিকে তাল পাকিয়ে উদ্ধত রোষে স্বর্গের দিকে ছোড়ে না। এঁদের দলে- লিওনিদ আঁদ্রিভ, ক্লুট হামসুন, ওয়াদিশল, রেমঁদ প্রভৃতি। বার্নার্ড শ, আনাতোল ফ্রাঁস, বেনাভাতের মতো হলাহল এরাও পান করেছেন, এরাও নীলকণ্ঠ, তবে সে হলাহল পান করে এরা শিবত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন, সে হলাহল উদগার করেননি।
কবি নজরুল যেহেতু ঔপনিবেশিক শক্তির বিনাশ ও সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সমাজকে আমূল বদলে দিতে চান; সেহেতু বাস্তববাদী সাহিত্য রচনা করাই তাঁর লক্ষ্য। ফলে কবি নরওয়ের কুট হামসুন, যোহান বোয়ার ও ইবসেনের বাস্তববাদী সাহিত্যের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। একই দৃষ্টিভঙ্গির সুর শোনা যায় ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা ৫নং ম্যাঙ্গো লেন দৈনিক ‘কৃষক’ পত্রিকার অফিস গৃহে ‘জন-সাহিত্য সংসদে’র শুভ উদ্বোধনে সভাপতি কাজী নজরুল ইসলামের প্রদত্ত অভিভাষণে।
জনসাহিত্যের উদ্দেশ্য হল জনগণের মতবাদ সৃষ্টি করা এবং তাদের জন্য রসের পরিবেশন করা। আজকাল সাম্প্রদায়িক ব্যাপারটা জনগণের একটা মস্ত বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে: এর সমাধানও জনসাহিত্যের একটা দিক। সাময়িক পত্রিকাগুলোর দ্বারা আর তাদের সম্পাদকীয় প্রবন্ধ দ্বারা কিছুই হবে না। সম্পাদকীয় মত উপর থেকে উপদেশের শিলাবৃষ্টির মতো শোনায়। তাতে জনগণের মনের উপর কোনো ছাপ পড়ে না- জনমতও সৃষ্টি হয় না। … জনগণের সাথে সম্বন্ধ করতে হলে তাদের আত্মীয় হতে হবে। তারা আত্মীয়ের গালি সহ্য করতে পারে, কিন্তু অনাত্মীয়ের মধুর বুলিকে গ্রাহ্য করে না। ওদের জন্য যে সাহিত্য, তা ওরা এখনো যেমনভাবে পুঁথি পড়ে, আমির হামজা, সোনাভান, আলেফ লায়লা, কাছাছল আম্বিয়া পড়ে, তখনো সেইভাবে পড়বে। ওদের সাহিত্যের মধ্য দিয়ে ওদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। যা বলবার বলতে হবে। কিন্তু যেন মাস্টারি-ভাব ধরা না পড়ে। সে জন্য তথাকথিত ভদ্র-পোশাক-পরিহিত ভদ্রলোকদের নেমে আসতে হবে কাদার মধ্যে-ওদেরকে টেনে তোলার জন্য। নেমে এসে যদি ওদের ওঠানোর চেষ্টা করা যায়, তবে সে-চেষ্টা সফল হবে, নইলে না। আজকাল আমাদের সাহিত্য বা সমাজ-নীতি সবই টবের গাছ। মাটির সাথে সংস্পর্শ নেই। কিন্তু জনসাহিত্যের জন্য জনগণের সাথে যোগ থাকা চাই। যাদের সাহিত্য সৃষ্টি করব, তাদের সম্বন্ধে না জানলে কী করে চলে?
মাটি ও মানুষলগ্ন সাহিত্য; গণমানুষের সাথে আত্মীয়তার আন্তরিক সম্পর্কভিত্তিক সাহিত্য এবং জনগণকেন্দ্রিক সাহিত্য সৃষ্টি নজরুলের উদ্দেশ্য। বাংলা কাব্যে কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম সমাজ বাস্তবতাকেন্দ্রিক রাজনীতিকে শিল্পের অন্যতম উপাদান হিসেবে গ্রহণ করেন। ব্রিটিশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তাঁর জীবনীশক্তি ও শিল্পশক্তির অধিকাংশই ব্যয় হয়। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতায় তিনিই প্রথম সুস্পষ্টভাবে মানুষের সমানাধিকারের কথা উচ্চারণ করেন এবং চিরঅবনত মানব সত্তাকে সংবদ্ধ অভ্যুত্থানের আহ্বান জানান। আবার ‘অন্তর ন্যাশনাল সঙ্গীত’ নাম দিয়ে তিনি অনুবাদ করেন সমগ্র পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের আকাক্সক্ষার বাণীরূপ ‘ইন্টারন্যাশনাল সঙ্গীত’। এইভাবে বাস্তববাদী রাজনৈতিক চেতনার সঙ্গে বাংলা কবিতার সংযোগের সূত্র নজরুলই প্রথম বেঁধে দেন।
নজরুল বাংলার মানুষের জীবন ও জগতের সকল শৃঙ্খল ও অধীনতা ছিন্ন করে সামগ্রিক মুক্তির নিশান উড়াতে চেয়েছেন আজীবন। সাহিত্যকে আকাশ-স্বপ্ন-স্বর্গকেন্দ্রিকতার বদলে মা-মাটি-মানুষলগ্ন সমাজ বাস্তববাদী সাহিত্য সাধনা ও সৃষ্টি করেন বিপুলভাবে। কবিতা, কথাসাহিত্য, সঙ্গীত ও অন্যান্য রচনায় এই দৃষ্টির প্রতিফলন স্পষ্ট।
নজরুলের এই সাহিত্য-দৃষ্টির মূলভাব ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতায় প্রকাশিত: পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,/ মাথায় উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে। / প্রার্থনা করো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস, / যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!
* ড. ফজলুল হক তুহিন কবি ও গবেষক, কালজয়ী কবি আল মাহমুদের কবিতা ও কথাসাহিত্য নিয়ে পিএইচডি, শিল্প-সাহিত্যের কাগজ ‘নতুন এক মাত্রা’র নির্বাহী সম্পাদক