আদর্শ সমাজ গঠনে মুফাসসিরদের ভূমিকা অপরিসীম : ডা. শফিকুর রহমান

ধর্ম ও দর্শন বাংলাদেশ সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

বাংলাদেশ মাজলিসুল মুফাসসিরীনের উদ্যোগে ১৪ অক্টোবর সোমবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় দেশবরেণ্য মুফাসসিরদের সমন্বয়ে জাতীয় মুফাসসির সম্মেলন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান  বলেন, আদর্শ সমাজ গঠনে মুফাসসিরদের ভূমিকা অপরিসীম। কেননা তারা জাতির রাহবার। মুফাসসিররা হলেন পথহারা জাতির পথ প্রদর্শক। সঠিক পথের সন্ধান দেয়া জাতির প্রতি মুফাসসিরদের কোনো দয়া নয় বরং এটা তাদের দায়িত্ব। আপনারা জাতির রাহবার। অতীতে যারা এই দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন আমরা তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। তারা কারো চোখ রাঙ্গানিকে পরোয়া করেননি বরং প্রয়োজনে আল্লাহর রাস্তায় জীবনকে কুরবানি করে দিয়েছেন। দ্বীন প্রচারের কাজে বাঁধা আসবেই। সে বাঁধাকে মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

আমীরে জামায়াত বলেন, তাফসির মাহফিল থেকে জনগণ যে রূহানী খোরাক চায় সে বিষয়ে যারা তাফসির পেশ করেন তারা সচেতন আছেন। আপনাদের আরো একটু বেশি সচেতন হওয়ার আহবান জানাই। যদি আপনাদের বয়ানটা কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবীদের জীবনের আলোকে হয় তাহলে মানুষ এর থেকে শিক্ষা নিয়ে বাস্তব জীবনে আমল করতে পারবেন। তাছাড়া মুফাসসিরদের একেকটা বক্তব্য জাতির একেকটা মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। যুগেযুগে এর প্রমাণ রয়েছে।

কুরআনের পাখি শহীদ আল্লামা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদির স্মরণে ডা. শফিকুর রহমান  বলেন, আজ তাঁকে আমার বড়ই মনে পড়ছে। কুরআনের তাফসির নামক ফুলের বাগানটা তিনিই সাজিয়ে গিয়েছেন। আজ তিনি থাকলে মনভরে দেখতে পারতেন। কারাগারে তাঁর সাথে আমার দুইবার মোলাকাত হয়েছে। তাঁর ইচ্ছা ছিলো কুরআনের ময়দানে তিনি আবার ফিরে আসবেন ও পবিত্র কাবা যিয়ারত করবেন। কিন্তু তিনি তাঁর সবকিছু আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। আপনাদেরকে তাঁর রেখে যাওয়া কাজকে আঞ্জাম দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আল্লামা হযরত মাওলানা লুতফর রহমানসহ সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে দ্বীন প্রচারের জন্য যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, কারা নির্যাতিত হয়েছেন, মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, আমি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম প্রতিদান কামনা করছি।

সংঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক নুরুল আমীনের পরিচালনায় বিশেষ মেহমান হিসেবে বক্তব্য রাখেন উলামা বিভাগের কেন্দ্রীয় সভাপতি কারা নির্যাতিত জননেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রধান উপদেষ্টা নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মাদ সেলিম উদ্দিন, ছাত্র সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম খান মিলন, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আ.ন.ম. রফিকুর রহমান, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসারা অধ্যক্ষ আবু ইউছুফ, মাওলানা ড. সামিউল হক ফারুকী, মাওলানা আবদুস সামাদ, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. খলিলুর রহমান মাদানী, অধ্যক্ষ মাওলানা শাহজাহান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উলামা বিভাগের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের উলামা বিভাগের সভাপতি ড. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আ.ন.ম রশিদ আহমদ আল মাদানী, মদিনাতুল উলূম কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার, ছারছিনার পীর শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, আলহাজ্জ শামীম সাঈদী, মুফাসসিরে কোরআন মুফতি আমির হামজা ও আইম্মা উলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি রেজাউল করিম আবরার প্রমুখ।

বিশেষ অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুগে যুগে আলেমদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। গত ৫ই আগষ্ট বিজয়েও আলেমদের ত্যাগ-কোরবানী ছিলো নজিরবিহীন। অনেক ইমাম-খতিব জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, সারাজীবনের জন্য চোখ হারিয়েছেন যা ইতিহাস হয়ে থাকবে। আগামীর বাংলাদেশ গড়তে এই মুফাসসিরদের সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। দ্বীনের একনিষ্ঠ খাদেম হিসেবে পরকাল ভিত্তিক জীবন পরিচালনা করতে হবে।

আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-আমীন, মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, মাওলানা মুস্তাক ফয়েজি, মাওলানা লুৎফর রহমান, মাওলানা ফখরুদ্দিন আহমেদ, আব্দুল মোমেন নাসেরী, মাওলানা নাসির উদ্দিন হেলালী, মাওলানা রুহুল আমীন, মুহাদ্দিস মাহমুদুল হাসান, মুহাদ্দিস আবু নছর আশরাফী, মাওলানা মাহমুদুর রহমান দেলওয়ার, মাওলানা সাদিকুর রহমান আজহারী ও মাওলানা মুস্তাফিজ রহমানীসহ অন্যন্য নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলনে দেশবরেণ্য শিল্পীদের মধ্যে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মশিউর রহমান, মাজলিসুল মুফাসসিরীন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আজহারী, শিল্পী রোকোনুজ্জামান, শিল্পী কবির বিন সামাদ, শিল্পী নেয়ামতুল্লাহ নিজামী। এছাড়াও সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আগত তিন হাজারের অধিক মুফাসসিরে কুরআন অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *