জনপ্রতিনিধির কাজ সেবা করা, হুমকি দেওয়া নয়: হাইকোর্ট

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মো. তাজকিন আহমেদ চিশতীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুর রহমানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে জিআর মামলায় তাজকিন আহমেদ চিশতী জেলহাজতে যাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পরে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তাজকিন আহমেদ চিশতী। ১৪ ফেব্রুয়ারি আদেশে হাইকোর্ট সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করার পাশাপাশি বরখাস্তের বৈধতা নিয়ে রুল দেন। যা চেম্বার আদালতেও বহাল থাকে।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে চিশতী দায়িত্ব বুঝে নিতে গেলে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্যানেল মেয়র ফিরোজ হাসান তাকে লাঞ্ছিত করেন। পরে হাইকোর্টে তিনি সম্পূরক আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্ট গত ১ জুন ফিরোজ হাসানকে ৬ জুনের মধ্যে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে মৌখিক নির্দেশ দেন। কিন্তু দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে গত ১২ জুন আদালত চিশতীকে পৌরসভার দায়িত্ব পালন করে যেতে মৌখিক আদেশ দেন।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পর প্যানেল মেয়রের সঙ্গে স্থানীয় সিটি ব্যাংক শাখা পৌরসভার লেনদেনে অপারগতা প্রকাশ করে। তখন প্যানেল মেয়র ফিরোজ হাসান সাতক্ষীরায় সিটি ব্যাংকের ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে কারণ দর্শাতে নোটিশ দেন। এ নোটিশ পেয়ে সিটি ব্যাংক রিটে পক্ষভুক্তির আবেদন করে। সে আবেদনের শুনানির পর হাইকোর্ট কাজী ফিরোজ হাসানকে তলব করেন।

তলব আদেশে হাইকোর্টে হাজির হন কাজী ফিরোজ হাসান। একই সঙ্গে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান। এ পর্যায়ে হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করলে শাস্তি দেওয়া হবে। জরিমানা করা হবে। মেয়রকে বরখাস্তের স্থগিতাদেশ আগেই পেয়েছেন। তাহলে ব্যাংকে চিঠি দিয়ে হুমকি দিলেন কেন? এগুলো তো ভালো লক্ষণ নয়। আপনি জন প্রতিনিধি। জনপ্রতিনিধির কাজ মানুষের সেবা করা, হুমকি দেওয়া নয়।

কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, ছয় মাস ধরে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ায় ব্যাংকে নোটিশ দিয়েছিলাম। আদালত বলেন, তার জন্য তো আপনিই দায়ী। চার-পাঁচ মাস ধরে ক্ষমতা দখল করে আছেন। আপনি কী মেয়র যে, আপনার কথায় ব্যাংক টাকা দেবে? আপনার কারণে কর্মচারীরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর আগামী ১৬ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য রেখে মেয়র তাজকিন আহমেদকে পৌরসভার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান ও মেয়র তাজকিনের পক্ষে মো. তানভীর আহমেদ শুনানি করেন।

প্রসঙ্গত গত ৬ ফেব্রুয়ারি মেয়র তাজকিন আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে প্যানেল মেয়র-১ কাজী ফিরোজ হাসানকে আর্থিক ক্ষমতাসহ ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বরখাস্ত ও আর্থিক ক্ষমতার আদেশ ১৪ ফেব্রুয়ারি স্থগিত করে হাইকোর্ট। কিন্তু ফিরোজ হাসান আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত মেয়র দাবি করে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন বলে হাইকোর্টে অভিযোগ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *