ত্যাগ ও কুরবানি ঈমানের ভিত গড়ে দেয়।। ব্যারিষ্টার হামিদ আজাদ

ধর্ম ও দর্শন প্রবন্ধ-কলাম সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ইসলামি ক্যালেন্ডারের মহান মাস ‘জিলহজ্জ’ আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। ‘জিলহজ্জ’ হলো ইবাদতের মাস। বিশেষ করে হজ্জ, ঈদুল আজহা, কুরবানি, রোজা এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে দান-সদাকা করার মতো আমলগুলো এ মাসে গুরুত্ব সহকারে সম্পাদন করা হয়। আনন্দের পাশাপাশি সহানুভূতি ও ত্যাগের বার্তা নিয়ে প্রতিবছর জিলহজ্জ মাস আমাদের মাঝে আসে।

বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার আমরা ‘জিলহজ্জ’ মাসও এক বিষাদময় পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে অতিবাহিত করতে যাচ্ছি। একদিকে লাখো মানুষ যখন হজ্জ, ঈদুল আজহা ও কুরবানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, অপরদিকে বর্ণবাদী একটি রাষ্ট্রের দ্বারা অবর্ণনীয় জুলুম, গণহত্যা ও নির্যাতনের কারণে ফিলিস্তিনের হাজার হাজার ভাই ও বোন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে। এখনো পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৮২ হাজারের বেশি মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। গত ৬ মাসে ১০ লাখের বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন। এর ফলশ্রুতিতে, মানবিকবোধ তথা বিবেকসম্পন্ন প্রতিটি মানুষের অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অসহায় ভাবেই আমাদেরকে এই বর্বরতা ও জুলুম নিপীড়ন দেখে যেতে হচ্ছে।

ফিলিস্তিন এবং পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে থাকা নির্যাতিত ভাই-বোনদের ওপর আল্লাহ তাআলা রহম করুন। আল্লাহ পাক তাদের কুরবানি কবুল করুন। প্রতিনিয়ত ভয়াবহ যেসব চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে আসছে তা মোকাবেলা করার মতো ধৈর্য আল্লাহ তাআলা তাদের দান করুন। ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যে সংগ্রাম করছেন, আল্লাহ পাক এ সংগ্রামে তাদের বিজয়ী করুন। আমিন।

আমি জানি, এ সংখ্যায় হজ্জ, কুরবানি এবং এই মাসের অন্যান্য ইবাদতের ফজিলত নিয়ে অনেকগুলো কলাম প্রকাশিত হবে। তাই আমি এ বিষয়গুলোর ওপর আলাদা করে কিছু লিখছি না। বরং আমি এই ইবাদতগুলোর অর্ন্তণিিহত কিছু বিৈশষ্ট্যের ওপর আলোকপাত করতে চাই- যার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলো ইখলাস এবং নিয়ত। কারণ এ দুটো বিষয় যে কোন ইবাদত কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে মূল শর্ত হিসেবে কাজ করে।

প্রতিটি একনিষ্ঠ মুসলিম সবার আগে যে কাজটি করেন তাহলো তারা একটি বিশুদ্ধ নিয়ত লালন করেন। নিয়তের বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ন যে, ইবনে হাজার তার ফাতহুল বারী ফি শারহ সহীহ আল-বুখারী এবং ইমাম নববী তার আরবাইনে ‘প্রত্যেক কাজ তার নিয়তের মধ্য দিয়েই মূল্যায়িত হয়’ শীর্ষক হাদিসকে প্রথম হাদিস হিসেবে বাছাই করেছেন। হাদিস অধ্যয়ন করার ক্ষেত্রে একজন ছাত্রকেও সর্বপ্রথম নিয়ত সংক্রান্ত এ হাদিস জানতে হয়।
প্রখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা রা. থেকে র্বণতি। রাসূল সা. বলেন,
إِنَّ اللَّهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক রূপ বা সম্পদ দেেখন না। বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কার্যক্রমগুলো বিবেচনায় নেন।” (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৪)

উমর বিন খাত্তাব রা. বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যাবতীয় কর্মকান্ড নিয়ত বা সংকল্পের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, সে যা নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ও তাঁর রাসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।” (বুখারি ও মুসলিম)

এই হাদিসটি রাসূল সা. এমন একটি সময়ে বলেছিলেন যখন একজন মানুষ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন একজন নারীকে বিয়ে করার জন্য, ইসলামের জন্য নয়। ইসলামের যাবতীয় হাদিসের মধ্যে এ হাদিসকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ হাদিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইমাম আল বুখারি (পরবর্তীতে ইমাম আল নববিও তার ৪০টি হাদিসে এভাবেই সংকলন করেছেন) তার সহীহ হাদিসগ্রন্থের সংকলন শুরু করেছেন এ হাদিস দিয়ে। এ হাদিসটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, কোনো কাজে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ না করা হয় তাহলে সে কাজটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এই কাজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্যেও দুনিয়া বা আখেরাতে কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।

প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আব্দ আল রাহমান বিন মাহদি বলেন, “যদি আমাকে বিভিন্ন চ্যাপ্টারে ভাগ করে কোনো কিছু সংকলন করতে হত, তাহলে আমি প্রতিটি চ্যাপ্টারের শুরুতেই এ হাদিসটি সন্নিবেশিত করতাম। তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো বই লেখার ইচ্ছে পোষণ কর, তাহলে নিয়ত সংক্রান্ত এ হাদিসটি দিয়েই তার বই লেখা শুরু করা উচিত।”

এ হাদিসটি ইসলামের একটি মৌলিক নীতিমালা গড়ে দেয়। এটি এমনই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যাকে কেন্দ্র করে গোটা জীবন আবর্তিত হয়। ইমাম শাফেয়ী বলেন, “এই হাদিসটি জ্ঞানের এক তৃতীয়াংশ ধারণ করে; একই সাথে এ হাদিসটি ফিকাহ’র ৭০ ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে ইমাম আহমাদ বলেন, “ইসলামের ভিত্তি তিনটি হাদিসের সাথে জড়িত। ১. একটি হলো উমর রা. র্বণতি হাদিস- ‘প্রতিটি কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। ২. দ্বিতীয় হাদিসটি র্বণনা করেছেন হজরত আয়েশা রা.- কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো কাজ করে যা আমাদের নির্দেশনার সাথে সম্পর্কিত নয়, তাহলে তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে’। ৩. তৃতীয় হাদিসটি র্বণনা করেছেন নুমান ইবনে বাশীর রা.। যেখানে রাসূল সা. বলেছেন, ‘হালাল ও হারাম স্পষ্ট।’

এই হাদিস থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, কোনো কাজ তথা আমল কবুল হওয়ার জন্য অথবা একটি কাজ নেক আমল হয়ে ওঠার জন্য মূলত দুটো শর্ত আছে:

১. আমলরে নেপথ্যে কোন নিয়তটি কাজ করছে। যদি নিয়ত ভালো ও বিশুদ্ধ হয় এবং কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার পাওয়ার জন্যই করা হয়, তাহলে কাজটি উত্তম। অন্যথায় কাজটি নিস্ফল ও নিেতবাচক হিসেবে বিবেচিত হবে। যে কোনো কাজ করার আগেই এ ভাবনাটি করা উচিত।

২. কাজটিকে আমাদের রাসূল সা. এর শেখানো পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যর্পূণ হতে হবে। রাসূল সা. বলেছেন, “প্রকৃত ইখলাস হলো একজন আল্লাহর বান্দা তার কথায়, কাজে ও নিয়তে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ একনিষ্ঠ থেকে যাবতীয় ইবাদত পালন করবে।”

নিয়ত ও ইখলাস হলো প্রতিটি কাজের প্রাথমিক ভিত্তি। আপনার কাজটি আল্লাহ কবুল করবেন নাকি খারিজ করবেন তা এ দুটো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এ কারণেই আমাদের প্রত্যেকেরই নিয়ত ও ইখলাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানা উচিত, যনে আমাদের ভালো কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পাদন করার মধ্য দিয়ে আমরা আখেরাতে উত্তম প্রতিদান পেতে পারি।

‘নিয়ত’ এর দুটো অর্থ আছে: ১. ইবাদত করার আগের নিয়ত বা অভিপ্রায় (যমেন: নামাজ) ২. আগ্রহ বা ইচ্ছা।

দ্বিতীয় অর্থটি এ হাদিস থেকেই বোঝা যায়। রাসূল সা. হাদিসটি শুরু করেছেন এই বলে যে, প্রতিটি কাজরে নিয়তের মাধ্যমে মুল্যায়ন করা হয়। এরপর তিনি তিনটি পৃথক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। এটিই রাসূল সা. প্রশিক্ষন পদ্ধতি। উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত থাকলে মানুষের পক্ষে মূল বিষয় বা নীতিমালাটি অনুধাবন করা সহজ হয়। ফলে, তারা নিজেরাও যদি কখনো এই পরিস্থিতিতে পড়ে তাহলেও তারা এ নীতিমালা প্রয়োগ করতে পারে।

এই হাদিসে যে তিনটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি উত্তম কাজের দৃষ্টান্ত- আর তা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. এর জন্য হিজরত করা। আর বাকি দুটো দৃষ্টান্ত নেতিবাচক। একটি হলো বিয়ে করার জন্য হিজরত করা আর অপরটি হলো পার্থিব কোনো সুবিধা পাওয়ার জন্য হিজরত করা।

এই হাদিসে ইখলাস (একনিষ্ঠতা- আল্লাহর কাছে পুরোপুরি সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়া এবং যে কোনো কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য করা) এর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যে কোনো নেক আমল কবুল হওয়ার প্রথম শর্তই হলো ইখলাস। আর দ্বিতীয় শর্ত হলো কাজটি অবশ্যই শরীয়াতের আলোকে হতে হবে। এ বিষয়টি শাহাদাহ’র মধ্য দিয়েও উপলব্ধি করা যায়।

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই”- এটুকু হলো ইখলাস। এই অংশে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আমরা প্রতিটি কাজ আল্লাহর জন্য এবং শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই করবো।” আল্লাহ পাক বলেন,
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَلَمْ يَلْبِسُوٓا۟ إِيمَـٰنَهُم بِظُلْمٍ أُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلْأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ ٨٢
“যারা ঈমান আনে এবং নিজের বিশ্বাসকে জুলুমের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।” (সুরা আনআম: ৮২)

ইমাম আল বুখারির সহীহ সংকলন কিতাব আল তাফসরিরে ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই আয়াতে জুলুম বলতে শিরককে বোঝানো হয়েছে মর্মে রাসূল সা. তার সাহাবাদের শিখিয়েছেন।

শাহাদাহ’র দ্বিতীয় অংশ হলো, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল’। এ কথাটির মাধ্যমে সুন্নাহকে কুরআনের বহি:প্রকাশ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রাসূল সা. আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ, অনুসরণ করার জন্য শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। আমাদের ইবাদতে, আখলাকে এবং মুআমেলাতে তাকে অনুসরণ করার মাধ্যমেই প্রমাণিত হবে যে, আমরা শরীয়তের আলোকেই কাজ করছি বা করার চেষ্টা করছি।

শাহাদাহ আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয় যে, একটি কাজ কবুল হওয়ার জন্য দুটো শর্ত আছে। প্রথমত কাজটি হতে হবে কেবলই আল্লাহর জন্য, কেননা আমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করি। আর দ্বিতীয়ত, কাজটি হতে হবে রাসূল সা. এর সুন্নাহ অনুযায়ী।

আল্লাহ তাআলা ঈমানের উৎকর্ষতা ও পরিপূর্ণতা অর্জনের জন্য একটি শর্ত আরোপ করেছেন। এ শর্ত পূরণ হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিরাপত্তা পাবে, হেদায়েত লাভ করবে এবং শিরকের ফাঁদ থেকে রক্ষা পাবে। এ র্শতটিই হলো ইখলাস। যে কোনো ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য ইখলাস অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَمَآ أُمِرُوٓا۟ إِلَّا لِيَعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤْتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلْقَيِّمَةِ ٥
“তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি য,ে তারা খাঁটি মনে ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং যাকাত দেেব। এটাই সঠিক দ্বীন।” (৯৮:৫)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, বলুন আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। (৩৯:১১)
সহীহ মুসলমিে একটি হাদিসে কুদসী সংকলিত হয়েছে। যেখানে আল্লাহ বলেন, শরীকদের সাথে অংশীদার হওয়া থেকে আমি সবচেয়ে বেশি অমুখাপেক্ষী। কউে যদি আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে কোনো আমল করে তাহলে আমি তাকে এবং তার শিরককে প্রত্যাখান করি।” (মুসলিম)।

ইখলাস অর্জনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই শিরক থেকে দূরে রাখতে হবে। শিরক মানেই আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। শিরকের কারণেই একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা কমে যায়। ইমাম আল হারায়ি বলেন, “শিরকের মূল কারণ হলো প্রবৃত্তি বা নিজের খায়েশ পূরণে ব্যস্ত হওয়া। তাই প্রবৃত্তির ফাঁদে পড়ে বা নিজের খায়েশ পূরণ করার জন্য কোনো কাজ করা যাবে না। নিজের খায়েশ পূরণ করার মনোবৃত্তি তাওহীদের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।

ইমাম ইবনুল কাইউম প্রবৃত্তি বা নিজের খায়েশ বলতে ৭ টি বিষয় বর্ণনা করেছেন: ১. অপরের মনে নিজের সম্পর্কে সুধারনা সৃষ্টির চেষ্টা করা। ২. অপরের প্রশংসার অপেক্ষায় থাকা। ৩. অপরের অভযিোগ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা। ৪. অপরের কাছ থেকে মুল্যায়ন প্রত্যাশা করা। ৫. অপরের সম্পদ ও অর্থের প্রতি লালায়িত থাকা। ৬. অপরের সেবা ও ভালোবাসার মোহে পড়ে যাওয়া। ৬. নিজের কোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্য অপরের সাহায্য কামনা করা।

যভোবে ইখলাস অর্জন করা যায়: ইখলাসের বেশ কিছু কার্যকরী সংজ্ঞা রয়েছে। ১. ইখলাস হলো প্রবৃত্তি থেকে, কলংক ও অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করা। ২. সকল ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য সম্পাদন করা। ৩. অন্য কোনো সৃষ্টিকে বিবেচনায় না নিয়ে বরং সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহর মহত্ব নিয়মিত পর্যবেক্ষন করা। ৪. আপনার মন্দ কাজগুলো যেভাবে আপনি আড়াল করার চেষ্টা করেন, নিজের ভালো কাজগুলো সেভাবেই আড়াল করা।

অতএব আমাদের সবারই সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ আল্লাহর কাছে কোনো কাজই গ্রহণযােগ্য হয় না যদি সে কাজে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অংশীদারিত্ব প্রদান করা হয়। এ প্রসঙ্গে মুকতাসির মিনহাজ আল কাসিদিন গ্রন্থে ইবনে কুদামাহ আল মাকদিসির মন্তব্যটি বিশেষভাবে প্রণিধাণযােগ্য। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই মানবজাতি ধ্বংসের মুখে কেবল তারা ছাড়া যারা জ্ঞানী। আবার জ্ঞানী ব্যক্তিরাও ধ্বংস হয়ে গেছে কেবল ঐ জ্ঞানী ব্যক্তিরা ছাড়া যারা নিজেদের জ্ঞানের আলোকে আমলও করছে। যারা এভাবে আমল করছে তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে শুধুমাত্র তারা ছাড়া যারা আমলগুলো একনিষ্ঠতার সাথে করে যায়। কিন্তু একনিষ্ঠভাবে আমল করা মানুষগুলো ভয়াবহ বিপদের ঝুঁকিতে আছে আর সে বিপদটি হলো তাদের কাজে আল্লাহর সাথে অপর কাউকে শরীক করা।”

* অতএব, নেক আমল করুন। যত বেশি নেক আমরা করবো ততটাই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করবো আর তত বেশি আমরা খুলুসিয়াতের অধিকারী হবো।

* যে কোনো কাজ করার আগে আমরা ইলম অর্জন করবো। আমাদের কাজগুলো ইলমের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত। যেন প্রতিটি কাজ শরীয়াত সম্মত হয়।

* মিথ্যা বা ভুল কোনো ধারনা ছড়াবো না। একটি কাজ যদি কার্যত নেতিবাচক হয় তাহলে কারো সামনে কাজটিকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরবো না।

* ইমাম আহমাদ বলেছেন, “যে কোনো কাজ করার আগে আপনার নিয়ত যাচাই করুন। কাজ করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমি কি আল্লাহর জন্যই কাজটি করছি?”

ইবনে আল কাইউম বলেছেন, “আমরা যে কাজগুলো করি সেগুলো তিনটি কারণে দূষিত হয়ে যায়। এগুলো হলো: ১. অন্যরা আমার কাজটি দেখছে সবসময় এ নিয়ে সচেতন থাকা। ২. কাজের বিনিময়ে প্রতিদান প্রত্যাশা করা। ৩. একটি কাজ করেই সন্তুষ্টি অনুভব করা। উদাহরণ:

১. যদি আমরা নামাজ আদায়ের জন্য ইমামের আগেই মসজিদে পৌঁছে যাই এবং প্রথম কাতারে জায়গা পাই তাহলে আমরা যেন অহংকারে না ভুগি এবং নিজেকে অন্যদের চেয়ে উত্তম মনে না করি। বরং আমাদের আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা উচিত কেননা তিনিই আমাদের মসজিদে যাওয়ার এবং কোনো ধরনের প্রতিকূলতা ছাড়াই নামাজ আদায় করার তাওফিক দিয়েছেন।

২. প্রতি ওয়াক্ত নামাজ সম্পন্ন করার পর মনে মনে আমাদের বলা উচিত, আমরা আরো ভালোভাবে নামাজ আদায় করতে পারতাম এবং পরবর্তী নামাজের মান আমরা আরো ভালো করবো। প্রতিটি সালাত এমনভাবে আদায় করা উচিত যেন এটিই আমাদের শেষ নামাজ।

যে বিষয়গুলো ইখলাসের ধারনার সাথে সাংঘর্ষিক: ১. মা’সিয়াত- পাপ করা। এটি আমাদের ইখলাসকে দুর্বল করে দেয়। ২. শিরক- আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। ৩. রিয়া- অন্যকে দেখানোর জন্য ইবাদত করা। ৪. নিফাক- প্রতারণা ও ভন্ডামি।

আমরা একদিকে যেমন ইখলাস ছাড়া কোনো কাজ না করার চেষ্টা করবো; এরপরও এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো সহজাত ভাবেই ভালো নিয়ত হিসেবেই বিবেচিত হয়। যেমন: ইসলামী জ্ঞান বা ইলম অর্জন করা, মানুষের সেবা করা, দাওয়াতি কাজ করা প্রভৃতি।

আমাদের কাজগুলো অনেক সময় নিয়তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনটা ভালো বা মন্দ উভয়টির ক্ষেত্রেই হতে পারে। এ কারণে কোনো কথা বলার আগে বা কাজ করার আগে আমাদের নিয়তটাকে যাচাই করা প্রয়োজন। প্রতিটি কাজ যেন শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই করা হয়। কেবল তাহলেই কাজটিকে আল্লাহ কবুল করেন এবং আমরা এর বিনিময়ে উত্তম প্রতিদানও পাবো ইনশাআল্লাহ।

হজরত উমর রা. এর অন্যতম শিষ্য হারিম বিন হায়ান রহ. বলেন, “একজন বান্দা সাধারণত আল্লাহর দিকে একনিষ্ঠভাবে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না। তবে যারা মুমিন তাদের অন্তরকে আল্লাহ তার দিকে ফিরিয়ে দেন এবং তাদেরকে ভালোবাসেন।” (আল যাহাবি, সিয়ার আলাম আল নুবালা, ৪: ৪৯)

একবার প্রখ্যাত স্কলার ফুদাইল বিন আইয়াদের ছেলে তাকে বললো “বাবা, সাহাবাদের কথামালা কতই না সুন্দর। ফুদাইল বললেন, “তা তো অবশ্যই। কিন্তু তুমি কি জানো কেন তাদের কথা এত সুন্দর।’ ছেলে বললো “না, আমি তা জানি না অবশ্য।’ ফুদাইল বললেন, কারণ তারা যখন কথা বলতেন তখনও আল্লাহকে স্মরণ করতেন।” (আল বায়হাকি, শুয়াইব আল ইমানধ ২: ২৯৯)

খলিফা উমর বিন আব্দুল আজীজ রহ. এর অনুলেখক নুয়াইম বিন আব্দুল্লাহ থেকে র্বণতি। উমর বিন আব্দুল আজীজ বলতেন, “ লোক প্রদর্শন এবং অন্যদের সাথে পতযিোগিতার ভয় আমাকে অনেক সময় উচিত কথাও বলতে দেয় না।”

আমাদের এও জানতে হবে যে, যতক্ষণ আমাদের বক্তব্য, কার্যক্রম এবং সংগ্রাম সত্যনিষ্ঠ না হয় এবং যতক্ষন অবধি আল্লাহর দিদার ও পরকালীন পুরস্কার আমাদের একমাত্র লক্ষ্য না হয়ে ওঠে ততক্ষণ পর্যন্ত ইখলাস যথাযথ মানে পৌঁছায় না। আল্লাহ পাক বলেন-
وَمَنْ أَرَادَ ٱلْـَٔاخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌۭ فَأُو۟لَـٰٓئِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًۭا ١٩
“আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চষ্টো-সাধনা করে, এমন লোকদের চষ্টোই স্বীকৃতি পায়। (আল কুরআন ১৭: ১৯)

কুরআন, সুন্নাহ এবং উম্মতের ইজমা প্রতিটি কথা ও কাজে ইখলাস অনুশীলন করার তাগিদ দেয়। আল্লাহ তাআলা কেবলমাত্র ঐ ইবাদতগুলোই কবুল করেন যেগুলো সঠিক নিয়তে এবং যথাযথ সৌর্ন্দযরে সাথে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রাসূল সা. এর শিক্ষা অনুযায়ী সম্পাদন করা হয়।

এ কারণে রাসূল সা. এর নেককার উত্তরাধিকারীরা তাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রচন্ড চেষ্টা চালিয়েছেন। তারা ইখলাসকে অন্য সব কিছুর তুলনায় গুরুত্বর্পূণ এবং নাফসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে ভারী বস্তু হিসেবে গণ্য করতেন। তারা এভাবে ভাবতে পেরেছিলেন কারণ তারা আল্লাহকে জানতেন, আল্লাহ নির্ধারিত শর্তসমূহ সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তারা জানতেন, এই শর্তগুলো পূরণ না হলে আল্লাহ তাদের আমল কবুল করবেন না। পাশাপাশি যে সংকটগুলোর কারণে আমল ধ্বংস হয়ে যায় সেগুলোও তারা ভালোভাবেই জানতেন।

নিজেদের কাজগুলোকে সংশয় থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তারা ইখলাসের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন। কারণ, তারা জানতেন যে এ ধরনের সংশয়গুলো যেমন কাজটিকে ধ্বংস করতে পারে তেমনি তাদের কাজের প্রতিদানও কমিয়ে দিতে পারে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. কে উত্তম পন্থায় অনুসরণ করার জন্য সালফে সালেহীনদের জীবন থেকে কল্যাণকর দৃষ্টান্তগুলো অনুসরণ করা এবং সেগুলো থেকে উজ্জীবিত হওয়া উত্তম। আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করি যাতে পার্থিব এই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি আমাদেরকে খুলুসিয়াত ও যথাযথ নিয়তের নেয়ামত দান করেন।

আমাদের মনে রাখা দরকার যে, তাকওয়া মানেই দুনিয়াকে এড়িয়ে যাওয়া বা অগ্রাহ্য করা নয়। কারণ দুনিয়া হলো আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। তাই দুনিয়ার এ সময়টাকে আমরা যত উত্তমভাবে কাজে লাগাবো, আখেরাতে ততটাই উত্তম প্রতিফল আমরা পাবো বি- ইযনিল্লাহ। আল্লাহ বলেন-
ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًۭا ۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ ٢ “যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-আমলের দিক থেকে কে কে তোমাদের মধ্যে শ্রষ্ঠে? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। (সুরা মুলক: ২)

আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন-
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا نُودِىَ لِلصَّلَوٰةِ مِن يَوْمِ ٱلْجُمُعَةِ فَٱسْعَوْا۟ إِلَىٰ ذِكْرِ ٱللَّهِ وَذَرُوا۟ ٱلْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ٩ فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ وَٱبْتَغُوا۟ مِن فَضْلِ ٱللَّهِ وَٱذْكُرُوا۟ ٱللَّهَ كَثِيرًۭا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ١٠
“মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাজের আজান দয়ো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জলদি ছুটে যাও এবং বচোকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা জুমআ: ৯-১০)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উত্তম কিছু দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন যাতে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য উত্তমটাই চেয়ে নিতে পারি। যেমন:
رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِى ٱلدُّنْيَا حَسَنَةًۭ وَفِى ٱلْـَٔاخِرَةِ حَسَنَةًۭ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢
হে আমাদের রব। আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব থেেক রক্ষা কর।” (সুরা বাকারা: ২০১)

দুনিয়া অগ্রাহ্য করলে আখেরাতে এর কোনো ফায়দা মিলবে না। দুনিয়া এড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনো প্রজ্ঞা নেই। বরং এতে করে দুনিয়ার চাবিটি আল্লাহর শত্রুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাই আল্লাহর খলিফা হিসেবে এই দুনিয়ার প্রতিটি সময়, প্রতিটি সুযােগ উম্মতের কল্যাণের জন্য আমাদের কাজে লাগানো উচিত। মনে রাখতে হবে যে, ১০ জন সাহাবি দুনিয়ায় থাকা অবস্থায় জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন তাদের একজন ছিলেন আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা., যিনি তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। এরপরও তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবেই স্বীকৃত ছিলেন আর এ কারণেই তিনি আশারায়ে মুবাশশারার তালিকায় শামিল হয়েছিলেন।

জিলহজ্জ মাস হলো দুনিয়াকে আখেরাতের কল্যাণের জন্য কাজে লাগানোর সর্বোত্তম একটি সুযোগ। ইবাদত করে উত্তম প্রতিফল পাওয়ার জন্য এটিই উত্তম সময়। প্রখ্যাত স্কলার ইবনে রজব রহ. এ প্রসঙ্গে বলেন,
“ইবাদতের মওসূলমগুলোর অনেক উপকারিতা আছে। এর মধ্যে একটি হলো, নিজের ত্রুটিগুলো এ সময়ে সংশোধন করে নেওয়া যায়। কেউ যদি ইতোপূর্বে ইতিবাচক কোনো সুযােগ মিস করে তাহলে এ সময়ে ঐ ঘাটতিটি পূরণ করে নিতে পারে। সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যিনি এই বিশেষ মাসগুলোর প্রতিটি দিন, প্রতিটি ঘন্টা ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নকৈট্য অর্জন করতে পারেন। আশা করা যায়, এর ফলে তিনি নেয়ামতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম নেয়ামতগুলো লাভ করেন এবং এরই ফলশ্রুতিতে অসীম সুখ উপভোগ করবেন এবং জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে সুরক্ষা পাবেন।”

এই দুনিয়ায় আমাদের সময়গুলো কাজে লাগানোর সর্বোত্তম উপায় হলো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি পদক্ষেপে নিম্নোক্ত মিশনটি পূর্ণ ইখলাসের সাথে নিজের মনে ও অন্তরে সবসময় জাগ্রত রাখা।
إنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ
اللَّهُمَّ اهْدِنِي لأَحْسَنِ الأَعْمَالِ وَأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِي لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ وَقِنِي سَيِّئَ الأَعْمَالِ وَسَيِّئَ الأَخْلاَقِ لاَ يَقِي سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ
আপনি বলুন- আমার নামাজ, আমার কুরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন সবকিছুই রাব্বুল আলামীন আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোনো অংশীদার নইে। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম। (সুরা আনআম: ১৬২)

পরিশেষে বলা দরকার, প্রতিটি কাজে সফল হওয়ার মূলমন্ত্রই হলো ইখলাস। একজন বিশ^াসী মানুষের জন্য কোনো সফলতাই সফলতা নয়, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হয়। এ কারণে যে কোনো কাজ করার আগেই আমাদেরকে যথাযথভাবে নিয়ত নির্ধারন করতে হবে আর এই নিয়তটি হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

ইখলাস লালনের ক্ষেত্রে তিনিই প্রজ্ঞাবান যিনি প্রতিমুহুর্তে তার সীমাবদ্ধতাগুলো মনে রাখতে পারেন, উদারতা ধারণ করেন এবং অপরের জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করতে পারেন। প্রজ্ঞাবান তিনি যিনি কখনোই তার কাজ বা অবদানকে অপরের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর মনে করেন না, বরং নিতান্তই সাদামাটা হিসেবে গন্য করেন।

একজন ইখলাস সম্পন্ন ব্যক্তি সবসময়ই দরদি ও ভালোবাসায় পরির্পূণ হন। তিনি মানুষকে কেবল আল্লাহর জন্যই ভালোবাসেন। তিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে দান-সদাকা করেন। ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ আদায় করেন এবং রাতের বেলায় একান্তে ও নির্জনে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হন।

হে আল্লাহ, আমাদেরকে সর্বোত্তম কাজের দিকে ধাবিত করুন। উত্তম শিষ্টাচারে সমৃদ্ধ করুন। আপনি ছাড়া কেউ আমাদেরকে হেদায়েত করতে পারবে না। হে আল্লাহ, খারাপ কার্যক্রম ও নেতিবাচক আচরণ থেকে আপনি আমাদেরকে হেফাজতে রাখুন। কনেনা আপনি ছাড়া আর কেউ আমাদেরকে হেফাজত করতে পারবে না। আমিন।

* ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ এমসিএ’র কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট, খ্যাতিমান আইনজীবী ও মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *