আজিজুল হক মানিক ছিলেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

সাম্প্রতিক সিলেট
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, মদন মোহন কলেজের সাবেক জিএস, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে দুইবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর, সাংবাদিক ও রাজনীতিক আজিজুল হক মানিক (৬২) চলে গেছেন মহান মাবুদের দরবারে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন ২০২৩) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রা-জিউ’ন।

অসহায় মানুষদের কল্যাণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আজিজুল হক মানিক ছিলেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। কাউকে সামান্য অর্থদিয়ে নয়, স্থায়ীভাবে তার সমস্যার সমাধানে ছিলেন সচেষ্ট। মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাগবে কাজ করেছেন দিবানিশি। নিজের প্রতি যত্নের ব্যাপারে থোড়াই কেয়ার করেছেন।

প্রখর মেধাবী ও সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব আজিজুল হক মানিক দৈনিক জালালাবাদে যুক্ত ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা এক সাথে জালালাবাদে ছিলাম। সেই সাথে আমি জাতীয় দৈনিকে কাজ করতাম। আশি ও নব্বই দশকে সিলেটের সাংবাদিকতায় তরুণদের ব্যাপক উৎসাহ ছিল। চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকেই আমরা বেছে নিয়েছিলাম। অনেক মেধাবী সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন। মানিক ভাই ছিলেন তাদের অন্যতম। সাংবাদিকতার বৃত্ত ও পরিধি বুঝতেন। অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা ও নাগরিক সাংবাদিকতা নিয়ে ভাবতেন। সহকর্মীদের অনুপ্রাণিত করতেন। নতুন প্রজন্মের উচ্চ শিক্ষিত সাংবাদিক তৈরির ব্যাপারে প্রত্যয়ী ছিলেন।

ছাত্র রাজনীতিতে বাগ্মিতা ও দুর্দান্ত সাহসের জন্য আজিজুল হক মানিক তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। ১৯৮২ সালে মদন মোহন কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিএস নির্বাচিত হন। সেখান থেকেই তারুণ্যের স্পর্ধিত আকাঙ্খা নিয়ে সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে তার পথচলা শুরু। ২০০৩ ও ২০০৮ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ১নং দরগা মহল্লা ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি জানতেন, সময়ের সঙ্গে কিভাবে নিজেকে তৈরি করতে হয়। তারুণ্যের স্বপ্নের কথা বলতেন সবসময়। বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতার টিকে থাকার জন্য এলাকার তরুণদের মেধার বিকাশ সাধনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন তারুণ্যের স্বপ্নগাঁথায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

সাধারণ মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেছিলেন আজিজুল হক মানিক। সততাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে নৈতিকতার শিক্ষা, আদর্শের চর্চা আর দেশপ্রেমে মানুষকে জেগে ওঠার আহবান জানাতেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে বাস্তবমুখী মতামত ব্যক্ত করতেন। প্রতিটি গণ আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিলেন। ২০১৪-১৫ সেশনে সিলেট প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হিসেবেও সরব ভূমিকা পালন করেছেন।

রাষ্ট্র সম্পর্কীয় বিজ্ঞান যেন আজিজুল হক মানিকের নখদর্পনে ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ছিলেন। তুলনামূলক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা শুরু করলে তিনি ঝলসে ওঠতেন। কেবল বাক্‌পটু নয়, সুবক্তা ছিলেন। সভা-সমাবেশে রাজনীতি, সাংবাদিকতা এমনকি সাহিত্য আলোচনায়ও মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। এক সময় শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে তার অপার জনপ্রিয়তা এখনো মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।

ক্রিয়েটিভ আড্ডায় বিশ্বাসী ছিলেন আজিজুল হক মানিক। নৈমিত্তিক মজলিসে সতীর্থ ও অনুজদের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন তিনি। যাকে বলে আড্ডার মধ্যমনি। ছাত্র জীবনে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় কৃত্বিত্ব দেখিয়েছেন। সাধারণ আড্ডায় ধারালো কথোপকথন থেকে আমরা সেটা টের পেতাম। অসম্ভব স্মরণ শক্তি ছিল। দুনিয়ার নানা রকম ঘটনাবলির খবর রাখতেন। ব্যাপকভাবে বই ও ম্যাগাজিন পড়তেন।

রম্য লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীকে ম্যাজিক আলী ডাকতেন। তার ‘দেশে বিদেশে’ যেন মুখস্ত ছিল। একইভাবে ‘চতুরঙ্গ’, ‘পঞ্চতন্ত্র’ ‘চাচাকাহিনী’, ‘ভবঘুরে ও অন্যান্য’ অবলিলিায় বলে যেতেন। লেখকের গভীর অনুভূতি, পাণ্ডিত্য ও তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের প্রশংসা করতেন।

মুজতবা আলীর গল্প থেকে কায়রোর টংঘরের এক কোণায় বসে চা খেয়ে খেয়ে আড্ডাবাজ মিসরীয়দের জটলার দিকে তাকিয়ে থাকার দৃশ্য বলতেন। তখনই আমরা কোথাও চায়ের দোকানে ঢুকে যেতাম। শুরু হতো নানা রসবোধের গল্প। মজলিস জমাতে আজিজুল হক মানিকের জুড়ি ছিল না।

নব্বই দশকটা আমাদের জন্য ছিল দারুণ একটি সময়। সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন। কবি আফজাল চৌধুরী চেয়ারম্যান ও আমি (সাঈদ চৌধুরী) সেক্রেটারি জেনারেল থাকাকালে সংলাপ ফ্রন্ট অনিকেত বৃত্তির বিপক্ষে এক নবতর ধারার সৃষ্টি করে। বিশ্বাসের স্বপক্ষে সংলাপের নিয়মিত সাপ্তাহিক কর্মশালা রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়। কবি আফজাল চৌধুরীর প্রজ্ঞা দীপ্ত আলোচনার পাশাপাশি সাংবাদিক ও গবেষক আব্দুল হামিদ মানিক অথবা লেখক ও সংগঠক আজিজুল হক মানিক হাজির হলে জমজমাট হয়ে যেত সাহিত্য আসর।

বাংলা ভাষায় কালজয়ী কবিতার স্রষ্টা আল মাহমুদকে নিয়ে প্রায় প্রতি বছর অনুষ্ঠান করেছি। সাক্ষাৎকার নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশ করেছি। অনেকগুলো অনুষ্ঠান আয়োজনে আজিজুল হক মানিক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস কামাল চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সচিব ও ভাষা আন্দোলনের অমর সংগঠক, ‘জিব্রাইলের ডানা’ খ্যাত অধ্যাপক শাহেদ আলী, সিলেটী নাগরী লিপি গবেষক ড. গোলাম কাদের, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত কবি এ এইচ মোফাজ্জল করিম সহ গুণীজনদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছি।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মমত বার্ষিকী উৎসব করেছি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি নজরুল সম্মেলন করেছি। আরো অসংখ্য সেমিনার ও সাহিত্য সম্মেলন এক সাথে করেছি আমরা।

১৯৯৯ সালের ২২ জুন শীর্ষস্থানীয় ইরাক বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি ও বিশ্ব মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান সাদাল্লা এ হোসাইন, মৈত্রী সমিতির নেতা জালাল এম আব্দুল্লাহ, ঢাকাস্থ ইরাকী চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স নাহিদ আলী সুলতান, বাংলাদেশ জমিয়তুল মুদাররিসিনের সভাপতি ও সাবেক ধর্ম ও ত্রাণ মন্ত্রী মাওলানা আব্দুল মান্নান, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, নির্বাহী সম্পাদক কবি রুহুল আমীন খান, মাসিক পরওয়ানা সম্পাদক হুসসাম উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখকে নিয়ে আমরা আল-মক্কা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠান করেছি।

খ্যাতিমান লেখক, সম্পাদক ও কবি সানাউল্লাহ নূরীকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। ১৯৮৮ সালে তিনি ‘বাংলাদেশ কাউন্সিল অব এডিটরস’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৪ দৈনিক জনতার সম্পাদক এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত দৈনিক দিনকালের সম্পাদক ছিলেন।

গ্র্রন্থাগার আন্দোলনের পথিকৃত কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের (কেমুসাস) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সম্পাদক এবং মাসিক আল ইসলাহ‘র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, ভাষা সৈনিক মরহুম মুহম্মদ নুরুল হকের বড় পুত্র আজিজুল হক মানিক। সংসদের সাথে তিনিও আজীবন নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৫-১৬ সেশনে অত্যন্ত সফলতার সাথে কেমুসাসেরও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইরানের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ বায়াতকে নিয়ে মুসলিম সাহিত্য সংসদে আমরা অনুষ্ঠান করেছি। বিশিষ্ট লোকবিজ্ঞানী ড. আশরাফ সিদ্দিকীও সাথে ছিলেন। একান্ত আলাপচারিতায় কত কিছু পর্যালোচনা হয়েছে। মানিক ভাইয়ের বিষয় ভাবনা খুব পছন্দ করে আশরাফ সিদ্দিকী বলতেন, বাপ কা বেটা।

একসময় ‘বিলেতে বাংলা চর্চা ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন’ শীরোনামে আমার একটি লেখা পড়ে ভীষণ খুশি হন আশরাফ সিদ্দিকী। এরপর লন্ডন নিয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেছিলেন। আমি চেয়েছিলাম ‘তৃতীয় বাংলা’ খ্যাত লন্ডনে তাকে নিয়ে আসব। কথাও হয়েছিল আসবেন। তার জনপ্রিয় ভ্রমণ কাহিনী ‘প্যারিস সুন্দরী’র মত লন্ডন নিয়ে আরেকটা বই লিখতে চেয়েছিলেন। একই সময়ে আজিজুল হক মানিকও আসার কথা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি কোভিড ১৯-এর কারণে সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। এরই মাঝে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গতকাল মানিক ভাইও চলে গেলেন তার স্থায়ী ঠিকানায়।

সাহিত্য সংসদ এবং প্রেসক্লাব ছাড়াও প্রথমে মজুমদার বাড়ি ও পরে চৌকিদেখী (রঙধনু ১২) ছিল আমাদের নিয়মিত আড্ডার স্থান। একসময় দরগা মহল্লা্য় (পায়রা ৭) ছিল আরেক ঠিকানা। পাশেই (পায়রা ৫৪) মানিক ভাইয়ের বাসা। আমরা প্রায় প্রতিদিন মিলিত হতাম। খুবই আনন্দঘন সময় কাটিয়েছি।

কেমুসাসের সিনিয়র সহ-সভাপতি দরগা মহল্লার (পায়রা ৭৪/২) এডভোকেট আজিজুল মালিক চৌধুরী ছিলেন আমাদের খুবই আপনজন। ১৯৯০ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিলেটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৭-৯৮ সালে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। আমরা (আজিজুল মালিক চৌধুরী, আজিজুল হক মানিক ও সাঈদ চৌধুরী) প্রায় প্রতি সপ্তাহে কিছু সময় একত্রে বসে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতান।

চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার আব্দুর রহিম চৌধুরীর দরগা মহল্লার বাসা ছিল আমাদের আরেক বৈঠকখানা। লন্ডনের মুরফিও আই হসপিটাল থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া ডাক্তার রহিম এক সময় সাউদী আরবে হুফুফ আল জুবাইলের কিং ফয়সল হসপিটালে কর্মরত ছিলেন। তখন ‘আরবের ডাইরি’ নামে গ্রন্থ রচনা করেছেন। ৮৪ সাল থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজে প্রিন্সিপাল ছিলেন। চক্ষু বিজ্ঞান নিয়ে লেখা তার বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। খুবই জ্ঞানী ও মননশীল মানুষ। মাঝে মধ্যে লোক পাঠিয়ে আমাকে যেতে অনুরোধ করতেন। অনেক সময় আমি ও মানিক ভাই একসাথে গিয়েছি।

১৯৯৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর মানিক ভাইয়ের বিয়েতে স্বারক বের হল। নাম ছিল ‘নারিঙ্গি বনে কাপছে সবুজ পাতা’। লেখা দিলাম। বিয়ে উপলক্ষে এমনকি বিয়ের আসরে অনেক রসালু গল্প হল। ভাবলে এখন স্মৃতি কাতর হয়ে পড়ি।

এই পরিবারের সাথে আমি ছোটবেলা থেকেই ঘনিষ্ট। ভাষা সৈনিক মুহম্মদ নুরুল হক আমাদের এলাকায় বিয়ে করেছেন। সুলেখক নুরুন্নেছা হক অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ পরিবারের সন্তান। আমি তাদের অনেক স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছি।

দেশে থাকাকালে মুহম্মদ নুরুল হকের স্মরণ সভা আয়োজন করেছি। তার ১ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেছি। লন্ডনে সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের মাধ্যমে প্রায় প্রতি বছর আলোচানা অনুষ্ঠান করে থাকি। ১৯৮৯ সালে ৩৩২ পৃষ্ঠার সাহিত্য সংকলন ‘দুর্বার’-এ নুরুল হক সম্পর্কে সিলেটের সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিক সহ বহু গুণীজনের মতামত সম্বলিত বিশেষ প্রতিবেদন করেছি। আজিজুল হক মানিক ছাপার আগে প্রতিটি অভিমত পড়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
https://www.facebook.com/sayed.chowdhury.77/posts/10207435474921296

ছোট্ট এই জীবনে একজন মানুষ কতোটা মুগ্ধতা ছড়াতে পারেন, আজিজুল হক মানিক ছিলেন তার উদাহরণ। জীবনটা ছিল অবিস্মরণীয় কীর্তিতে ভরা। তার ছোট ভাই, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর প্রধান বার্তা সম্পাদক এনামুল হক জুবের মিডিয়াকে জানিয়েছেন, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সপ্তাহখানেক আগে আজিজুল হক মানিককে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। রাত পৌনে ২টায় তার লাশ দরগা মহল্লাস্থ বাসায় নেয়া হয়।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে, ভাই-বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। তার বড় ছেলে নৌবাহিনীতে কর্মরত। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে কক্সবাজার থেকে সিলেট ফিরেছেন। শুক্রবার বাদ জুমআ মরহুমের নামাজে জানাজা হযরত শাহজালাল (র.) মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন দরগাহ মাসজিদের ইমাম ও খতিব হাফিজ মাওলানা আসজাদ আহমদ। বিপুল সংখ্যক শোকাতুর মানুষ জানাজা ও মোনাজাতে অংশ গ্রহন করেছেন। তারপর মাজার সংলগ্ন পিতা-মাতার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন শিক্ষক, সাংবাদিক ও রাজনীতিক আজিজুল হক মানিক।

বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই সিলেটে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা সাহিত্য-সাংবাদিকতার উজ্জ্বল এই তারকার প্রতি। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন।

সিলেট প্রেসক্লাবে দোয়া মাহফিল

সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি আজিজুল হক মানিকের রুহের মাগফিরাত কামনায় রোববার ক্লাব ভবনে এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মোনাজাত পরিচালনা করেন নগরীর সুবিদবাজারস্থ বায়তুল মাকছুদ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফিজ মাওলানা সাদিকুর রহমান।

ক্লাব সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ মো. রেনুর পরিচালনায় দোয়া মাহফিল পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, সিনিয়র সদস্য আব্দুল মালিক জাকা, সাবেক কোষাধ্যক্ষ খালেদ আহমদ ও কবীর আহমদ সোহেল, সাবেক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক আহবাব মোস্তফা খান।

মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সহসভাপতি এম এ হানান, সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ও আতাউর রহমান আতা, পাঠাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক কবির আহমদ, নির্বাহী সদস্য আশকার ইবনে আমিন লস্কর রাব্বী ও আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ইয়াহইয়া ফজল, সাবেক পাঠাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক খালেদ আহমদ, সাবেক নির্বাহী সদস্য মো. মুহিবুর রহমান ও দিগেন সিংহ, সদস্য চৌধুরী দেলওয়ার হোসেন জিলন, মো. আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, মো. দুলাল হোসেন, এম রহমান ফারুক, এটিএম তুরাব, আবুল কালাম কাওছার, আব্দুল আউয়াল চৌধুরী শিপার, শাহ শরিফ উদ্দিন প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, আজিজুল হক মানিক একজন সফল জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি গুণী সাংবাদিক হিসেবে সর্বমহলে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী, সততা, দায়িত্বশীলতা এবং কাজের প্রতি ছিল একাগ্রতা। তিনি ছিলেন প্রখর মেধাবী কর্মচঞ্চল একজন মানুষ। তার মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *