আপনার পরিস্থিতিকে দোষ দিবেন না : মুফতি মেনক

সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ : মাসুম খলিলী

এক. আপনি যেখানে আছেন সেই পরিস্থিতির উপর সবসময় দোষারোপ করবেন না। সর্বশক্তিমান আমাদের প্রত্যেককে অনেক ধরনের আশীর্বাদ করেছেন, সেই কৃপাগুলোকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করা নির্ভর করে আমাদের উপর। যারা জীবনে এটি করেন তারা দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াবার পরিবর্তে তারা পরিস্থিতি তৈরি করেন।

দুই. নম্র থাকুন। আপনি ভাবতে পারেন, এর সবকিছুই জানেন আপনি। অন্যের কাছ থেকে শিখার কিছু নেই এমনটি আপনি কখনো ভাববেন না। আপনি পছন্দ করেন না এমন অনেকের কাছ থেকেও শেখার কিছু পাঠ রয়েছে।

তিন. সর্বশক্তিমান আমাদের যে কাজের আদেশ করেছেন তাকে কখনোই টুকিটাকি কাজ হিসেবে দেখবেন না। এর পরিবর্তে, এটি করতে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করুন। সত্যিকার মুমিনের মনোভাব এমনই।

চার. আপনার অনুতাপকে গুরুত্ব সহকারে নিন। যিনি সত্যিকারের অনুতপ্ত তিনি অতীতের যে পাপের জন্য অনুতপ্ত এর মধ্যে তার আবার পড়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। খারাপ সঙ্গ এবং যারা তাকে আবার পাপ করতে উত্সাহিত করতে পারে তাদের কাছ থেকে দূরে থাকাটা তার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

পূনশ্চ:

এক. মানুষকে তুষ্ট করার চেষ্টায় সময় নষ্ট করবেন না। এটা কখনোই অর্জনযোগ্য নয়। মনে রাখবেন, যারা আমাদের ঘৃণা করে তাদের সামনে আমরা সবসময় খারাপ হিসাবে থাকি। সর্বশক্তিমানকে খুশি করার দিকে মনোনিবেশ করুন।

দুই. সর্বশক্তিমান যখন কোন কিছু অবরুদ্ধ করেন, তখন তা হতে দিন। আপনি যদি আপনার করনীয় যা তা করে থাকেন এবং এরপরও কিছুই ঘটছে না দেখেন, তবে সময়ের সাথে সামনে এগিয়ে যান।

তিন. আপনাকে বার বার পরীক্ষা করা হবে। যখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, তখন সমস্যার দিকেই শুধু মনোনিবেশ করবেন না। তাঁর প্রতিশ্রুতির কথাও মনে রাখবেন; কষ্টের মধ্য দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য আসে। যদি আপনি সমস্যার দিকেই শুধু মনোনিবেশ করেন তখন আপনি ভয়াভিভুত হবেন এবং আপনি সম্ভবত এটি থেকে উত্তরণ করতে পারবেন না বলে মনে করবেন। সুতরাং নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন বিশ্বজগতের পালনকর্তা কী করতে পারেন!

চার. আমরা কাঁদি, তিনি শুনেন। আমরা আহত হই, তিনি নিরাময় করেন। আমরা ডাকি, তিনি জবাব দেন। আমরা অনুতাপ করি, তিনি ক্ষমা করেন। সবকিছুর জন্য, সব সময় সর্বশক্তিমানের কাছেই চান, প্রার্থনা করুন।

পাঁচ. আপনি জিনিসগুলো পরিবর্তন করতে চান? তবে আপনার মানসিকতার পরিবর্তন করুন। আপনার অন্তর গ্রহণ না করা পর্যন্ত বেশিরভাগ জিনিস কখনই বদলাবে না! ইতিবাচকতাকে আলিঙ্গন করুন। শয়তান বা অন্য কাউকে আপনার মনের সাথে গোলমাল করতে দেবেন না। আপনার লক্ষ্যের প্রতি মনোনিবেশ করুন এবং এ জন্য কাজ করুন। সর্বশক্তিমান কখনই বলেননি যে এটি সহজ হবে তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে এটি তার জন্য মূল্যবাহী হবে!

ছয়. আপনার সমস্যা সম্পর্কে সবার কাছে অভিযোগ করাকে অভ্যাসে পরিণত করবেন না। লোভ এবং অসন্তুষ্টি থেকে হৃদয়কে পরিষ্কার না করা পর্যন্ত আপনি সেরা ডিজাইনারের পোশাক পরলেও সেই পোশাকের কোনো দাম নেই ।

সাত. আত্মতুষ্টতা থেকে সাবধান থাকুন। কখনো মনে করবেন না, যিনি বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য সংগ্রাম করছেন তার চেয়ে আপনি আধ্যাত্মিকভাবে আরো ভালো আছেন। সর্বশক্তিমান, আমাদের অবিচল রাখুন।

দ্রষ্টব্য:

যুলকারনাইন, ইয়া’জূজ-মা’জূজ ও শিংগায় ফুৎকার: তারপর সে (যুলকারনাইন) আরেক মাধ্যম অবলম্বন করল। চলতে চলতে সে যখন দুই পর্বত-প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থলে পৌঁছল, তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে পেল, যারা তার কথা প্রায় বুঝতেই পারছিল না। তারা বলল, ‘হে যুলকারনাইন! ইয়া’জূজ ও মা’জূজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে; আমরা কি আপনাকে কর দেব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মাঝে এক প্রাচীর গড়ে দেবেন?’ সে বলল, ‘আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উৎকৃষ্ট; সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে এক সুদৃঢ় প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমার নিকট লৌহপিন্ডসমূহ আনয়ন কর।’ অতঃপর মধ্যবর্তী শূন্যস্থান পূর্ণ হয়ে যখন লৌহস্তূপ দুই পর্বতের সমান হল, তখন সে বলল, ‘তোমরা হাপরে দম দিতে থাকো।’ পরিশেষে যখন ওটা অগ্নিবৎ উত্তপ্ত করল, তখন সে বলল, ‘তোমরা গলিত তামা আনয়ন কর, আমি ওটা ওর উপর ঢেলে দিই।’ এরপর ইয়া’জূজ ও মা’জূজ তা অতিক্রম এবং ছেদ করতে পারল না। সে (যুলকারনাইন) বলল, ‘এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ; অতঃপর যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি এসে পড়বে তখন তিনি ওটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন। আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য।’ সেই দিন আমি তাদেরকে এক দল অপর দলের উপর তরঙ্গায়িত অবস্থায় ছেড়ে দেব। আর শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে; অতঃপর আমি তাদের সবাইকেই একত্রিত করব। সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট। যাদের চক্ষু ছিল আমার স্মরণ (কুরআন) এর ব্যাপারে অন্ধ এবং যারা শুনতেও ছিল অপারগ। যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে তারা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার দাসদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? আমি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের অভ্যর্থনার জন্য প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নাম। (সূরা আল কাহাফ: ৯২.-১০২)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *