জীবনের সমীকরণ থেকে তাঁকে বাদ দেবেন না : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ:মাসুম খলিলী

এক. আপনি আপনার জীবনকে অনেকবার রিবুট করতে পারেন এবং নতুন করে শুরু করতে পারেন। কিন্তু যদি প্রোগ্রামটি সর্বশক্তিমানকে জড়িত না করে, তাহলে আপনি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবেন, কোনো অগ্রগতি হবে না। সুতরাং আপনি যদি এই জগতে এবং পরকাল উভয় ক্ষেত্রেই সাফল্য চান তবে তাঁকে কখনই আপনার সমীকরণ থেকে বাদ দেবেন না।

পূনশ্চঃ

এক. ইবাদত করাকে কঠিন মনে হলেও চালিয়ে যান। যখন আপনার জিহ্বা বেশি উচ্চারণ করতে অক্ষম দেখতে পান তখনও চালিয়ে যান। যখন আপনি মনে করেন যে এটি একটি খারাপ দিন এবং আপনি হাল ছেড়ে দিতে চান তখনও চালিয়ে যান। আপনি যখন অনুভব করবেন আপনার ধৈর্য ফুরিয়ে যাচ্ছে তখনও চালিয়ে যান। ইবাদত চালিয়ে যান কারণ তিনিই আপনার সংগ্রাম সম্পর্কে জানেন।

দুই. আপনি যা কিছু করতে চান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটি করুন। নিখুঁত সময়, নিখুঁত মুহূর্ত, নিখুঁত দিনের জন্য অপেক্ষা করবেন না। এ ধরনের নিখুঁত কিছুর অস্তিত্ব নেই। পরিপূর্ণতা এই পৃথিবীর জন্য নয়। সুতরাং দুর্ভাগ্য শেষ হওয়ার আগে আপনি অপেক্ষা করতে গিয়ে আটকে গেছেন, এর জন্য কাজ করুন। সর্বশক্তিমানকে আপনার গাইড হতে দিন।
তিন. আজ আমরা আগের চেয়ে বেশি বিতর্কে জড়িয়েছি এবং এর অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল সোশ্যাল মিডিয়া। আমরা এমন পোস্টগুলি দেখছি যেখানে মেজাজ বিগড়ে যায়, কঠোর শব্দ ব্যবহৃত হয়। এমন একটি লোকের সাথে ভার্চুয়াল হট্টগোলের ম্যাচ হচ্ছে যার দেখা আমরা কখনও পাইনি! এর সাথে জড়িত হবেন না। এ ধরনের যুক্তি-তর্ক থেকে দূরে থাকুন!

চার. আপনি যখন ক্ষতির সম্মুখীন হন, তখন মনে রাখবেন যে, সর্বশক্তিমান (আল্লাহ) আপনাকে আপনার ধৈর্য ও সহনশীলতার জন্য পুরস্কৃত করবেন, আপনি যা হারিয়েছেন তার চেয়েও অনেক বেশি তিনি দেবেন।

পাঁচ. আপনার সাথে অন্যায় করা হয়ে থাকতে পারে, যা আপনার জন্য অনেক বেদনার কারণ হয়েছে। তবে মনে রাখবেন যে সর্বশক্তিমান আপনাকে এই প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলছেন।

ছয়. আপনি যদি নিজের আত্মার শক্তি সম্পর্কে জানতে চান তবে যাচাই করে দেখুন আপনি কতটা ধৈর্যশীল, আপনি সর্বশক্তিমানের ইচ্ছাকে কতটা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেন। আপনি বেঁকে যাবেন কিন্তু ভাঙবেন না!

সাত. আপনার সমস্যার পরিবর্তে আপনার আশীর্বাদগুলোর হিসাব করুন। এটি করবেন আর দেখবেন যে; আপনি বিজয়ী হয়ে উঠছেন। আপনার জন্য নির্দিষ্ট করা পথ আপনি খুঁজে পাবেন। সর্বশক্তিমান আপনাকে প্রয়োজনের সময় শক্তি, বিশৃঙ্খলায় শান্তি, দুঃখে আনন্দ এবং হতাশার সময় আশার জোগান দেবেন। বিশ্বজগতের প্রভু সম্পর্কে হতাশ হবেন না!

দ্রষ্টব্য:

‘হে আমাদের রব! আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদের ক্ষমা করে দিন যারা আমাদের পূর্বে বিশ্বাস স্হাপন করেছে। আর আমাদের অন্তরে বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ঘৃণা রাখবেন না। হে প্রতিপালক, নিশ্চয়ই আপনি অতি করুণাময়, পরম দয়ালু।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১০)

যেদিন ধন সম্পদ ও সন্তানাদি কারো কোনো উপকারে আসবে না, একমাত্র ওই ব্যক্তি ছাড়া— যে সুস্হ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)

এবং যারা দান করবার, তারা ভীত প্রকম্পিত হৃদয়ে ( তারা ভয় পায় যে তাদের দান কবুল হলো কিনা ) এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৬০)

আর তোমরা সে নারীর মতো হয়ো না, যে তার পাকানো সুতো শক্ত করে পাকানোর পর টুকরো টুকরো করে ফেলে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯২)

নবী(সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ইফতারের আগে রোজাদারের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া ও মজলুমের দোয়া।’(তিরমিজি : ৩৫৯৮)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *