এডিসি হারুন সাময়িক বরখাস্ত

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নেতাকে থানায় মারধরের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে বদলি হওয়া অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গতকাল সোমবার বিকেলে এডিসি হারুনকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, তাঁকে জনস্বার্থে সরকারি কাজ থেকে বিরত রাখা আবশ্যক।

এদিকে তিন নেতাকে মারধরের ঘটনায় মামলা করেনি ছাত্রলীগ। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, তাঁরা পুলিশের বিভাগীয় তদন্তের ওপর আস্থা রাখতে চান। ভুক্তভোগী তিন ছাত্রলীগ নেতার কেউ আজ পর্যন্ত এই ঘটনায় মামলা করেননি। ছাত্রলীগের একটি সূত্রের দাবি, আওয়ামী লীগের ওপর মহল থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়ায় তাঁরা মামলার পথে যাননি।

রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের সঙ্গে পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশিদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত শনিবার ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধর করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শাহবাগ থানায় ওসির (তদন্ত) কক্ষে এই মারধরে নেতৃত্ব দেন এডিসি হারুন।

ছাত্রলীগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল ছাত্রলীগ নেতাদের ডেকে নিয়ে বারডেমে যান। সেখানে তাঁর স্ত্রী ও এডিসি হারুন আড্ডা দিচ্ছিলেন। অবশ্য আজিজুলের স্ত্রী (যিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা) দাবি করেছেন, তিনি চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। এডিসি হারুন গিয়েছিলেন তাঁকে দেখতে।

পুলিশ সূত্র বলছে, এডিসি হারুন তাঁর ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন, আজিজুল দলবল নিয়ে গিয়ে তাঁকে প্রথম আঘাত করেন। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আজিজুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে কল করা হয়েছিল এবং খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে আহত নেতাদের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের চিকিৎসা চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ গতকাল দুপুরে চার নেতাকে নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রধান কার্যালয়ে যান। তাঁরা ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে দেখা করে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এ সময় মারধরের শিকার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ ঘটনার বর্ণনা দেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ নেতারা ডিএমপি কমিশনারকে বলেন, এ ঘটনায় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। এডিসিকে বদলি করা কোনো শাস্তি নয়। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে। ছাত্রলীগের সঙ্গে বৈঠক শেষে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদনে এডিসি হারুনসহ অন্যদের যতটুকু দায়ী করা হবে, তার ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনাটি তদন্তের জন্য গত রোববারই ডিএমপি তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ডিএমপি প্রধান কার্যালয়ের উপকমিশনার (অপারেশনস) আবু ইউসুফকে প্রধান করে গঠিত কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন রমনা বিভাগের এডিসি শাহেন শাহ্ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি রফিকুল ইসলাম।

কমিটিকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দায়িত্ব পেয়ে কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা শাহবাগ থানায় ওসির (তদন্ত) কক্ষে মারধর করার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে ছাত্রলীগের নেতাদের মারধরের বিষয়টিকে বাস্তব মনে করছেন না তাঁরা। কারণ, কক্ষের আয়তন ছোট।

সূত্রটি বলছে, মারধরে জড়িত হিসেবে যাঁদের নাম এসেছে, কমিটি ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়া শুরু করেছে। এদিকে আজ এডিসি হারুনের জায়গায় ডিএমপির রমনা বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ডিবির মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও অঞ্চলের এডিসি শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলামকে।

ছাত্রলীগ নেতাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত এবং দায়ী এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা জানাতে বলেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদের সই করা এক আদেশে বলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন আচরণ আইন ও নীতিবিরুদ্ধ। কমিশন মনে করে, তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন।

পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা বলছেন, থানায় নিয়ে নির্যাতন ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের নির্যাতন ঠেকাতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন রয়েছে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বিচার চেয়ে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *