দেড় হাজার বছর আগের বাংলা ভাষার প্রাচীন নথির সন্ধান মিলেছে

শিল্প-সংস্কৃতি সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ভারতে একটি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেতে গেলে পূরণ করতে হয় কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত বেশ কয়েকটি মানদণ্ড। যেগুলির মধ্যে প্রথম ও অন্যতম হল, সংশ্লিষ্ট ভাষাটির দেড় হাজার বছর বা তার বেশি পুরনো লিখিত নথি থাকতে হবে। জানা গিয়েছে, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে দেড় হাজার বছরের থেকেও অনেক বেশি প্রাচীন নথির সন্ধান মিলেছে।

শুধু তাই নয়। ধ্রুপদী ভাষার তকমা পাওয়ার জন্য নির্ধারিত যে কোনও মানদণ্ডই পূরণে প্রয়োজনীয় প্রমাণ গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ‘ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্টাডিজ’-এর (আইএলএসআর) অধিকর্তা স্বাতী গুহ। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের মানদণ্ড অনুযায়ী, কমপক্ষে দেড় হাজার বছরের প্রাচীন নথি থাকতে হবে। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে তার থেকে অনেক অনেক বেশি পুরনো নথি পাওয়া গিয়েছে।’’

বেশ কিছুদিন ধরেই কেন্দ্রের কাছে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আবেদন জানাতে উদ্যোগী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধীনস্থ আইএলএসআর-কে। সংস্থাটি বিগত এক বছর ধরে সেই কাজ করে চলেছে। স্বাতী গুহ জানিয়েছেন, কাজটা প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। বলেন, ‘‘গবেষণা ও প্রস্তাব তৈরির কাজটা আমরা করছি। চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে। সম্ভবত মে মাসে আমরা রিপোর্ট জমা করতে পারব।’’ তারপর উচ্চশিক্ষা দপ্তরের তথা রাজ্য সরকারের অনুমতিক্রমে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়ার আবেদন জানানো হবে। 

ভারতের ছয়টি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্র। সর্বপ্রথম স্বীকৃতি পেয়েছিল তামিল ভাষা। তারপর একে একে সংস্কৃত, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম এবং সর্বশেষে ২০১৪ সালে ওড়িয়া ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা হিসাবে বাংলাকেও ধ্রুপদী ভাষার তকমা দেয়ার দাবি উঠছিল বহুদিন ধরেই। ব্যক্তিগতভাবে আবেদন জানানো হলেও, প্রথমবার সরকারিভাবে আবেদন জানানোর উদ্যোগ নেয়া হয় গত বছর। 

চলতি বছর জানুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন সেকথা। কেন্দ্রের নির্ধারিত মানদণ্ডগুলির মধ্যে রয়েছে, সংশ্লিষ্ট ভাষার দেড় হাজার থেকে দুই হাজার বছর প্রাচীন লিপিবদ্ধ ইতিহাস বা পাঠ্য। অতীতের সঙ্গে আধুনিক ভাষারূপের পার্থক্য থাকা দরকার৷ উন্নত মানের সাহিত্য সৃষ্টির উদাহরণ থাকতে হবে৷ হতে হবে ঐতিহ্যশালী৷

আইএলএসআর-এর কর্মকর্তার কথায়, ‘‘মানদণ্ডগুলি আমরা যথেষ্ট পূরণ করছি। ওটা নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই।’’ অর্থাৎ, সবকিছু ঠিক থাকলে, শীঘ্রই কেন্দ্রের কাছে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেয়ার আবেদন জানাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। এবং তা মিলবে বলেও আশাবাদী সংশ্লিষ্ট সব মহলই। সূত্র: এবিপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *