কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স’র বিশাল সাফল্য

যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

ব্রিটেনের উচ্চ আদালতে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেড বনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মামলায় কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স বিশাল সাফল্য লাভ করেছে। হাই কোর্টের তাৎপর্যপূর্ণ এই রায় কেয়ার কোম্পানি এবং কেয়ার কর্মীদের মনে ব্যাপক স্বস্তি এনে দিয়েছে।

নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স (Lawmatic Solicitors) এর অন্যতম পার্টনার খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যরিস্টার ফখরুল ইসলাম। এই মামলায় কেয়ার হোমের পক্ষে কাউন্সেল হিসাবে নিযূক্ত ছিলেন প্রখ্যাত কাউন্সেল ব্যারিষ্টার জেন মালিক কেসি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (SSHD) পক্ষে ছিলেন সরকারি আইনজীবী কাউন্সেল ব্যরিস্টার উইলিয়াম আরউইন।

প্রায় এক বছর ধরে চলমান এই মামলার রায় অতি সম্প্রতি রয়্যাল কোর্ট জাস্টিসের কিংস বেঞ্চ ডিভিশন থেকে প্রদান করা হয়, যা ন্যাশনাল আর্কাইভেও প্রকাশিত হয়েছে। এই রায়টি এখন থেকে হাইকোর্ট-সহ সকল নিম্ন আদালাতের জন্য বাধ্যতামূলক হিসাবে গণ্য করা হবে।

মামলার রায়ে হাই কোর্টের জজ ডেভিড পিয়েভস্কি কেসি যথাযথ জবাবের সুযোগ না দিয়ে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের লাইসেন্স বাতিল করা বেআইনী ঘোষণা করেছেন। এটি সরকারের প্রকাশিত নীতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ, বৈধ প্রত্যাশার বিপরীত এবং সাধারণ আইনে পদ্ধতিগত ভাবে অন্যায্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মাননীয় আদালত নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপুরণ দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নিউ হোপ কেয়ার একটি বড় কেয়ার কোম্পানি। এটি যেসব ভালনারেবল ব্যক্তিদের যত্ন পরিষেবা প্রয়োজন, তাদের সেবাদান করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটেনে সেটেল্ড নয় এমন কর্মীদের স্পনসর করার অনুমতি দেওয়া হয় এই কোম্পানিকে।

হোম আফিসের নিয়ম অনুযায়ী লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানে অনুমোদনকারী কর্মকর্তাকে (Authorising Officer- AO) ব্রিটেনে থাকা প্রয়োজন, যিনি মন্ত্রণালয়ের (SSHD) নির্দেশনায় নিয়োজিত থাকেন। (শ্রমিক এবং অস্থায়ী কর্মী: স্পনসরদের জন্য নির্দেশিকা- সংস্করণ আগস্ট ২০২২)। নিউ হোপ কেয়ারের অনুমোদনকারী কর্মকর্তা (AO) ছিলেন কোম্পানির পরিচালক প্যাট্রিক চেজা।

২০২৩ সালের ৭ আগস্ট হোম অফিসের একটি কমপ্লায়েন্স দল স্পনসর হিসাবে উপযুক্ততা মূল্যায়ন করার লক্ষ্যে নিউ হোপ কেয়ার পরিদর্শন করেন। তখন কোম্পানির পরিচালক প্যাট্রিক চেজা ব্রিটেনে উপস্থিত ছিলেন না। এক সপ্তাহ পরে ১৪ আগস্ট নিউ হোপ কেয়ারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয় কমপ্লায়েন্স পুরণে ব্যর্থতার অভিযোগে। হোম অফিস কর্তৃক স্থগিতাদেশের চিঠিতে বিস্তারিত কারণ জানাতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়।

পরবর্তীতে হোম অফিস জানায়, অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডকে জবাব দেয়ার যথাপোযুক্ত সুযোগ প্রদান করা হবে। কিন্তু পরে যথার্থ জবাব দেয়ার সুযোগ না দিয়েই নিউ হোপ কেয়ারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

হাইকোর্টের বিচারক অযৌক্তিক কর্মকান্ড, ভুল নির্দেশনা, পদ্ধতিগত অন্যায় এবং সার্বিক মূল্যায়নের মূল বিষয়গুলি পরীক্ষা করে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের লাইসেন্স ফিরিয়ে দেবার আদেশ দেন।

এব্যাপারে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স ফার্মের পার্টনার ও প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যরিস্টার ফখরুল ইসলাম জানান এই মামলাটি কেয়ার কোম্পানি এবং কেয়ার ওয়ার্কারদের জন্য অত্যান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের আন্তরিক আইনী লড়াইয়ে নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেডের লাইসেন্স ফিরিয়ে পাবার ফলে সবাই উপকৃত হবে। আদালতের এই রায়ের ফলে শুধু এই কোম্পানিতে দুই শতাধিক কেয়ার কর্মীর ব্রিটেনে বৈধ ভাবে বসবাসের অনুমতি বহাল থাকবে। এতোজন মানুষের কল্যাণ সাধনে অবদান রাখতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন তিনি।

আইনজীবী ফখরুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হোম অফিস কর্তৃক যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ব্যতিত লাইসেন্স বাতিল করার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান-সহ বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বেশ কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যে আইনি প্রতিকার পাবার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। যারাই এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কোন না কোনো অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নিয়ে তাদের প্রতিকার চাওয়া উচিত বলে মনে করেন মি. ফখরুল ইসলাম।

অনেক কষ্ট, সাধনা ও পরিশ্রমে অর্জিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঝুকিমুক্ত রাখার জন্য প্রতিটি স্পন্সর কোম্পানি হোম অফিসের কমপ্লায়েন্স দল আসার আগেই হোম আফিসের প্রযোজ্য নীতিমালা যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য অভিজ্ঞ আইনজ্ঞের পরামর্শ নেয়া ভালো, বললেন এই আইনজীবী।

ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স’র সিনিয়র পার্টনার ও প্রিন্সিপাল সলিসিটর জনপ্রিয় আইনজীবী ব্যারিষ্টার মোঃ আসাদুজ্জামান নিউ হোপ কেয়ার লিমিটেড বনাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মামলায় তাদের ফার্মের সাফল্যে বেশ উজ্জীবিত। তিনি বললেন, আইনের সর্বোত্তম অনুশীলনের জন্য তারা কঠোর পরিশ্রম করছেন, যাতে প্রতিটি বিষয়ে গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা যায়।

কমিউনিটির মানুষের জন্য সর্বোত্তম আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে তাদের বহুমাত্রিক আইনি সেবা প্রদানের কথাও উল্লেখ করেন ব্যারিষ্টার মোঃ আসাদুজ্জামান। ল’ম্যাটিকের পার্টনার ও লিগ্যাল কনসালটেন্ট ব্যারিষ্টার ফখরুল ইসলাম, পার্টনার ও লিগ্যাল কনসালটেন্ট সাঈদ হাসান, পার্টনার ও সলিসিটর ব্যারিষ্টার সালাহ উদ্দিন (সুমন)-সহ নিজের টিমের এক ঝাঁক মেধাবী সলিসিটর ও কন্সালটেন্টদের দক্ষতাকে বিরল হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আইনী পরিষেবা প্রদানে আমাদের এখানে প্রায় ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আছেন বেশ কয়েকজন। লন্ডনে বাংলাদেশী কমিউনিটির আইনসংক্রান্ত প্রয়োজনে আমাদের আইনজীবীরা আশার আলো হিসাবে জ্বলে ওঠেন। তাদের দিকনির্দেশনা ও মামলা পরিচালনা সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ নিয়ে বিশেষায়িত কার্যক্রম পরিচালনা করছে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্স। এতে অভিবাসন (Immigration), পরিবার (Family), ইজারা এবং সম্পত্তি (Lease & Property), বাণিজ্যিক মামলা (Commercial Litigation), ফৌজদারি মামলা (Criminal Litigation), ব্যবসা এবং কর্পোরেট (Business and Corporate), উইল এবং প্রবেট (Wills & Probate), দাতব্য প্রতিষ্ঠানে আইনি সেবা (Legal Service to Charity)-সহ নানাবিধ আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়।

সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *