প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি রাজধানীর একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। নেই প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন। এরপরও বছরের পর বছর দিব্যি চলছে প্রতিষ্ঠানটি। মূল কাজ ভুয়া সনদ বিক্রি করা। এমবিবিএস, বিডিএস, প্রকৌশল, এমফিল, পিএইচডি—সব ধরনের ভুয়া সনদ পাওয়া যায় এখানে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেড় হাজারের বেশি ভুয়া সনদ বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। একেকটি সনদ বিক্রি বাবদ নেওয়া হয়েছে ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ভুয়া সনদ বিক্রির সংঘবদ্ধ একটি চক্র।
এই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) জানায়, গত বুধবার রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য নুরুল হক সরকার ওরফে শেখ গনি সরকার (৭২), তাঁর সহযোগী মোয়াজ্জেম হোসেন (৫৮) এবং ভুয়া চিকিৎসক সাইদুর রহমান ওরফে নজরুল (৩০), মাহফুজুর রহমান ওরফে মাহফুজ (৩৭), আমান উল্লাহ (৩৮) ও দেবাশীষ কুণ্ড (৫২)। এই চার ‘চিকিৎসক’ প্রতিষ্ঠানটি থেকে এমবিবিএসের ভুয়া সনদ নিয়ে চিকিৎসা পেশায় যুক্ত ছিলেন।
এ সময় তাঁদের কাছে অসংখ্য ভুয়া চিকিৎসা সনদ, প্রশংসাপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট, নিবন্ধন কার্ড, প্রবেশপত্র ও নকল সিল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের চারটি চেক, লিফলেট, প্রেসক্রিপশন, অসংখ্য ভিজিটিং কার্ড, একটি সিপিইউ ও একটি প্রিন্টার জব্দ করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
হাফিজ আক্তার বলেন, আটক চার ভুয়া চিকিৎসক মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও কামিল পাস করে নুরুল হক সরকারের কাছ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রির সনদ কিনে নেন। পরে বিভিন্ন জায়গায় সুসজ্জিত চেম্বার খুলে এসব চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখতেন। নুরুল হক তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির নামে ভুয়া সনদ বিক্রির ব্যবসা করে আসছিলেন। প্রতারণার কাজে তাঁরা ভুয়া ওয়েবসাইট, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতেন। এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। কেননা, চক্রের সদস্যরা একেকটি সনদ ৫ থেকে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতেন।
অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবু আশরাফ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল হক একবার নিজেকে এমবিবিএস চিকিৎসক বলে দাবি করেন। পরক্ষণেই বলেন, তিনি পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) পাস করেছেন। তবে মনে হচ্ছে, তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তিনি তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভুয়া সনদের ব্যবসা করতেন।
নুরুল হকসহ আটক ছয়জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে রমনা থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তাঁদের দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আবু আশরাফ সিদ্দিকী জানান, ভুয়া সনদের ব্যবসায় যুক্ত নুরুল হকের সন্তানেরা পালিয়ে গেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।