আগামী বছর থেকে বাস্তবায়ন হবে নতুন শিক্ষাক্রম

শিক্ষা সময় চিন্তা সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা এবং শ্রেণিকক্ষেই পাঠদান সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রেখে প্রধানমন্ত্রী এর খসড়া মৌখিকভাবে অনুমোদন দিলেও এ নতুন কারিকুলাম চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)। ৩০ মে, সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এ সভায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম আধুনিক করা হচ্ছে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চলমান শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি সংশোধন, আন্তর্জাতিক মান ও সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে এ পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণির সারাদেশে ৬১টি স্কুল, কারিগরি ও মাদরাসায় পাইলটিং শুরু করা হয়েছে। সেসব বিষয়ে বিদ্যালয়ে পাইলটিং ক্লাস ভালোভাবে চলছে বলে তুলে ধরা হয়। নতুন কারিকুলাম বিষয়ে কোনো পরিমার্জন বা পরিবর্তন প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানতে চাইলে কয়েকটি শব্দগত পরিবর্তন ছাড়া আর কোনো প্রস্তাব আসেনি। সে কারণে নতুন কারিকুলামের খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ অনুমোদন সংক্রান্ত শিক্ষাক্রম বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটিও এনসিসিসির সদস্যরা।

এটি বাস্তবায়নের ফলে, মাধ্যমিক পর্যন্ত থাকছে না বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ-বিভাজন। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সবাইকে পড়তে হবে ১০টি বিষয়। দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপরই অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ) পছন্দ করতে হবে। একাদশ শ্রেণি শেষে পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণি শেষে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ দুই পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে তৈরি হবে এইচএসসির ফল।এ ছাড়া প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বই। তবে সব শ্রেণিতেই শিখনকালীন মূল্যায়নেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা থাকছে না। চলতি বছর মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিং শুরু হয়েছে। আগস্টে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণির পাইলটিং শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।

২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে। এ শিক্ষাক্রম অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

নতুন কারিকুলামের বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, নতুন কারিকুলামের খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নে আর কোন বাঁধা নেই। আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে মাধ্যমিকের পাইলটিং ক্লাস চলছে। সেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও কয়েকটি বিদ্যালয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকদের অনুরোধ করে সেসব বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন। সবাই ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামের ভাষাগত কয়েকটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সবাই সেটি অনুমোদন দেওয়ায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। সে কারণে আজকের (৩০ মে, সোমবার) সভা আয়োজন করা হয় বলেও জানান তিনি।

সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

এক নজরে দেখে নিন নতুন কারিকুলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো:

– ২০২৩ সাল থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে (শুক্র ও শনিবার) দু’দিন ছুটি থাকবে।
– জেএসসি ওপিইসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ, দশম শ্রেণির আগে কোনো কেন্দ্রীয় বা পাবলিক পরীক্ষা নেই।
– তৃতীয় পর্যন্তও কোনো পরীক্ষা থাকবে না।
– চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০ আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
– বিজ্ঞান, মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ বলতে মাধ্যমিকে কোনো বিভাগ-বিভাজন থাকবে না। বিভাগ চালু হবে এইচএসসিতে।
– দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপরই বোর্ড পরীক্ষায় এসএসসির ফল হবে।
– প্রাক্-প্রাথমিকের শিশুদের জন্য আলাদা বই থাকবে না, শিক্ষকেরাই শেখাবেন।
– প্রাথমিকে পড়তে হবে আটটি বই।
– নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ ধরনের শেখার ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছে। এগুলো হলো ভাষা ও যোগাযোগ, গণিত ও যুক্তি, জীবন ও জীবিকা, সমাজ ও বিশ্ব নাগরিকত্ব, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

আরও পড়ুন
দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স; প্রয়োজন সতর্কতা
দেহকে সুস্থ রাখবে অ্যালোভেরা
বসন্তের বাতাসে অ্যালার্জির প্রবণতা, একটু গাফিলতি হলেই মারাত্মক বিপদ
রাসূল সা: প্রবর্তিত খাদ্যবিজ্ঞান । ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
তরমুজের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
যে খাবারে শিশুর উচ্চতা বাড়ে
ইন্ডাস্ট্রির সকলের স্বার্থে কপিরাইটের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিঃ ফাহিম ফয়সাল
অতিরিক্ত আবেগ মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’র নির্মাতার মেয়ে বিন্দি
ওজন কমাতে সাহায্য করে যে সকল খাবার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *