জাপায় ‘লাঙ্গল’ নিয়ে টানাটানি

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

শামছুদ্দীন আহমেদ

ঢাকা-১৭ আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে যখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দলগুলো বা সম্ভাব্য প্রার্থীরা জয়ী হওয়ার নকশা আঁকছেন, তখন জাতীয় পার্টিতে (জাপা) চলছে ভিন্ন খেলা। এই উপনির্বাচনকে উপলক্ষ করে জাপার নির্বাচনি প্রতীক ‘লাঙ্গল’-এর মালিকানার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন রওশন এরশাদের কতিপয় অনুসারী। ২০০০ সালের ৯ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া একটি আদেশের বিষয় উল্লেখ করে রওশনপন্থিরা দাবি করছেন, ঐ রায় অনুযায়ী লাঙ্গলের যৌথ মালিক প্রয়াত এইচ এম এরশাদ ও রওশন এরশাদ। তবে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি বর্তমানে অপ্রাসঙ্গিক।
দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন আগামী ১৭ জুলাই। আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনটিতে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দলের ও লাঙ্গলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন কাজী মামুনুর রশিদ নামের একজনকে। আর দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক মঙ্গলবার মনোনয়ন বোর্ডে সাক্ষাত্কার গ্রহণ শেষে বুধবার জাপা দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেজর (অব.) সিকদার আনিসুর রহমানের নাম ঘোষণা করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

একদিকে রওশন তার মনোনীত কাজী মামুনকে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন; অন্যদিকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরও ইসিকে চিঠি দিয়েছেন দল মনোনীত প্রার্থী মেজর আনিসকে লাঙ্গল বরাদ্দ দেওয়ার জন্য। রিটার্নিং অফিসার মুনীর হোসাইন খান গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। আইন ও বিধি পর্যালোচনা করে যাচাই-বাছাইয়ের দিন, অর্থাৎ রবিবার জানানো যাবে। ফলে শেষ পর্যন্ত লাঙ্গল প্রতীক কে বরাদ্দ পাচ্ছেন তা জানা যাবে রবিবার।

হঠাত্ ‘লাঙ্গল’ নিয়ে টানাটানির এই খেলার সূচনাটা করেছেন রওশনের অনুসারীরা। দলের কোনো পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই গত ৫ জুন রওশনের পক্ষে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানানো হয়, ‘ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে কাজী মো. মামুনুর রশিদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন বিরোধীদলীয় নেতা।’ বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্ স্বাক্ষরিত ঐ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘যা অবিলম্বে দলীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে কার্যকরের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।’ পরে গোলাম মসীহ্র গুলশানের বাসায় কাজী মামুনের হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দিয়েছিলেন সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা ও গোলাম মসীহ্।

কাজী মামুন বর্তমানে জাপার কেউ নন। রওশন ও জাপার নামে যে দুই জন—রাঙ্গা ও গোলাম মসীহ্ তার হাতে উপনির্বাচনের মনোনয়নপত্র তুলে দিয়েছেন, তারাও দলের কেউ নন। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ্ বর্তমানে জাপার প্রাথমিক সদস্যও নন। আর রাঙ্গা জাপা থেকে বহিষ্কৃত।

দলের কেউ না হলেও রওশন স্বাক্ষরিত চিঠি নিয়ে বুধবার ইসিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কাজী মামুন। এতে মামুন নিজেকে জাপার ও ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের মনোনীত হিসেবে দাবি করেছেন। চিঠিতে রওশন লিখেছেন, ‘আমি জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সংসদীয় দলের নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থীর অনুকূলে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল বরাদ্দের একমাত্র অধিকারী। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিলে গৃহীত ও তৎকালীন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা স্বাক্ষরিত গঠনতন্ত্রের ধারা-২০-এর উপধারা ১ অনুযায়ী আমি রওশন এরশাদ দলের পতাকা বহন ও সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করি। বিষয়টি ইতিপূর্বে হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশনের (নং-১১৫৩/২০০০) পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালের ৯ মার্চের রায় ও আদেশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।’

এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া দেননি রওশন। জাপার দায়িত্বশীল নেতাদের মতে, পুরো প্রক্রিয়াটিতে রওশনের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি দুই রকম হতে পারে। প্রথমত রওশন হয়তো কিছুই জানেন না, দ্বিতীয়ত অসুস্থ থাকা রওশনকে ভুলভাল বুঝিয়ে কৌশলে এসব চিঠিতে স্বাক্ষর নেওয়া হয়ে থাকতে পারে।

হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী লাঙ্গলের মালিকানা এবং দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতার বিষয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘যখন এই রায় হয়, তখন কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের বিষয় ছিল না। এখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী দল নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দের ক্ষমতা ইসির।’

এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাপার ও সংসদীয় দলের প্রধান হলেন চেয়ারম্যান। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ফলে রওশন এরশাদ অন্য একজনকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে যেটা বলা হচ্ছে, সেটির সঙ্গে জাপার কোনো সম্পর্ক নেই।’

জাপার মনোনয়নপ্রাপ্ত মেজর (অব.) সিকদার আনিসুর রহমান জানান, তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ইসিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির এবং লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দের জন্য জাপা চেয়ারম্যানের চিঠিও ইসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। ইসি যেন বিভ্রান্ত না হয়, সেজন্য জাপার গঠনতন্ত্রের কপিও জমা দিয়েছেন বলে জানান মেজর আনিস। এদিকে মেজর আনিসকে নিয়েও নানা কথা হচ্ছে জাপায়। তিনিও দলটির রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত। কিছুদিন আগেও তিনি ছিলেন বিদিশার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *