কার্জনে নামাজ পড়া নিয়ে বিরোধিতা প্রসঙ্গ ।। মো. আদনান আরিফ সালিম

শিক্ষা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

মো. আদনান আরিফ সালিম

কার্জনে নামাজ পড়া নিয়ে যারা বিরোধিতা করছে তারা নিঃসন্দেহে ইতর। কারণ এখানে তারা কারও রাস্তা আটকায়নি। পরিবেশও নষ্ট করছে না, মাইক বাজিয়ে ওয়াজ কিংবা ডিজে পার্টির মতো শব্দদূষণও করছে না। এমনকি কাউকে জোরে করে ধরে নিয়ে তারা কাউকে নামাজে দাঁড় করায়নি। এমনকি তারা ওখানে দাঁড়িয়ে কারও পিণ্ডিও চটকাচ্ছে না ওয়াজ মাহফিলের ব্যবসায়ীদের মতো।

শুনতে খারাপ শোনা গেলে সত্য আমি অনুশীলনকারী মুসলিম হয়েও মানুষের রাস্তা আটকে নামাজ পড়াকে সঠিক মনে করি না। পাশাপাশি রাদ্দুপুরে মানুষের ঘুমের ডিস্টার্ব করে মাইক বাজিয়ে ওয়াজ মাফফিলের নামে চিল্লাপাল্লা করাটাও চরম অপছন্দের কাজ আমার হিসেবে। ঠিক একইভাবে রাস্তা আটকে হোলি খেলা, পথ চলতি মানুষের গায়ে রং মারা এগুলোও নিছক ইতরামি। কারণ আপনার হোলি উৎসব হতে পারে কিন্ত যে লোকটার সাদা জামা আপনি রং মেরে নষ্ট করে দিচ্ছেন সেটা নতুনভাবে কেনার টাকা তার পকেটে নাও থাকতে পারে।

আজকে আপনি সেক্যুলার ভং ধরে প্রশ্ন করছেন আশেপাশে মসজিদ আছে কি নাই? শিক্ষাকেন্দ্র কার্জনে নামাজ কেনো? আরে ভাই এই প্রশ্ন পুরোপুরি ফাইজলামি। কারণ তারা যদি মনে করে মসজিদে যাবে না ওখানেই নামাজ পড়বে তাদের ঠেকানোর আপনি কে মিয়া !!! অতি শুদ্ধাচারী অনেকে বলছে উনারা লোক দেখানো ইবাদত করছে? আমি বলি করছে করুক না । আপনারা যখন লোক দেখানোর জন্য ইল্লিনের পাঞ্জাবী কিনেন? রেমন্ডের কোট-প্যান্ট কিনেন তখন সমস্যা হয় না?

যদি মনে করেন উনারা লোক দেখানোর জন্যই নামাজ পড়ছে পড়ুক না। এতে আপনার বাপের কী? দেশের সব মানুষ কী করবে সেটা নির্ধারণের ঠিকাদারি কী আপনাকে দেওয়া হয়েছে? ধরেন লোক দেখিয়ে নামাজ পড়াটা উনাদের ব্যাক্তিগত সমস্যা যাতে দ্বিতীয় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাই এটা নিয়ে কথা বলার বিন্দুমাত্র সুযোগ আপনার নাই। কারণ মানুষের ক্ষতি না করে নামাজ পড়া, হোলি খেলা, মোঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা আনন্দ শোভাযাত্রা করা সবকিছুর নাগরিক অধিকার একটি সভ্য দেশে বসবাসকারী মানুষের থাকা উচিৎ।

তবে আপনারা যখন এই অধিকার আদায়ের নামে যখন রাস্তা আটকে রংবাজি শুরু করবেন সমস্যা ওখানেই। একইভাবে কার্জনে যারা নামাজ পড়েছেন তাদের মধ্যে কার ঈমান আছে, কার নাই। ওদের কার নামাজ হয়েছে কিংবা হয় নাই এটা নিয়ে হাতাহাতি করার দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে মশাই !!! যদি আপনি ভদ্রলোক হন আপাতত চুপ থাকাই উচিৎ।

যদি সত্যিই বহুত্ববাদী সংস্কৃতি আর সমাজে বাস করতে চান তবে কার্জন হলের সামনের এই নামাজ, বটতলার কুরআন শিক্ষার আসর, বটতলার হোলি খেলা কিংবা শবে বরাত ও মিরাজের মতো সব ধরণের ধর্মীয় ও সামাজিক আচারানুষ্ঠানকে আপনার মেনে নিতেই হবে। আর ততক্ষণ অবধি এগুলো আপনি মেনে নিতে বাধ্য যতক্ষণ না তা আপনার ক্ষতি করছে।

আপনি এতোবড় প্রগতিশীল। এতো বড় সাংস্কৃতিক পাণ্ডা পারলে আপনার এলাকার ঐ গুণ্ডার বিরুদ্ধে কথা বলেন যে স্কুলগামী মেয়েদের টিজ করে। আপনি বিরাট ধার্মিক, বিরাট উন্নত চিন্তা আপনার। চারুকলার শোভাযাত্রা নিয়ে ফেসবুকে বাঘ না মেরে পারলে ঐ বদমাশকে থামান যে বালু-ইট-রড-সিমেন্ট ঢেলে রাস্তা বন্ধ করে মানুষের যাতাযাতে বাধা সৃস্টি করছে। আপনি বিরাট বড় প্রগতিবাদী আপনি তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেন যে দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে। আর ক্রগাগত মানুষের ভয়াবহ দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে।

নাগরিক সমস্যার ক্ষেত্রে আপনার কোনো বক্তব্য নাই। সস্তা ধর্মীয় আবেগ আর সাধারণ মানুষের মনস্তাত্ত্বিকতা নিয়ে যখন আপনি উল্টাপাল্টা কথা বলবেন ধরে নেওয়াই যায় আপনি ইতর। সেটা আপনি ধার্মিক হয়ে প্রগাতিশীলতার বিরুদ্ধে কথা বললেও যেমন এ ইতরামি থেকে আপনি মুক্ত নন। তেমনি আপনি প্রগতিশীলতার ভেক ধরলেও নয়। যে কোনো ধর্মীয় বিশেষত ইসলামী আয়োজন নিয়ে আপনার যখন চুটকি পুলকাবে ধরে নিতে হবে ইতর রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন আপনি। একই কথা ধর্মীয় বিধানের ব্যাপারীদের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

* মো. আদনান আরিফ সালিম ইতিহাসের লেখক এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *